বেগুনের ব্যাকটেরিয়ায় ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

450

বেগুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান সবজি ও অর্থকরী ফসল। আলুর পরেই এর স্থান। দেশের সর্বত্রই এর চাষ হয় এবং সব শ্রেনীর লোকের কাছেই এটি জনপ্রিয়। বেগুন সারা বছরই চাষ করা যায় ও বাজারে পাওয়া যায়। কৃষক বেগুন বিক্রি করে সারা বছরই অর্থ উপার্জন করতে পারে। এ জন্য বেগুন একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু রোগ বালাই বেগুন উৎপাদনের একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে বেগুনের ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই নিম্নে বেগুনের একটি মারাত্মক রোগের লক্ষন, কারণ, বিস্তার ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

ব্যাকটেরিয়ায় ঢলে পড়া (Bacterial wilt) রোগ
রোগের কারণঃ রাল্সটোনিয়া সোলানেসিয়ারাম (Ralstonia solanacearum) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ
এটি মাটিবাহিত রোগ, কৃষি যন্ত্রপাতি, আক্রান্ত চারা ও সেচের পানি দ্বারা দ্রুত রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় উপযুক্তভাবে বিকাশ লাভ করে। মাটির পিএইচ ৭.৪ এবং ৩৭০ সেঃ তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া সব চেয়ে বেশী আক্রমন ঘটায়।

রোগের লক্ষণঃ
* গাছের যে কোন বয়সে রোগটি দেখা যায়।
* আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাটা খুর দ্রুত ঢলে পড়ে।
* আক্রান্ত গাছ বিকালের দিকে ঢলে পড়ে আবার সকালের দিকে সতেজ হয়।
* এভাবে ৩-৪ দিন পর সকালেও সতেজ হয় না এবং গাছ সবুজ অবস্থাতেই ঢলে পড়ে ও মরে যায়।
* গাছ মরার পূর্ব পর্যন্ত পাতায় কোন প্রকার দাগ পড়ে না।
* কান্ডের নিন্মাংশ চিরলে উহার মজ্জার মধ্যে কালো রং-এর দাগ দেখা যায় এবং চাপ দিলে উহা হতে ধূসর বর্নের তরল আঠাল পদার্থ বের হয়ে আসে। এই তরল পদার্থে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে।
* আক্রান্ত গাছের ডাল বা গোড়া কেটে গ্লাসে পরিস্কার পানিতে রাখলে দুধের মত সাদা সুতার মত ব্যাটেরিয়াল ওজ বের হয়ে আসে।

প্রতিকারঃ
* সুস্থ চারা সংগ্রহ করতে হবে।
* রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন- বারি বেগুন ৬, বারি বেগুন ৭, বারি বেগুন ৮ চাষ করতে হবে।
* বুনো বেগুন গাছের কান্ডের সাথে কাংখিত জাতের বেগুনের জোড় কলম করতে হবে।
* শস্য পর্যায়ে বাদাম, সরিষা, ভূট্টা ইত্যাদি ফসল চাষ করতে হবে।
জমিতে সর্বশেষ চাষের পূর্বে স্টেবল ব্লি¬চিং পাউডার (২০-২৫ কেজি/হেক্টর হারে) মাটিতে মিশানোর সাথে সাথেই হালকা সেচ এর ব্যবস্থা করতে হবে।

* ঢলে পড়া চারা বা গাছ দেখা মাত্র মাটি সহ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
* জমিতে পরিমিত সেচ দিতে হবে। বেগুনের জমি স্যাঁতস্যাঁতে রাখা যাবে না।
* শিকড় গিট কৃমি দমন করতে হবে কারণ ইহারা ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে।
* ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট (কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) ১ লিটার পানিতে ৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে গাছের

গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
* ব্যাকটেরিয়া নাশক স্ট্রেপ্টোমাইসিন সালফেট + টেট্রাসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড (ক্রোসিন-এজি ১০ এসপি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৮ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার জমিতে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
বি:দ্র: ক্রোসিন-এজি ১০ এসপি ও কিউপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি ঔষধ দুইটি পর্যায়ক্রমে একটা ব্যবহার করার পর আরেকটি ব্যবহার করতে হবে।

লেখক
বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
ইমেইলঃ [email protected]

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮ডিসেম্বর২০২০