বেঙ্গল ক্যাট

567

বেঙ্গল ক্যাট

আমাদের দেশে ইদানিং কালে বেঙ্গল ক্যাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেঙ্গল ক্যাট আসলে একটি হাইব্রিড জাত যা ডমেস্টিক ক্যাট বা গৃহপালিত বেড়াল এবং বন্য এশিয়ান লিওয়ার্ড ক্যাট (এশিয়া লিওপার্ড বেড়াল) এর ক্রসিংয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতের বেড়ালের সুন্দর বন্য সাদৃশ্যতা (ওয়াইল্ড লুক) এদের পুরো দেহের চামড়া বিদ্যমান। যা এসেছে ওদের এশিয়ান লিওপার্ড ফাদার লাইন থেকে। এই জাতীয় বেড়ালের লোম বা কোট সাধারনত মিহি এবং ছোট হয় যা সপ্তাহে একবার পরির্চযা বা গ্রুমিং করলেই হয়। যদিও বেঙ্গল ক্যাটের অতীত ইতিহাস বা ফাদার লাইন বন্য প্রকৃতির তথাপি বেঙ্গল বেড়াল বা ক্যাট খুবই আদরনীয়, সহানুভুতিশীল এবং সামাজিক।

বেঙ্গল ক্যাট মানুষের সাহচার্যে থাকতে খুব পছন্দ করে। এই জাতটি খুবই জীবন্ত এবং প্লেফুল। আর এরা মানুষরে সাথে মেলামেশা উপভোগ করে বিশেষ করে বাচ্চাদের সাথে এদের মেলামেশা দারুন জমে উঠে।

এবার আসি মুল ইতিহাস যা আমাদের জানা উচিৎ এবং এই জাতটিকে বাংলাদেশে কীভাবে উন্নতি করা যায় তাও ভাবা উচিৎ। এই বেঙ্গল ক্যাট জাতটির আরিজিন আসলে সুদুর আমেরিকার। এই জাতটির জন্ম হয় ১৯৬৩ সালে যখন জিন সাজেন ((Jean Sugden, 1963) যিনি ছিলেন একজন আমেরিকান মহিলা কৌলিতত্ব বিশারদ (Geneticist) তিনি আমেরিকার ইউমা (Yuma) বসবাস করতেন। তিনি তার এশিয়ান লিওপার্ড মেয়ে বেড়ালের সাথে তার নিজের গৃহপালিত কালো ছোট লোমের ছেলে বেড়ালের ক্রস করেন। এর মাধ্যমে শুরু হয় বেঙ্গল ক্যাটের যাত্রা।

পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে অন্য একজন কৌলিতত্ববিদ ডা. উইলার্ড (Dr. Willard) একটি নতুন বেঙ্গল ক্যাট ব্রিডিং প্রজেক্ট শুরু করেন। যার উদ্দেশ্য ছিল লিওপার্ড ক্যাটের ফেলাইন লিউকেমিয়া প্রতিরোধের মাত্রা যাচাই করা। তিনি জীন সাজেনকে (Jean Sugden) আটটি লিওপার্ড ক্যাট দেন যাতে সে নতুন করে ব্রিডিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন। ১৯৮৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাট এসোসিয়েশন (TICA) সর্ব প্রথম বেঙ্গল ক্যাটকে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেয়।

বেঙ্গল ক্যাট একটি বড় জাতের বেড়াল ৩টি সাত হতে বিশ পাউন্ড ওজনের হয়ে থাকে। শক্তিশালী দেহের অধিকারী এই বেড়াল এর লেজ এবং পা মাঝারী মাপের। এদের মাথা গোল এবং বড় সাথে বিশাল নাক ও গোল কান হয়ে থাকে। এরা আনুমানিক ১৫ বছর বাচে। বেঙ্গল কাটের লোম ছোট এবং তুলতুলে। চামড়া মোটা কিন্ত খুবই নরম। চামড়ার রং মূলত গোল স্পট সহ হয়। এছাড়া ডার্ক রসেটিস, টু-টোন স্পট আকারের হয়ে থাকে। এছাড়া মার্বেল কোটেটও হয়।

