প্রতি বছরের মতো এবারও উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা নীলফামারীতে আগাম আলু উঠতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। একদিকে নতুন আলুর ফলন ভালো না হওয়া অন্যদিকে অন্যান্য বছরের চেয়ে দাম কম পাওয়ায় হাসি নেই চাষিদের মুখে।
চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে আগাম আলুর ফলন ভালো হয়নি। এদিকে আগাম আলুর যে দাম পেতে অধীর আগ্রহে ছিলেন সেটিও ভাগ্যে জুটছে না তাদের। স্থানীয় বাজারে আলু বিক্রি করাটাও বড় কঠিন। এই সুযোগটা হাতিয়ে নিচ্ছেন আড়তদাররা। তাই জমিতেই কৃষককে নতুন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। তাদের অভিযোগ, ভারত থেকে নতুন আলু আমদানি করা হচ্ছে। সে কারণে এ বছর আগাম আলুর দাম পাচ্ছেন না। এছাড়াও দেশে হরতাল-অবরোধে আগাম আলুর দামে ধস নেমেছে বলে ধারণা করছেন তারা। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষিদের।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এখন আগাম আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আলু উৎপাদন করে নিজেদের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছেন জেলার অনেক কৃষক। এই জেলায় প্রথম আগাম জাতের আলু উৎপাদন শুরু করেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আলুর মাঠে কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ আলু কুড়াচ্ছেন, কেউ ঠেসে ঠেসে বস্তা ভরছেন। কোথাও আবার ডিজিটাল মিটারে চলছে ওজন পরিমাপের কাজ। ক্ষেতের পাশে ভর্তি হচ্ছে ভ্যান, ট্রলি ও ট্রাক। আলু তোলার এমন দৃশ্য জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ বসুনিয়াপাড়া এলাকার কৃষক মনোরঞ্জন রায় বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। রোপণের ৫২ দিনের আগাম আলু উত্তোলন করতে শুরু করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। এ ছাড়া দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন পর আরও দাম কমতে শুরু করবে। এতে করে আমরা যারা আগাম আলু চাষ করেছি তাদের লোকসানে পড়তে হবে।
কৃষক ললিত চন্দ্র রায় বলেন, আগাম আলু চাষ করে ভালোই লাভবান হই। এ বছরে উর্ধ্বমুখী দামের আশায় আগাম আলু চাষ করে সেই জমিসহ সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে আগে-ভাগে আগাম আলুর বীজ রোপণ করেছি। ২০ থেকে ৩০ বস্তা আলুর আশা করা হচ্ছে। তবে দাম খুবই কম কোনো রকমে খরচ তোলা যাবে।
মানিক হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। যেভাবে খরচ হয়েছে তাতে আলুতে পোষায় না। সরকার যদি সার ও কীটনাশক দাম কমে দেয়। তাহলে চাষাবাদ করে পোষাতো। আলু লাগানোর সময় বীজের দাম ৬০ টাকা কেজি ছিল এখন নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
স্থানীয় আলু ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, এবার আগাম আলু চাষ করে কৃষকদের লাভ হবে না। কারণ আলু লাগানোর পর বৃষ্টি হওয়ায় অনেকের আলু পচে গেছে। এদিকে হরতাল অবরোধের কারণে আলু পরিবহন করার জন্য গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ভারতের নতুন আলু আসায় দাম কমেছে। বর্তমানে নতুন আলুর দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিনতে হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে কিনেছিলাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। আগাম আলু তোলা শুরু হলেও পুরাপুরি এক সপ্তাহের মধ্যে সব জায়গায় আগাম আলু তোলা শুরু হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।