গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগর ও তার মোহনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এসময় অবসরেই কেটেছে উপকূলীয় জেলেদের। নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহে ইলিশ ধরা পড়েছে। ওই সপ্তাহে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১০৮ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। পরবর্তী ১২ দিনে ইলিশের উৎপাদন কমে হয়েছে ২৬ মেট্রিক টন। কয়েক দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া থাকায় ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না জেলেরা। এ কারণেই ইলিশের উৎপাদন কমেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইলিশ ধরা না পড়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে উপকূলের অর্থনীতিতে।
জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন এসব জেলে। মাছের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এখানকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার অভাব-অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করছে। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করে এখন লোকসান গুনছেন। জেলেদের দাবি অল্পসংখ্যক মাছ নিয়ে বন্দরে ফিরলেও এতে তাদের জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচের টাকাই উঠছে না। একদিকে সাগরে মাছ নেই, অন্যদিকে আবার জ্বালানি তেলের দাম বেশি। এমন অবস্থায় সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারবেন না জেলেরা, এমনটা জানিয়েছেন সমুদ্রগামী ট্রলারের জেলে ও মালিকরা।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ বন্দরে মোট ১৫৮ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্য ১০৮ মেট্রিক টন ছিল ইলিশ। এ সময়ে ১৪ লাখ এক হাজার ৯২০ টাকা রাজস্ব পায় সরকার। পরবর্তী ১২ দিনে ৫৬ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়, এর মধ্য ২৬ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ছিল। এই ১২ দিনে দুই লাখ ৯ হাজার ৫৭০ টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, জেলেরা ঘাটে শতাধিক ট্রলার নোঙর করে রেখেছেন। জেলেরা বৈরী আবহাওয়া থাকায় ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না। দু-একটি ট্রলার সাগরে গেলেও দু-এক ঝুড়ি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন। মাছ না থাকায় বন্দরে অলস সময় পার করছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। নেই হাঁক-ডাক, কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণ কেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই।
মৎস্য বন্দর ঘুরে রফিকুল ইসলাম, মো. লিটন, জুয়েলসহ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্রে ইলিশ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। দিন-রাত জাল ফেলে যে কয়টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও হয় না। অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছেন না।
বন্দরের কয়েকটি ফিশিং ট্রলার মাঝিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম সপ্তাহ মোটামুটি ভালো ইলিশ ধরা পড়েছে। এরপর বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হলে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে না। তারা বলেন, তারা মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরেন। মাছ ধরা না পড়ায় এখন ওই টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েক দিন ইলিশ ধরা পড়লেও এখন সাগরে ইলিশ মিলছে না। কয়েক দিন পরপর আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিএম মাসুদ শিকদার বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম সপ্তাহ ইলিশের উৎপাদন বেশ ভালোই ছিল। এরপর আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় প্রায় ১২ দিন ইলিশের উৎপাদন একবারেই কম। এখন ভারী বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলের নদ-নদীতে এবং ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আশা করছি, আবহাওয়া ঠিক হলে সামনের দিনগুলোয় ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।