বেঙ্গল ক্যাটের কোন বিশেষ খাবার নির্ধারিত নেই। এরা সব রকমের খাবারই খায়। এটি একটি একটিভ জাত যার জন্য প্রয়োজন খোলা জায়গা যেন তারা দৌড়াতে, খেলতে এবং শিকার করতে পারে। এদের কিটেন গুলো খুব দুষ্টু ও ধ্বংসাত্বক হয়। তাই বাচ্চা বেড়াল বা কিটেন গুলোকে ঘরের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস থেকে নিরাপতে রাখার জন্য স্ক্র্যাচ বার ব্যবহার করা উচিৎ। পরির্চযার জন্য এদের সপ্তারে একবার ব্রাশিং এবং কম্বিং করা উচিৎ।

এরা সামাজিক বা সোশাল টাইপের বেড়াল। এরা মানুষ, কুকুর এবং অন্যান্য জাতের বেড়ালের সাথে মিশে যায় সহজেই। এই জাতের বেড়ালকে বেশি সময় একা রাখা উচিৎ না। এরা বিষন্ন হয়ে পড়লে সেটা তারা ঘরের আসবাবপত্র, পর্দা এবং অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি সাধন করে মনের ঝাল মেটায়। আবার এরা যদি দেখে মালিক তার চেয়ে অন্য পেটকে বেশি প্রধান্য দেয় বা আদর করে তাহলে একটু বেশিই অভিমান করে।

এদের প্রজনন বা ব্রিডিং বিষয়টি একটু জটিল। এদের বেশিরভাগ ছেলে ইনফার্টিলিটি তে ভোগে। মেয়ে বেঙ্গল কেট সব সময়ই ফার্টাইল হয়। সাধারণত প্রথম থেকে তৃতীয় জেনারেশণ এর বেড়ালকে ফিলিয়াল বলে। এই সব ফিলিয়াল বেড়াল ব্রিডিংয়ের জন্য এবং স্পেসিয়ালাইজড ও পেট এনভায়রনমেন্ট এর জন্য রাখা হয়। শুধুমাত্র চতুর্থ এবং পরের জেনারেশন এর বেড়ালকে ঘরে পালার জন্য অথবা শোর জন্য এবং রেজিস্ট্রির জন্য অনুমতি দেয়া হয়। এগুলো বিদেশে মানা হয়। এখন সময় এসেছে আমাদের দেশেও পেট এনিমেলের ব্রিডিংকে আরও পরিশীলিত ও নিয়ম মাফিক করার।

সুখের বিষয় হল বেঙ্গল ক্যাট খুব শক্ত প্রজাতির তাই সহজে রোগ বালাই হয় না। অন্যান্য জাতের মত এদের কোন নির্দিষ্ট হবেই হবে এরকম ব্রিড স্পেসিফিক কোন রোগ নাই।

এদের প্রাপ্যতা একটু কষ্ট কর। যেহেতু অপ্রতুল জাত। কিন্তু ইন্টারনেটে অনেক ভাল বিদেশি ব্রিডার পাওয়া যায়। এসব ব্রিডারের কাছ থেকে বেঙ্গল বেড়াল কিনতে গেলে দাম শুরু হয় ৩০০ ডলার থেকে ৮০০ ডলার পর্যন্ত। এই দামে পূর্ণবয়স্ক বেড়াল পাওয়া যায়। তবে শো কোয়ালিটি বাচ্চা বেড়ালের জন্য ১২০০ থেকে ২০০০ ডলার খরচ করতে লাগে। আশা করি আমাদের দেশে পেট এনিমেল ব্রিডিং কার্যক্রম ধীরে ধীরে আরো এগিয়ে যাবে সময়ে সাথে সাথে।

লেখক: ডা. সগীর উদ্দিন আহমেদ।

 

Rafid-Feed-300x100

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন