বোম্বাই মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হাজারো পরিবার

339

মরিচ

পিরোজপুর: জেলায় বোম্বাই জাতের মরিচের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে হাজারো পরিবার। পিরোজপুর জেলার ৭টি উপজেলার ৩টি পৌর ও ৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার ৫৭৪ হেক্টরে স্থানীয় জাত মনসা গর্জন এবং উচ্চ ফলনশীল যমুনা, শাকাটা ও মেজর জাতের মরিচের চাষ করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় রবিশস্য মৌসুমে মরিচ চাষের এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করে ৫৭৪ হেক্টরে ৮৫০ মে. টন শুকনো মরিচ।

এদিকে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে রোদে শুকানোর পর হিসেব করে দেখা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ মে. টন মরিচ কম উৎপাদিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি এলাকায় মরিচের চাষ হয়েছে মঠবাড়িয়া স্বরূপকাঠী এবং নাজিরপুর উপজেলায়। এ তিনটি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নে ৪২২ হেক্টরে মরিচের চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার রবিশস্য মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থানে মরিচের ক্ষেত তৈরি করা হয়। কৃষি কর্মকর্তারা বীজ বপন থেকে শুরু করে মরিচ শুকানো পর্যন্ত সার্বক্ষণিক মরিচ চাষিদের পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে স্বরূপকাঠী উপজেলার ৩০টি গ্রামের বোম্বাই জাতের মরিচ চাষ করে আর্থিক অস্বচ্ছলতা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি পরিবার। এদের মধ্যে কয়েকজন হয়েছেন লাখপতি।
উপজেলার মাদ্রা, আতা, আদাবাড়ি, মাহমুদকাঠী, ব্রাম্মনকাঠী, জিন্দাকাঠী, আরামকাঠী, সুলতানপুর, নান্দুহার, গগন, জিলবাড়ি, জলাবাড়ি, বলদিয়া, সুটিয়াকাঠী, হরিহরকাঠীসহ ৩০ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচের চাষ হচ্ছে। এ জাতের মরিচের চাষ যথেষ্ট লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর অধিক সংখ্যক চাষি বোম্বাই মরিচের চাষে আকৃষ্ট হচ্ছে।

বছর সাতেক আগে আদাবাড়ি গ্রামের কৃষি শ্রমিক রিপন হাওলাদার বোম্বাই মরিচের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। রিপন গত কয়েক বছরে প্রতি বছর মরিচ চাষের এলাকা বৃদ্ধি করে এ বছর ১০ বিঘা জমিতে মরিচের ক্ষেত করেছেন। রিপন এখন লাখপতি।

রিপনের চাচা অসিম হাওলাদার ভাতিজার সাফল্য দেখে মরিচ চাষে আকৃষ্ট হয়েছেন এবং তিনিও শতাধিক শতক জমিতে বোম্বাই মরিচের চাষ করেছেন।

অসিম জানান, জমিতে মাটি কেটে আইল বেধে ক্ষেত তৈরি করা হয়। কার্তিক মাসের শেষ দিকে শুরু করা হয় বীজ বপন। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি চারা তুলে সারিবদ্ধভাবে ক্ষেতে লাগানো হয়। পৌষের শেষ থেকে মরিচ গাছে ফুল এসে ফল ধরে এবং মাঘের শেষ থেকে শুরু হয় মরিচ সংগ্রহ যা চলে জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্যন্ত। প্রতি হাজার মরিচ স্থানীয় আড়তে ৬শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হয়। এসব মরিচ
আড়তদাররা ট্রাক ভরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাইকারি আড়তে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে এবং দেশের অন্যান্য স্থানে খুচরা বিক্রির জন্য মরিচ পাঠিয়ে দেয়া হয়।

আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আড়তদার সফিজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩টি মিনি ট্রাক ভর্তি মরিচ এসব অঞ্চল থেকে কারওয়ান বাজারে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িয়ানার অর্থকরী ফসল বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে এখন মরিচের চাষ শুরু হয়েছে। পেয়ারা পাশাপাশি মরিচ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে চাষিরা অধিক উপার্জন করেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোম্বাই মরিচ চাষিদের তারা অধিক উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অরুণ রায় জানান, চলতি বরিশস্য মৌসুমে নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৯ হেক্টর জমিতে বোম্বাই এবং দেশি জাতের মরিচের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ভালো হাওয়ায় এর পরিমাণ ১৯৫ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে। যার বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। জেলার অন্যান্য এলাকায়ও লাভজনক এ বোম্বাই মরিচ চাষের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন