ব্রয়লার মুরগিতে দ্বিগুণ লাভ করার কয়েকটি কৌশল

468

ব্রয়লার মুরগি খামারে এলো আর গেল নীতি এখনো বিদ্যমান। তবে সামান্য কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে বুদ্ধিমানেরা দ্বিগুণ লাভ করেন। এমন কৌশলে মুরগি পালন করবেন যাতে কয়েকবার বিক্রির পরও খামারে একই বয়সের মুরগি থাকবে। তাই জেনে নিন ব্রয়লার মুরগিতে দ্বিগুণ লাভ করার কয়েকটি কৌশল:-

খামার ঘর পূর্ব পশ্চিম দিক করে হবে। বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভারো থাকা দরকার। মুরগির ঘরগুলির পরস্পর দূরত্ব হবে ১১-১২ মিটার (৩৫-৪০ ফুট)।

ব্রয়লার মুরগির বাজার ধরবেন যেভাবে:-
ব্রয়লার মুরগির পৃথিবীর জুড়ে এটাই সমস্যা। ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয় বলে বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত। হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল প্রভূতি শৃঙ্খল নিয়ংমে ব্রয়লার বড় মুরগি নিয়ে থাকে। এলাকা যদি খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তবে শৃঙ্খলেরত খুব জোর ৫০ থেকে ১০০টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে।

ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের রকমফেরঃ
(১) পাউডার বা ধুলোর মত
(২) গুলি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং শেষমেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% । অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে । ইওরোপে ৯০% মত খাবার বস্তু ফের গুলির আকারে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকায় ৫০% সংস্থা মুরগির সুষম খাদ্য ফের গুলির আকারে পরিবেশণ করে থাকে।‘

খামার বাড়ি তৈরী করাঃ
ঘরে মুরগি আসার আগে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক ফোকরগুলিতে পোকা মাকড় (উকুন, ছোট বড় এটুলি) মেরে দেওয়া। বাচ্চা মুরগির জায়গা গরম ব্যবস্থা, মুরগি আসবার ৪৮ ঘন্টা আগে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নেওয়া উচিত।
ব্রুডারকে খবরের কাগজ দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। তাপমাত্রা হওয়া দরকার ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)।

ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝেতে জায়গা দিতেঃ বাচ্চা পিছু জায়গা দিতে হবে ৪৫ বঃ সেমি (৭ বাঃ ইঞ্চি)। কখনোই যেন গুচ্ছের মুরগি গুদামজাত করা না হয়। বেশি বচ্চার সংখ্যা হলে পরস্পরকে কামড়া কামড়ি করবে। খাবার এবং পানির জন্য লড়াই করবে ফলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতি হবে ব্যবসার।

খাবার এবং পানির জায়গাঃ
প্রথম কদিন ডিম নেবার কাটুনে কাবার দেওয়া হলে চলবে। বাচ্চা পিছু খাবার জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে (১”)। এই ব্যবস্থা চলবে বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। প্রথম প্রথম খাবারের জায়গা পুরো ভরে দিলে চলবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাবার পর খাবারের জায়গা আধা আধি ভর্তি করতে হবে। এভাবে চললে খাবার নষ্ট কম হবে। দিনে ৪ বার খাবারের জায়গায় দখাবার দিলে চলবে। খাবারের জায়গা বার বার ভরে দিলে মুরগি বাড়ে ভাল।

৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা হবে ৫ সেমি। পরে বেড়ে সেটা দাড়াবে ৭.৫ সেমি (৩”)। সমস্ত দিনভর বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি জুগিয়ে যেতে হবে। পানির জায়গা বেশি সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখতে বাচ্চা ডিমপাড়া মুরগি থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি খায়। গরমকালে, বিশেষ করে গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুুর পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।

শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রাঃ
বাচ্চার ঝাঁক আসবার অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগে ঘরটি পরীক্ষা করতে হবে। পট্রথম সপ্তাহে শাবক ঘরের তাপমাত্রা হবে ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)। শাবক ঘরের তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ফাঃ বা ২.৮০ সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার ওপর।

শীতকালীন পরিচালন ব্যবস্থাঃ
বাচ্চা মুরগির বিছানা ৫” থেকে ৬” গভীর হবে। সুবিধা হলেই বিছানার ওপরে নতুন একটা বিচুলি/ খড়ের আস্তরণ দিয়ে দেওয়া ভাল। সপ্তাহে ঙ্গ বার কাটা কোদাল দিয়ে বিছানা ঘেটে দেওয়া ভাল। বিছানার জলীয় ভাব বেশি হলে চুন দিয়ে নেওয়া উচিত। চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০১মে ২০২২