খামারি ভাইদের অনেকে মুরগির রেশন নিয়ে খুব চিহ্নিত বা কনফিউজড থাকেন। কোন জাতের মুরগির কোন বয়সে কোন ধরনের খাবার দেন, কী পরিমাণে দেবেন বা দিনে কতোবার খাবার দেওয়ার উচিত এসব নিয়ে তাঁরা কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। তাদের এখানে একটি সাধারণ গাইড তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। সুবিধার জন্য বর্ণনার পাশাপাশি টেবিল করেও খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো।
একটি সাধারণ কথা হলো- বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে পাখির রেশন তৈরি করা হয়। রেশন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টায় কোনো পশু বা পাখির গ্রহণ করা খাদ্য। রেশন অবশ্যই পুষ্টি উপাদানে সুষম হতে হবে। যেহেতু মুরগি ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়, তাই ডিমপাড়া মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির জন্য আলাদা রেশন তৈরি করা হয়।
মুরগির জন্য সাধারণ খাদ্য উপকরণ
মুরগির খাদ্য তৈরিতে প্রধানত দানাশস্য (গম, ভুট্টা ইত্যাদি) ও এসব শস্যের উপজাত (ভুসি, কুড়া ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়। রেশন তৈরির জন্য দানাশস্য হিসেবে প্রধানত গম, ভুট্টা ও ভুসি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বসতবাড়িতে পারিবারিক মুরগি পালনে যে কোনো শস্যদানা যেমন- ধান, চাল, খুদ, ডাল, সরিষা ইত্যাদি মুৃরগিকে খেতে দেওয়া হয়। খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান, প্রাপ্যতা ও বাজারদর বিবেচনা করে রেশন তৈরির জন্য নির্বাচন করতে হবে। নিচে পুষ্টি উপাদান বিবেচনায় খাদ্য উপকরণের একটি তালিকা দেওয়া হলো:
পুষ্টি উপাদান খাদ্য উপকরণ
শর্করা: গম, ভুট্টা, ধান, চাল, চালের কুড়াঁ, গমের ভুসি ইত্যাদি।
আমিষ: শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, সয়াবিন মিল রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি।
স্নেহ/চর্বি: বিভিন্ন উদ্ভিজ তৈল যেমন : পাম তৈল, তিলের তৈল, সয়াবিন তৈল ইত্যাদি।
খনিজ পদার্থ: খাদ্য লবণ, ঝিনুক খোসা চূর্ণ, হাঁড়ের গুঁড়া ডিমের খোসা, চুনা পাথর ইত্যাদি
ভিটামিন: শাকসবজি, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ইত্যাদি।
পানি: পরিষ্কার বিশুদ্ধ (জীবাণুমুক্ত) পানি।
লেয়ার মুরগির বয়স অনুযায়ী সাধারণত রেশনের তিনটি পর্যায় আছে
লেয়ার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন : ০-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত; বাড়ন্ত মুরগির রেশন : ৯-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত; ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির রেশন: ২০-৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত;
একই ভাবে ব্রয়লার মুরগিরও কিন্তু রেশনের তিনটি পর্যায় আছে
ব্রয়লার মুরগিকে ৩ প্রকার রেশন সরবরাহ করা হয়:
১. ব্রয়লার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন: ০-২ সপ্তাহ পর্যন্ত
২. ব্রয়লার গ্রোয়ার বা বাড়ন্ত বাচ্চার রেশন: ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত
৩. ব্রয়লার ফিনিশার রেশন: ৫-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত
