ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

99

টমেটো সাধারণত শীতকালীন সবজি। মূলত তাপমাত্রার কারণেই আমাদের দেশে শীতকালে টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। তবে নৈশকালে তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রির নিচে থাকলে গ্রীষ্মকালেও টমেটো চাষাবাদ সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক স্থানে গ্রীষ্মকালেও হচ্ছে টমেটোর চাষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এ বছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় এখানকার কৃষকরা ‘বাহুবলী’ এবং ‘রাজা’ জাতের টমেটোর আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। ভালো ফলন আর বাজারদর ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে প্রকাশ, টমেটো পুষ্টিহুণে সমৃদ্ধ একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, ত্বকের উজ্জ্বলতা, হƒদযন্তের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে সহায়তা করে। এটি কাঁচা এবং রান্না করে উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। এটি সাধারণত শীতকালীন সবজি।

কারণ প্রকৃতিতে তখন তাপমাত্রা কম থাকে। গড়ে ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা টমেটোর ভালো ফলনের জন্য উপযোগী। তবে গ্রীষ্মকালে নৈশকালীন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে টমেটোর গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য উপযোগী হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্মকালেও টমেটোর চাষাবাদ হয়।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর হয়েছে বাম্পার ফলন। এবার এই উপজেলায় ৮১ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। প্রায় দশ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে বিজয়নগরে।

বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের আড়িয়ল গ্রামের কৃষক শাহবাজ আলী জনান তিনি কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ বছর তিন বিঘা জমিতে ‘বাহুবলী’ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অপরদিকে তিন বিঘা জমিতে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি বাবদ আয় করেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।

চলতি বছর টমেটোর বাজার মূল্য বেশি থাকার সুবাদেই তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন বলেও জানান। একই গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া এবং খোকন মিয়া। তারা দু’জনও স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে তাদের দুই বিঘা করে জমিতে ‘রাজা’ জাতের টমেটোর আবাদ করে হয়েছেন অপ্রত্যাশিত লাভবান।

কৃষক শাহবাজ আলী, কাশেম মিয়া, খোকন মিয়া আরও জানান উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে আমরা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করি। অফিসাররা সময়ে সময়ে আমাদের জমি পরিদর্শন করে টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন এবং কীভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায় সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।

তাদের পরামর্শ মোতাবেকই আমরা টমেটো আবাদ করে লাভবান হয়েছি। প্রসঙ্গক্রমে তারা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি সংরক্ষণের কোনো কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় মৌসুমে উৎপাদিত সবজি আমাদের কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। তাই তারা জেলায় সরকারিভাবে বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জোর দাবি জানান।

উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অফিসার মোহা. নুরে আলম জানান, ‘টমেটো মূলত এদেশের শীতকালীন ফসল। তবে এখন গ্রীষ্মকালেও এর চাষাবাদ হচ্ছে। রাতের তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রির নিচে থাকলে টমেটো গাছে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশি উপযোগী হয়। গড় তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি টমেটোর ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

তিনি আরও জানান, নিয়মিত টমেটো চাষিদের মাঠ পরিদর্শন করে তাদের বিভিন্ন ধরনের জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকা দমন করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ জানান, ‘বিজয়নগর উপজেলায় এ বছর ৮১ হেক্টর জমিতে বিভিন্নন জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। এবার এই উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ২৪০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে যার বাজার মূল্য ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিস্ট সবাইকে কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।