ভালো ফলনের জন্য সুষম সারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সার প্রয়োগ করতে দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখা দরকার। প্রথমত. ধানের জাত, জীবনকাল ও ফলন মাত্রার ওপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা। দ্বিতীয়ত. সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোন সার কখন ও কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা নির্ধারণ করা। সার ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই সবার কাম্য। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সারের মাত্রা নির্ণয় করা সর্বোত্তম।
সাধারণভাবে ১৫০ দিনের নিচে স্বল্প মেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৮ ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৫ বা বিনা ধান-১০ এবং বিনা ধান-১৮ এর ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি অর্থাৎ প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ৩৫ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১২ কেজি, এমওপি ২০ কেজি, জিপসাম বা গন্ধক ১৫ কেজি, দস্তা (মনোহাইড্রেট) ১.৫ কেজি।
১৫০ দিনের বেশি দীর্ঘমেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮ বা ব্রি ধান৬৯, ব্রি ধান৮৯ এর ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি অর্থাৎ প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ৪০ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১৩ কেজি, এমওপি ২২ কেজি, জিপসাম ১৫ কেজি, দস্তা ১.৫ কেজি।
হাওর অঞ্চলের জাতের ক্ষেত্রে প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ২৭ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১২ কেজি, এমওপি ২২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, দস্তা ১.৫ কেজি। তবে টিএসপির বদলে ডিএপি সার ব্যবহার করলে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে।
টিএসপি বা ডিএপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তা সারের পুরোটাই শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সতর্ক থাকতে হবে দস্তা ও টিএসপি একসাথে না মিশিয়ে পৃথকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ১ম কিস্তি চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর এবং শেষ কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে।
দীর্ঘমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ১ম কিস্তি শেষ চাষের সময়, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর অর্থাৎ গোছায় কুশি দেখা দিলে এবং শেষ কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে। সার প্রয়োগ ও পদ্ধতি নিয়ে আরও কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সার সমন্বয় করে ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও ভালো ফলন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৩ এপ্রিল ২০২১