ব্লাস্টে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় মেহেরপুরের গমচাষিরা

32

কৃষিনির্ভর মেহেরপুরের গাংনীতে গম চাষ বেড়েছে। চাষিরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত বারি-৩৩ ও ডাব্লিউএমআইআর গম-৩ নামের দুটি গমের জাত চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে ফসলটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই দুটি জাতের বাইরে অন্য জাতের গম আবাদ করে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের কারণে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে জেলার অনেক চাষি।

এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগী। গত কয়েক বছর ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। গেল বছর ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল গমের নতুন নতুন জাত আবাদ করে কৃষকরা শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। তবে অনেক চাষি কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে বাড়ির সংরক্ষণ করা বীজ বপন করেছিলেন। এসব চাষিদের গম ক্ষেতে ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। তবে এর পরিমাণ অনেক কম।

গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, অনেক গম ক্ষেত পরিপক্ব হওয়ার আগেই শুকিয়ে গেছে। অথচ কাটা মাড়াই করতে আরও দুই-তিন সপ্তাহ বাকি। গমের মাইজ থেকে শিষ শুকিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। ব্লাস্ট রোগ গমের শিষ শুকিয়ে রস শূন্য করে ফেলেছে। এতে ফসলের আশি শতাংশ ফলন বিপর্যয় ঘটবে। যেখানে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ গম হওয়ার কথা। সেখানে ব্লাস্ট আক্রান্ত জমির গম ফলন পাওয়া যাবে ২ থেকে ৩ মণ।

গাংনীর ঝোড়াঘাট গ্রামের গম চাষি আকমল হোসেন জানান, মাঠে এবার ব্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। তিনিও দুই বিঘা গম আবাদ করেছেন। তবে সপ্তাহ খানেক হবে গম সব হলুদ হয়ে কাটার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। তিনি প্রদীপ জাতের গম চাষ করেছেন।

নওদা মটমুড়া গ্রামের গমচাষি মনিরুল ইসলাম জানান, নিজের উৎপাদিত গম বীজ বপন করেছিলেন। অনুকূল আবহাওয়া থাকার পরও ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। পরিপক্ব না হলেও দেখতে মনে হচ্ছে সব গম ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছেন তেরাইল গ্রামের গমচাষি আজিজুল হক। তিনিও নিজ বাড়ির সংরক্ষিত বীজ বপন করেছিলেন। তার তিন বিঘা জমির গম চাষে খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা।

গাংনী উপজেলার পলাশীপাড়া গ্রামের গমচাষি ইমারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বারি-৩০ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন। গেল বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন। গম চাষ বেশ লাভজনক। এক বিঘা গম আবাদে খরচ হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা। আর পাওয়া যায় ২০ মণ গম। নতুন জাতের গম চাষ করায় কোনো ব্লাস্ট দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে এবং গমচাষিরা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, গমের মূল্য বৃদ্ধি আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৬৫ একর জমিতে গম চাষ হয়েছে। বারি ৩০, ৩৩ ও বিডব্লিউ-৩ জাতের গম চাষ করছেন চাষিরা। চাষিদের সর্বদা নতুন উদ্ভাবিত গমের যে দুটি জাত আবিষ্কার হয়েছে; তা চাষের জন্য পরামর্শ ছাড়াও প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়েছে সার ও গম বীজ। বাজারদর ভালো থাকলে আগামীতে এ অঞ্চলে গমের আবাদ আরও বাড়বে। যারা কৃষি বিভাগের কথা না শুনে বাড়িতে সংগ্রহে থাকা গম বীজ ব্যবহার করেছে তাদের খেতে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে। আগামীতে চাষিরা নতুন জাত আবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।