ব্রুডার নিউমোনিয়া:
ব্রুডিংকালিন সমইয়ে একটি রোগ সচরাচর দেখা যায় আর তা হচ্ছে এস্পারোজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া। রোগটি ছত্রাকজনিত। এ রোগ দুই ভাবে ছড়ায় প্রথমটি হলো হ্যাচারির মাধ্যমে। যদি হ্যাচারির দেওয়াল, ছাদ অথবা চিকবক্সে ছত্রাক জন্মায় তাহলে রোগটি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। অন্যটি হলো ব্রুডিং সময়ে যদি লিটার ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে এবং ব্রুডিংকালিন ঘরের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকে, খাদ্যপাত্রে ভেজা খাদ্য অনেক সময় ধরে থাকে অথবা খাদ্যপাত্র সবসময় ধোয়ামোছা না করা, এসবের কারণে লিটার, ঘরের ফ্লোর, দেয়াল এবং পোল্ট্রি ব্যবহৃত জিনিসপত্রে প্রচুর পরিমাণে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাক বা ছত্রাকের ফুল বা হাইফি বাচ্চা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে টেনে নেয় এবং ব্রুডার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ রোগ চিকিৎসায় তেমন ভালো হয় না। তাই ব্রুডিংকালিন ব্রুডিং হাউজের ছাদ, ফ্লোর এবং লিটার শুষ্ক রাখা অত্যন্ত জরুরি। খামারে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
কক্সিডিওসিস:
কক্সিডিওসিস বা রক্ত আমাশয় ছোট বাচ্চার জন্য একটি ঘাতক ব্যাধি। মূলত লিটারের মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়। তাই অনেকে ম্যনেজমেন্টাল ডিজিজ বলে। রোগটি ৩-৬ সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। পূর্বে আমাদের বাংলাদেশে এ রোগে খামারিরা মুরগির খাবারে কক্সিসাইডাল অথবা কক্সিডিওস্ট্যাটের শ্যাটল প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমানে বয়সের প্রথম সপ্তাহে কক্সিডিওসিসের লাইভ ভ্যাক্সিন প্রদানের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে। ভ্যাকসিন দিলেও ১১-১৫ দিন বয়সে সামান্য পরিমাণে কক্সিডিওসিস দেখা দেয়, সে সময় কক্সিসাইডাল ব্যবহারের পরও এই ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে কক্সিডিওস্ট্যাট জাতীয় ঔষধ যেমন- এম্পোলিয়াম পানিতে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সাথে ভিটামিন-কে ব্যবহার করতে হয়। রক্ত আমাশয় হলে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে গামবোরো রোগ এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে এবং এ জাতীয় রোগের প্রভাবে বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায় এবং পুলেট সময়মতো ডিম দেওয়া শুরু করে না।
গামবোরো রোগ:
গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ, এ রোগের সাথে সব খামারির কমবেশি পরিচয় আছে। ব্রয়লারের তুলনায় লেয়ারে রোগের প্রভাব অনেক। এতে মৃত্যুহার অধিক হয়। রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। গামবোরো আক্রান্ত মুরগি পরে বিভিন্ন রকমের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর অন্যতম রোগের নাম রানীক্ষতে। গামবোরো আক্রান্ত বাচ্চা খাদ্য খাওয়া ছেড়ে দেয় ফলে বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি যেমন ব্যাহত হয় তেমনি ইউনিফরমিটিও ভালো থাকে না। গামবোরো আক্রান্ত ফ্লকে পিক প্রডাকশন আসতে অনেক দেরি হয়। রোগটি ভাইরাসজনিত হওয়ার কারণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে তেমন ফল পাওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেকেন্ডারি ইনফেকশন দেখা দিলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উত্তম। গামবোরো রোগ থেকে ফার্মকে মুক্ত রাখতে এমন এক পরিকল্পনা দরকার; যেখানে থাকবে উপযুক্ত পরিবেশ, ভ্যাকসিন সিডিউল ও কঠোর জীবনিরাপত্তা বাবস্থার বাস্তবায়ন। গামবোরো আক্রান্ত হলে মুরগি যেনো খাদ্য ও পানি খাওয়া ছেড়ে না দেয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা, পানিতে এসিডিফায়ার ব্যবহারে অধিক সুফল পাওয়া যায়। এসময় পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন দিলে বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। ‘অঞ্জন মজুমদার’ চলবে…..