বেশি লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক

78

ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ ও আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে সেই জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তুত, সার প্রয়োগসহ আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের প্রান্তিক ও মাঝারি চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার আট হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে গত বছর জেলার ছয় উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল আট হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার ২৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু বেশি চাষ করা হবে।

বিশেষ করে জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা আগাম আলু চাষের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। তাই আলু রোপণকে ঘিরে কৃষক মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে মাঠজুড়ে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউবা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও বীজ সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরে চাষ হয়েছিল চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে গতবারের চেয়ে এবার ১০০ হেক্টর বেশি চাষ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রণচন্ডী ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের আলুচাষি শাহিনুর জানান, গত বছর ধান কাটার পর চার একর জমির আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দ্বিগুণ টাকা লাভ হয়েছে। এবারও পাঁচ একরের বেশি জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আলু রোপণ করছি।

ওই ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের (মাটি) জমিগুলো একদম উঁচু ও বালুমাটিমিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষতির ভয় থাকে না। কয়েক দিন আগে অতি বৃষ্টির ফলেও মাটি শুষ্ক রয়েছে। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু রোপণ করছি। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গতবারের চেয়ে ফলন ভালো হওয়ার আশায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছি।

একই উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলী গ্রামের আলুচাষি রিপন ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মধ্যে সেভেন জাতের চার বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। বাকি সাত বিঘা দু-এক দিনের মধ্যে রোপণ শেষ করব। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৮ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তুলতে পারব। বাজারদর ভালো পেলে সার, বীজ, পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ খরচ বাদে ১১ বিঘায় লাভ হবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত।

একই এলাকার মমতাজ আলী ছয় বিঘা ও আব্দুল জব্বার ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তারা জানান, ‘এ এলাকার মাটি উঁচু ও বালিমিশ্রিত হওয়ায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম আলু চাষে তেমন কোনো ভয় থাকে না। ফলন কম হলেও রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে চড়া দামে আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।

আব্দুল জব্বার জানান, ‘যার আলু যত আগে উঠবে, সেই কৃষক তত ভালো দাম পাবেন। তাই সবাই টাকাপয়সা ব্যয় করে দু’টাকা লাভের আশায় আগাম সেভেন জাতের আলুসহ গ্র্যানুল্যা, সাকিতা, কারেজ ও জামপ্লাস আলু রোপণ করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমির আগাম ধান কেটে আলু চাষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপোযাগী। প্রতিবছর এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করে থাকেন। গত বছরের চেয়ে এবার ১০০ হেক্টর আলু বেশি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য আমাদের কৃষি অফিস থেকে আগাম আলু চাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম জানান, কিশোরগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই উপজেলা আগাম জাতের আলু চাষে খ্যাত। এখানকার উৎপাদিত আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়। গত বছরের চেয়ে এবার ১০০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ করা হবে। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজারদর ভালো পেলে কৃষক এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এবং লাভবান হবেন।