ব্রয়লার মুরগির সঙ্গে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম

137

 

ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও রাজধানীর বাজারগুলোয় ফেরেনি স্বাভাবিক চিত্র। এখনও ক্রেতা তুলনামূলকভাবে কম। বেশকিছু পণ্যের সরবরাহও স্বাভাবিক হয়নি।

এর মধ্যে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে আরেক দফা। ঈদের আগের গরু, খাসি ও মাছের বাড়তি দাম কমেনি এখনও। দাম বাড়ার তালিকায় যোগ হয়েছে আলু-পেঁয়াজ। তবে সবজির সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি, ফলে কমেছে দাম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, পলাশী, গুলিস্তানের আনন্দ বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল ও মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে ভিড় তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তবে ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীর বাজারে এখনও ভিড় দেখা যায়নি সেভাবে।

রোজার আগে আগে লাফ দেয়া ব্রয়লার মুরগি রোজায় কেজিপ্রতি ২০০ টাকায় নেমে এলেও ঈদের আগে আবার বাড়ে। ঈদ শেষে আরও খানিকটা বেড়ে এখন কারওয়ানবাজারেই দাম ২৩০ টাকা। অন্যান্য বাজারে আরও বেশি।

ডিম পাড়া শেষে বিক্রি করে দেয়া লেয়ার ও সোনালি মুরগির দাম কাছাকাছি, কেজিপ্রতি ৩৪৫ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির দাম গরুর মাংসকে ছাড়িয়ে গেছে। জ্যান্ত মুরগিই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৬৫০ টাকা করে। এক কেজি ওজনের মুরগি জবাই করলে মাংস হয় ৬৫০ গ্রামের মতো। সে হিসেবে কেবল মাংসের দাম পড়ে হাজার টাকা।

শান্তিনগর বাজারে বিক্রেতারা ব্রয়লারের দাম চাইছেন কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ক্রেতা হাফিজা বেগম বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগে ব্রয়লার কিনে নিয়ে গেছি ২২০ টাকা দরে। সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এসে দেখি দাম আবার বেড়ে গেছে।’

ব্রয়লার মুরগির দাম কেন এত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছেÑসে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দেশি মুরগির কাছে তো যাওয়াই যায় না। ছোট সাইজের একটার দামই চায় ৩০০ টাকা।

শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, ফকিরেরপুল ও মালিবাগ রেলগেট বাজারের দোকানে মুরগিও পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। দাম বাড়ার বিষয়ে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা মোমিন হোসেন ও মালিবাগ রেলগেট বাজারের বিক্রেতা সোবহান মিয়ার ভাষ্য অভিন্ন। তারা বলছেন, বড় খামারিরা মুরগির দাম ঠিক করে ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করে’। তারা খুচরা বিক্রেতা। দাম বাড়া-কমা তাদের ‘হাতে নেই’।

সেগুনবাগিচায় বাজার করতে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির বাজারে এক রকম নৈরাজ্য চলছে। খুচরা বিক্রেতা পাইকারদের দোষ দিচ্ছে। আর খোঁজ নিয়ে দেখবেন, পাইকার বা খামারিরা বলবেন, তারা কম দামে ব্রয়লার মুরগি দিচ্ছেন। তারা বলবেন, দাম বাড়াচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা।’

পলাশী বাজারে গরু ৮০০ এবং খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ডিমের হালি ৪০ ছুঁয়েছিল ঈদের আগেই। সেটি আরও খানিকটা বেড়ে লাল ডিমের ডজন এখন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি। সাদা ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন এখন ১৬০ টাকা।

ফকিরেরপুল বাজারের বিক্রেতা তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের পর আমদানি কম। হের লাইগ্যা দাম বাড়তি। আমরাই ঈদের আগে এর চেয়ে কমে বেচছি। কিছু করার নাই। বাজার ঘুরে দেহেন, দাম কম পাইবেন না।’

মালিবাগ বাজারে আসা কলেজশিক্ষক শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ডিমের যে সিন্ডিকেট, তারাই দাম ওঠানামা করাচ্ছে। কিছুই করার নেই। এখানে ডিমান্ড অথবা সাপ্লাই কোনোটা ফ্যাক্টর নয়।

আপনি অনুসন্ধান করলেই দেখবেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ দালাল সিন্ডিকেট। বিক্রেতারাও কেউ বলতে চান না ব্যবসার নিরাপত্তার কারণে।’

বড় মাছের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা পাঙাশ ও তেলাপিয়ার কেজিই ১৮০ থেকে ২০০। পাবদার দাম ৩৫০, চিংড়ি প্রকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৪০০ এবং কাতলা মাছ ২৩০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। বড় আকারের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি দুই হাজার টাকায় পর্যন্ত উঠেছে।

কারওয়ান বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আবু জাকির বাজারদর দেখে হতাশ। তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে মাছ মাংস ও মুরগির দাম বেড়েছে, এখনও সেই দামই রয়ে গেছে। কিছুটা হলেও দাম কমবে বলে আশা করেছিলাম।’

চিনির দাম সরকারের বেধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি। সরকার খোলা সর্বোচ্চ দাম ঠিক করেছে ১০৪ টাকা, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১২৫ টাকায়।

প্যাকেটজাত চিনি বেশিরভাগ দোকানে পাওয়া যায় না। তবে সুপার শপে প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ দুটি পণ্যের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে বলে পাইকাররা জানান। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের পাইকার মো. চান মিয়া বলেন, ঈদের আগে পাল্লা (পাঁচ কেজি) ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। এখন ২২০। পেঁয়াজ অনেক রকমের আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গড়ে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪৭-৪৮ টাকা এখন।’

আলু বিক্রেতা শরিফ মিয়া জানান, গোল আলু প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পাল্লা ছিল, এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। পাইকাররা জানিয়েছেন, কারওয়ানবাজারে এখন কাঁচাবাজারের সরবরাহ বেড়েছে, সেই হিসেবে ক্রেতা কম, ফলে দামও একটু কম।

কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকার আবুল হোসেন বলেন, ‘সবজির সরবরাহ অনেক, খুচরা ব্যবসায়ীরা আগে যে পরিমাণে নিয়ে যেত, এখন নিচ্ছে তার প্রায় অর্ধেক। তাই কম দামেই ছাড়তে হচ্ছে।’

তিনি জানান, খুচরায় শসা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর ৬০ ও ঝিঙা ৬০ টাকা করে, করলা ৪৫ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া ও বেগুন ৩০ করে এবং মাঝারি মানের লেবুর হালি ১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এসব সবজি কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বিক্রি ছিল। লেবুর হালির দাম কমেছে অনেকটাই।

একই বাজারের বিক্রেতা আলম মিয়া লাল শাক, পালং, পাট, কলমি, ডেটা শাকের চার আটি ২০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘দাম এক্কেবারে পইড়া গেছে। ঈদের আগের অর্ধেক দাম এহন।’

আরেক ব্যবসায়ী মো. তানভীর আলম দুর্জয় জানান, ঈদের আগে তিনি কাঁকরোল বিক্রি করেছেন ১২০-১৩০ টাকায়, এখন সেটা ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে।

শরিফুল ইসলাম ঢেঁড়শ বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে, পাইকারি নিলে আরও কম। তিনি বলেন, ‘করলা আগে ৭০-৭৫ টাকা আছিল, এখন ৪০-৪৫ টাকা।’