ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির আমাদের দেশে একেবারেই নতুন একটি প্রযুক্তি। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ইতিপূর্বে সফলতা পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চাষী ও বাগান মালিকরা। সেই ধারাবাহিকতায় রোগবালাই ও পোকার সংক্রমণ থেকে বেগুন রক্ষায় শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। বেগুনে ব্যাগিং করে দেখা গেছে যে, কোন ধরণের বালাইনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ভালমানের বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব। এই প্রযুক্তিতে বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন নেই, ফলে স্প্রে খরচ বেঁচে যাচ্ছে।
কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে বেগুনে চীন থেকে আমদানি করা ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। তিন টাকা দামের এই ব্যাগ চার থেকে পাঁচবার ব্যবহার করা যায়। এতে এক কেজি বেগুনে খরচ হয় দেড় থেকে দুই টাকা। অন্যদিকে কীটনাশক ব্যবহারে খরচ হয় এর দ্বিগুণ। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বেগুন উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে, সেই সঙ্গে মানুষ পাচ্ছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি। দেশে যত সবজি উৎপাদন হয়; তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় বেগুনে। এরপরও শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেগুন নষ্ট হয় পোকার আক্রমণে।
তবে কৃষকদের দাবি, এই হার ৫০ শতাংশ। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন বালাই ব্যবস্থাপনা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হলেও খুব একটা কাজে আসেনি তা। বেগুনের প্রধান শক্র ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য কৃষক মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন; যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, এতে বেগুনের উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১৪ গুণ বেশি কুইনালফস বেগুনে পাওয়া গেছে। এই সমস্যাটি সমাধানে ব্যাগিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বেগুনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেগুনে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম কানুন অনুসরণ করতে হবে। একটি বেগুনের বয়স দুই থেকে তিন দিন হলেই ব্যাগটি পরানো উচিৎ। বেগুনের বয়স যত বেশি হবে পোকায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। ব্যাগিং এর নিয়ম আমের মতোই। কুয়াসার পানি শুকিয়ে গেলেই একটি কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে বেগুনের জমিটি ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। বেগুনের গায়ের পানির ফোঁটা না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে যে আজ যে বেগুনগুলি ব্যাগিং করা হয়েছে সেগুলো কতদিন পর সংগ্রহ করা হবে। ধরুন ৮ দিন পর সংগ্রহ করা হবে। এখন প্রথম দিন যতগুলো বেগুনে ব্যাগিং করা হবে সেই ব্যাগগুলিতে একটি সাংকেতিক চিহ্ন যেমন ১ লিখুন। আর এই ১ লিখা ব্যাগগুলি ৮ দিন পর সংগ্রহ করুন। আবার ২ দিন পরে যে বেগুনগুলিতে ব্যাগিং করা হবে সেগুলিতে ২ লিখুন এবং ৮ দিন পর ২ খিলা ব্যাগগুলির বেগুন সংগ্রহ করুন। এইভাবে পর্যায়ক্রমে ব্যাগিং করুন এবং সংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ে সংগ্রহ করুন। তবে জাতভেদে বেগুন সংগ্রহ করার সময় আরও বেশি হতে পারে।
ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যেকোনো পাখি, ইঁদুর ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকেও বেগুন রক্ষা পাবে। ব্যাগের ব্যবহার শেষ হলে ব্যাগগুলো একসঙ্গে পুুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির তুলনামুলকভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি এখন হাতের কাছে। চাইলে যে কেউ অন্যান্য ফল-ফসলে ব্যবহার করতে পারবেন।
মাঠ পর্যায়ে প্রথম বারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেগুনে ব্যাগিং প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ব্যাগিং প্রযুক্তির প্রধান গবেষক ড. মো. শরফ উদ্দিন। আগ্রহীগন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯ফেব্রু২০২০