ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছে গোপালগঞ্জের কৃষকরা

650

ব্রোকলি
গোপালগঞ্জ: জেলায় ব্যাপক জনপ্রিতা পেয়েছে নতুন জাতের সবজি ব্রোকলি। দেখতে ফুলকপির মতো হলেও ভিন্নতা রয়েছে রং ও স্বাদে। কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত টুঙ্গিপাড়ার কৃষক শক্তি কির্ত্তনীয়া বিগত চার বছর ধরে নতুন জাতের সবজি ব্রোকলি ফলিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

৪ বছর আগে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বর্ষা শেষ হতে না হতেই জমিতে নতুন জাতের এ সবুজ সবজি লাগান। ফলনও পান ভালো। আর দামও ভালো পেয়ে তিনি প্রতিবছরই এর চাষ করে আসছেন। দাম ও লাভ বেশি হওয়ায় ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। অনেক চাষি অল্প জমিতে এর চাষও করেছেন। অনেকই আগামীতে এ সবজির চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সবজিটি জেলায় ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গায় গিয়ে জানা গেছে, সবজিটি দেখতে অনেকটাই ফুলকপির মত। ফুলকপি সাদা হলেও এর রং সবুজ। গত চার বছর আগে টুঙ্গিপাড়ার কৃষক শক্তি কির্ত্তনীয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের পিএইচডি ফেলো কৃষিবিদ অসিত বরণ মন্ডলের তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শে বর্ষাকালে ভাসমান ধাপের উপর বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছিলেন। পরে পানি শুকিয়ে গেলে সেই ধাপই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে বসিয়ে সেখানে কৃষি বিভাগ থেকে বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে তিনি সবুজ সবজি ব্রোকলি চাষ করেন। গত কয়েক বছর ভালো ফলন ও মুনাফা পাওয়ায় এবছর তিনি আবারো ১০ বিঘা জমিতে ব্রোকলির চাষ করেন।

কোনো সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই ফলনও হয়েছে ব্যাপক। নতুন সবজি হিসেবে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ব্রোকলির চাষে দশ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করে বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তবে নতুন সবজি অনেকে খেতে না চাইলেও যারা একবার খেয়েছেন তারা আবারো খুঁজে ফেরেন। স্বল্প তাপে সিদ্ধ হওয়া ব্রোকলি বড় শহরের নামী-দামী হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি হয়ে থাকে।
প্রকার ভেদে এক একটি ব্রোকলি পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। স্বাদে সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় ও বেশি দাম পাওয়া পাইকাররা জমিতে এসেই কিনে নিচ্ছে ব্রোকলি। অধিক লাভবান হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক ব্র্রোকলি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

এলাকার কৃষক সুকান্ত বিশ্বাস, রবীন কিত্তনীয়া বলেন, ফলন আর লাভ দেখে আমারা ব্রোকলি চাষ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। কিন্তু, সমস্যা হলো এর বীজ কোথায় এবং কিভাবে তারা পাবেন তা জানেন না। বীজ পেলে এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক আকারে ব্রোকলি চাষ করে জেলার বাইরেও তা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তাই এ সবজির বীজ কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কষকেরা।

পাইকার বাদশা ফকির বলেন, স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা দেখেই এ সবজি কিনছেন। আমার এখানে এসে ব্রোকলি কিনে নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রি করি। এক একটা ব্রোকলি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনে বাজারে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করি। বাজারে বিক্রি করে আমরা লাভবান হচ্ছি।

চাষি শক্তি কির্ত্তনীয়া বলেন, বিগত ৪ বছর আগে আমি কৃষিবিদ অসিত বরণ মন্ডলের সহযোগিতায় ১ হাজারটি ব্রোকলি চারা লাগিয়ে ছিলাম। আমার এতে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি পাইকারীভাবে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করে ভালো লাভবান হয়েছিলাম। এর পর থেকে প্রতিবছরই আমি আমার ওই ১০ কাঠার এক খন্ড জমিতে ব্রোকলি চাষ করে আসছি এবং ভালই লাভবান হচ্ছি।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, এখানকার জমিতে ব্রোকলি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নতমানের এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ফসলের চাষ করে এলাকার কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন। বীজের জন্য কৃষকদেরকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন