বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

500

যশোর জেলায় চলতি মৌসুমে এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার বিভিন্ন মাঠে এরই মধ্যে চাষিরা বোরো ধান লাগানো শুরু করেছেন। আবার অনেকেই বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে সার, ডিজেল ও শ্রম খরচের পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে শতভাগ সেচনির্ভর এই বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

কয়েকজন কৃষক বলছেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ পরিস্থিতিতে সামনের আবাদ ঘরে তুলে কতটা উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করতে পারবেন, সেই চিন্তায় তাদের মাথায় হাত উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের টার্গেট নিয়ে কৃষকরা প্রস্তুতি নিলেও এরই মধ্যে ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশ। এসব ধান আবাদের মধ্য হাইব্রিড জাতের রয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর ও উফশী জাতের এক লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। এসব জমির জন্য কৃষক এরই মধ্যে আট হাজার ৫১৩ হেক্টর জমিতে বীজতলাও প্রস্তুত করেছে। এসব বীজতলা প্রস্তুত করতে গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ খরচ বেড়েছে বলেও স্থানীয় চাষিরা জানান।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, জেলায় মোট ৮২ হাজার ১৮১টি সেচযন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে এক হাজার ৪৫৪টি, ডিজেলচালিত ১৬০টি, বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ ১১ হাজার ২৭২টি এবং ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে ৬৮ হাজার ৪২৬টি। এলএলপি (শ্যালো ইঞ্জিন ও ছোট মোটরচালিত) রয়েছে বিদ্যুৎচালিত ১৫০টি, ডিজেলচালিত ৭০৫টি এবং সোলার সেচ পাম্প রয়েছে ১৪টি।

ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলছেন, অন্যান্য বছরে সেচে যে খরচ হতো এবার তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির পর ১০৯ টাকায় ডিজেল বিক্রি হওয়ায় ডিজেলচালিত পাম্পে সেচ খরচ বেড়েছে বিঘায় তিন-চারশ টাকা। এরপর গত নভেম্বরে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর পর গ্রাহক পর্যায়ে আবার পাঁচ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত উভয় ধরনের সেচ খরচ বেড়ে গেছে।

আমিনুর রহমান বলেন, এ বছর বোরো আবাদের খরচ দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে তাদের। আগে ১ এক হাজার ২০০ থেকে ১ এক হাজার ৩০০ টাকায় বিঘাপ্রতি সেচ খরচ দিলেও এখন দিতে হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার সাতশ টাকা। এর বাইরে রোপণ খরচ হচ্ছে বিঘাপ্রতি ২২শ টাকা। সার, কীটনাশক ও শ্রম খরচ মিটিয়ে শেষ পর্যায়ে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কৃষক শাফিনূর রহমান বলেন, এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বিশেষ করে শ্রমিকের মূল্য ও সেচ খরচ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে ধান আবাদের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে কৃষিশ্রমিক এনে ধান আবাদে কিছু সাশ্রয়ের চেষ্টা করছি। তারপরও তাদের তিন বেলা খাবার দিয়ে বিঘাপ্রতি এক হাজার ৪০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তিন বেলা খাবার জোগান দিতে গিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হচ্ছে। সে হিসেবে সামনে কীভাবে বোরো আবাদ ঘরে তুলতে পারব, সে চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, ধান আবাদ এখন লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক বাজারে ধানের দাম কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পাচ্ছেন। যে কারণে উৎপাদন খরচের সঙ্গে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও সমন্বয় হচ্ছে বলে তারা ধান চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।