মুরগির খাদ্য গ্রহণ
এবার আমরা লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ জানবো। খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ মুরগির জাত, বয়স, তাপমাত্রা, আবহাওয়া ও জলবায়ু, খাদ্যের মান, বাসস্থান, খাদ্যের আকার ও পরিবেশনের ওপর নির্ভর করে। এরপরও বিশেষজ্ঞরা একটি আদর্শ মান দিয়েছেন। নিচে সেটির একটি তালিকা দেওয়া হলো:
বয়স লেয়ার মুরগি (গ্রাম) ব্রয়লার মুরগি (গ্রাম)
প্রথম সপ্তাহ ১০ ২৫
দ্বিতীয় সপ্তাহ ২০ ৬৫
তৃতীয় সপ্তাহ ২৫ ১০০
চতুর্থ সপ্তাহ ৩০ ১৩০
পঞ্চম সপ্তাহ ৩৫ ১৬০
ষষ্ঠ সপ্তাহ ৩৭ ১৬৫
সপ্তম সপ্তাহ ৪০ –
অষ্টম সপ্তাহ ৪৫ –
বাড়ন্ত ৭০ –
বয়স্ক ১১৫ –
নোট: অষ্টম সপ্তাহ থেকে ব্রয়লারের ঘর খালি রাখার কারণ হলো- সাধারণত এই সময়ের মধ্য ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করে দেওয়া হয়।
প্রথমে আমরা লেয়ার মুরগির রেশন নিয়ে আলোচনা করবো। সোনালি/লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেমন বয়স, পালনের উদ্দেশ্য, আবহাওয়া, পুষ্টিমান ইত্যাদি। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত স্টার্টার, বাড়ন্ত সময়ে গ্রোয়ার ও ডিম পাড়ার সময়ে লেয়ার ফিড সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যথাযথ পুষ্টিমান জেনে আপনি সহজেই সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরি করতে পারেন।
বিভিন্ন বয়সের লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা (মাত্র তিনটি ধাপের খাদ্য তালিকা দেওযা হলো):
উপাদান প্রারম্ভিক রেশন (%) বৃদ্ধি রেশন (%) লেয়ার রেশন (%)
গম/ভূট্টা ভাঙা ৫২.০ ৪৮.০ ৫০.০
গমের ভূষি ৮.০ ৮.০ ৬.০
চালের মিহিকুঁড়া ১১.০ ১৫.০ ১৫.০
তিলের খৈল ১২.০ ১১.০ ৮.০
শুটকি মাছের গুঁড়া ১৩.০ ১২.০ ১২.০
হাড়ের গুঁড়া ১.৫ ৩.০ ২.৫
ঝিনুক চূর্ণ ২.০ ২.৫ ৬.০
লবণ ০.৫ ০.৫ ০.৫
সর্বমোট ১০০ ১০০ ১০০
নোট: শতাংশের হিসাব বুঝতে যাদের সমস্যা হয় তাদের জন্য একটি সহজ কৌশল: ধরুন আপনি ১০ কেজি রেশন তৈরি করতে চান। তাহলে বিভিন্ন উপাদান আলাদা করে মেপে নিবেন। উপরের তালিকা অনুযায়ী পরিমাণের হিসাব হবে এরকম: গমের ভুসি=(৮×১০)/১০০=০.৮ কেজি বা ৮০০ গ্রাম। অর্থাৎ ১০ কেজি রেশনে লাগবে ৮০০ গ্রাম গমের ভুসি। এভাবে বাকিগুলো হিসাব করুন।
বিভিন্ন বয়সী ব্রয়লার মুরগির একটি আদর্শ রেশন
উপাদান প্রারম্ভিক রেশন (%) বৃদ্ধি রেশন (%)
গম/ভুট্টা ভাঙা ৫০.০ ৫২.০
চালের মিহিকুঁড়া ১৫.০ ১২.০
তিলের খৈল ১২.০ ১০.০
শুটকি মাছের গুঁড়া ১৪.০ ১২.০
সয়াবিন মিল ৮ ৯
সয়াবিন তৈল ০.০ ২.০
হাড়ের গুঁড়া ১.৫ ২.৫
খাদ্য লবণ ০.৫ ০.৫
সর্বমোট ১০০ ১০০
ব্রয়লারের খাবার নিয়ে বিস্তারিত
দেশে এখন পর্যন্ত পোল্ট্রির মধ্যে ব্রয়লার মুরগির পালনের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে একসব মুরগি বিক্রির উপযুক্ত হয়, জনপ্রিয় এটা একটা বড় কারণ।
তবে লাভজনকভাবে ব্রয়লার মুরগি পালনের অন্যতম উপায় হলো খাবারের পেছনে খরচ কমিয়ে আনা। সঠিক ফিড ফরমুলেশন জানা থাকলে খামারি খরচ কমানোর কৌশল বের করে ফেলতে পারবেন।
নিচে ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির একটি সাধারণ তালিকা দেওয়া হলো। তবে মনে রাখতে হবে, ব্রয়লারের জাত বিবেচনায় খাদ্য পুষ্টিমান চাহিদা ভিন্ন হতে পারে।