কুষ্টিয়ার মিরপুরের সফল সবজি চাষি বাবলু কোম্পানী বেগুন গাছে টমেটোর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। টানা তৃতীয় বারের মতো বেগুন গাছে টমেটোর চাষ করে আশানুরুপ ফল পেয়েছেন তিনি। সফল এ সবজি চাষি এর আগেও কলা গাছ থেকে রাসায়নিক সার, আতা ও নিম পাতা থেকে কীটনাশক তৈরি, ঢ্যাঁড়শ গাছ থেকে পাটের বিকল্প আঁশ উদ্ভাবন করে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
সবজি চাষি বাবলু জানান, প্রায় তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে বেগুন গাছে কলম করে টমেটোর চাষ শুরু করেন। একই গাছে বেগুন এবং টমেটোর চাষ করে বেশ সফলতাও আসে। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছর এ পদ্ধতিতে বেগুন এবং টমেটোর চাষ করছেন। তিনি আরও জানান, প্রথমে ৪ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেন। আর ১০ কাঠা জমিতে টমেটো। বেগুন গাছে টমেটো ধরানোর জন্য তিনি ১০টি বেগুন গাছে টমেটোর ডগা কেটে কলম করার মতো করেন। কিছু দিন পর দেখা যায় টমেটোর ডগাগুলো মারা যায়নি। সেগুলোও বেগুনের ডগার মতো বড় হচ্ছে। মাস খানেক পরে দেখা যায় বেগুন গাছে টমেটোর ডগায় টমেটো ধরেছে। এতে বেগুন গাছ থেকে একই সঙ্গে টমেটো এবং বেগুন পাওয়া যায়। একেকটি গাছ থেকে প্রায় দুই কেজি টমেটো পাওয়া সম্ভব। এ বছর অল্পকিছু জমিতে বেগুন এবং টমেটোর চাষ করলেও আগামীতে তিনি আরও বেশি জমিতে চাষ করবেন বলে জানান বাবলু।
জানা যায়, কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান মালিথাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবলু। নিরক্ষর সফল এ সবজি চাষি ২০০০ সালে নিজ গ্রামের তাজ আলী মালিথার ১ বিঘা জমি ৪ হাজার টাকা লিজ নিয়ে ফুলকপি চাষ শুরু করেন। পরের বছর একই গ্রামের বগা বিশ্বাসের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকায় ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেগুন, লাউ ও বাঁধাকপি, পর্যায়ক্রমে অঞ্জনগাছীর খোকনের কাছ থেকে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলাবাগান, ছাতিয়ানের ছানু মোবারের কাছ থেকে চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে করলা, লাউ, বাঁধাকফি, অঞ্জনগাছীর সিআই হাজীর কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলাবাগান, লাউ, চিচিঙ্গা এবং অঞ্জনগাছীর ধুন্দার কাছ থেকে ২৫ কাঠা জমি লিজ নিয়ে পুঁইশাকের আবাদ করেন। এভাবেই বাড়তে থাকে বর্গাচাষি বাবলুর সবজি চাষ। একসঙ্গে এতগুলো জমি লিজ নিয়ে বাবলু এলাকায় সবজি চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটান। বাবলুর সবজি চাষের সাফল্যে দেখে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. মোল্লা মাহমুদ হাসান উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকার পরিত্যক্ত জমি তার চাষের ব্যবস্থা করেন। বর্তমান উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকায় বাবলু সবজি চাষ করছেন।
বাবলু শুধু সফল সবজি চাষিই নন, নতুন নতুুন উদ্ভাবনে তার জুড়ি নেই। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাবলু ঢ্যাঁড়স গাছ থেকে পাটের মতো আঁশ উদ্ভাবন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। ২০১২ সালে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত খামারবাড়িতে দেশের স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকদের নিয়ে দ্বিতীয় জনবিজ্ঞান উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করে।
দুই দিনব্যাপী এ উদ্ভাবনী মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন স্বশিক্ষিত উদ্ভাবক অংশ নেন। উদ্ভাবনী মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্ভাবকদের উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাবলুর পাটের বিকল্প ঢ্যাঁড়সের আঁশ উদ্ভাবন। তারপর ২০১৩ সালের ১২ মে পিকেএসএফের ২৩ বর্ষ পূর্তি ও উন্নয়ন মেলায় একজন জনবিজ্ঞানী হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাবলু।
মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বাবলু এ উপজেলার একজন মডেল চাষি। তিনি এবার তার বেগুনের জমিতে বেগুন গাছে টমেটোর কলম করে চাষ করেছেন। এটা একটি ভালো পদ্ধতি। এর মাধ্যমে অল্প জমিতে অল্প সময়ে অধিক সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়ির ছাদে টবে এগুলো চাষ করা যাবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮মে২০