১৯৯১ সালে মাত্র ৪০টা মুরগি দিয়ে ছোট্ট একটি পোল্ট্রি ফার্মের যাত্রা শুরু। এরপর হাটিহাটি পা করে একদিনের মুরগি লালন পালন, মুরগি থেকে ডিম উৎপাদন করে নিজস্ব ইনকিউবেটর মেশিনের মাধ্যমে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করে বিপনন। সাথে মুরগির ডিম মাংস এবং দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে ভালোই এগুচ্ছিলেন। পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছিলেন এলাকার অনেক কৃষি উদ্যোক্তাদের। দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ অব্যাহত রেখে কাজ করে চলেছেন।
সেই উদ্যোমী তরুনের দীর্ঘদিনের এ স্বপ্ন এবার কি থেমে যাবে এমন অজানা আশংকায় বুক কাঁপছে এ তরুন কৃষি উদ্যোক্তার। বলছিলাম কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়ায় অবস্থিত শাহিন পোল্ট্রি হ্যাচারির মোঃ শাহিনুর রহমান-এর কথা। প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১। তীর প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার ২০১৮। ১৩তম সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০১৭, ডব্লিউডিএসএ-বিবি পোল্ট্রি সম্মাননা পুরস্কারসহ জেলা-উপজেলা অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়।
দেশের আমিষ উৎপাদনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলা বর্তমানে করোনা ছোবলে অনেকের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। শাহিনুর আক্ষেপের সাথে বলেন- দীর্ঘদিন যাবৎ মুরগির মাংস, ডিম এবং একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করে প্রতিনিয়ত লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এমনকি মুরগি বিক্রি করেও খাদ্য যোগান করতে হচ্ছে। এতে করে অনেক বড় অংকের লোকসানের সম্মুখীন হয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তের মাঝে বিশ্বের করোনা নামক মরণঘাতী ভাইরাসটি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে মানুষের মধ্যে মুরগির মাংস, ডিম, দুধ এগুলোর প্রতি না খাবার প্রবনতা চলে আসছে এবং নানা গুজব আর বিভ্রান্তির কারণে মানুষ এগুলো খেতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। এতে করে যতটুকু বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার আশা ছিল সে আশাটাও নিভে গেছে।
বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এদিকে ক্রমাগত লোকসানের কারণে বেসিক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা হতে গ্রহণকৃত ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান তিনি। ঋণ পরিশোধের জন্য বেসিক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা নিয়মিতভাবে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ তাকে আরো বিপর্যস্থ করে তুলেছে।এমনকি তারা বিভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের হুমকি দিয়ে চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ লোকসানে বোঝা গুনতে গুনতে মুরগির খাদ্যের দোকান, ওষুধের দোকানসহ কিছু ব্যক্তিগত মানুষের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। শাহিনুর বলেন, “আমার মত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা যদি হতাশ হয়ে মুখ থুবরে পড়ে তাহলে অন্যান্য উদ্যোক্তারা কি অবস্থা হবে এবং দেশের দুধ, ডিম, মাংস উৎপাদনের বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে। আমি হতাশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করতেছি, কিন্তু আমি হতাশ হলেও মনোবল এখনো হারাইনি। পরিপূর্ণ সহযোগিতা পেলে আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো বলে মনোবল রাখি।” নতুন করে ঘুরে দঁড়াতে তিনি সংশ্লিস্ট ব্যাংক ও সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এজন্য সহজ শর্তে কিছু ঋণ এবং বেসিক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার যে ঋণ আছে এটা তিন বছরের জন্য সময় বৃদ্ধি করে দিলে তিনি আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। এখন সরকার যদি তার দিকে একটু সুনজর দেয় তাহলে তিনি আবার নতুন করে শুরু করতে পারবেন এবং দেশের আমিষের চাহিদা পূরণসহ দেশের হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কৃষি সেক্টরে কাজ করতে পারবেন বলে আশা করেন শাহিনুর।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৫এপ্রিল২০