বেগুনের শিকড় গিট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

930

বেগুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান সব্জি ও অর্থকরী ফসল। আলুর পরেই এর স্থান। দেশের সর্বত্রই এর চাষ হয় এবং সব শ্রেনীর লোকের কাছেই ইহা জনপ্রিয়। বেগুন সারা বছরই চাষ করা যায় ও বাজারে পাওয়া যায়। কৃষক বেগুন বিক্রি করে সারা বছরই অর্থ উপার্জন করতে পারে। এ জন্য বেগুন একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু রোগ বালাই বেগুন উৎপাদনের একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে বেগুনের ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই নিন্মে বেগুনের একটি মারাত্মক রোগ “শিকড় গিট” এর লক্ষন, কারণ, বিস্তার ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

রোগের কারণঃ মেলোয়ডোজাইন ইনকগনিটা এবং মেলোয়ডোজাইন যাভানিকা (Meloidogyne incognita & M. javanica) নামক কৃমির দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ
মেলোয়ডোজাইন প্রজাতির কৃমি মাটিতে বসবাস করে। আক্রান্ত মাটি, শিকড়ের অংশ, বৃষ্টি ও সেচের পানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতির দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাধারণত ২৭-৩০০ সেঃ তাপমাত্রা, হালকা মাটি ও একই জমিতে বৎসরের পর বৎসর বেগুন বা টমেটো পরিবারের সব্জির চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

রোগের লক্ষণঃ
# এ রোগ চারা অবস্থা থেকেই শুরু হয়।
# মাটিতে অবস্থানকারী কৃমির আক্রমনের ফলে আক্রান্ত স্থলের কোষ সমুহ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও ঐ স্থান স্ফীত হয়ে নট বা গিটের সৃষ্টি করে।
# আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়।
# আক্রান্ত গাছ দুর্বল, খাট ও হলদেটে হয়ে যায় ।
# গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে শিকড়ে গিটের উপস্থিতি দেখে সহজেই এ রোগ সনাক্ত করা যায়।
# চারা গাছ আক্রান্ত হলে সমস্ত শিকড় নষ্ট হয়ে যায় ও দিনের বেলায় গাছ ঢলে পড়ে।
# ফল ও ফল ধারন ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়।

প্রতিকারঃ
# জমিতে সরিষা, বাদাম, গম, ভূট্টা প্রভৃতি শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
# ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
# জমি প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের কৃমি মারা যায়, তাই সুযোগ থাকলে বছরে একবার প্লাবিত করে রাখতে হবে।
# হেক্টর প্রতি ৫ টন অর্ধ পচা মুরগীর বিষ্ঠা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর জমিতে চারা রোপন করতে হবে।
শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ভালভাবে শুকাতে হবে।
# রোগের লক্ষণ দেখা গেলে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫জি) অথবা ইসাজোফস (মিরাল ৩জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
ইমেইলঃ [email protected]

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯নভেম্বর২০২০