‘ভারতীয় গরু না আসলে বিনোয়োগ উঠে আসবে’

406

গরুর খামার

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে যশোর জেলায় সর্বমোট ৫৭ হাজার ১শ ৭৬টি পশু পালন করা হয়েছে। যা চাহিদার চেয়ে ২ হাজার ১শ ৭৬টি বেশি। জেলার আটটি উপজেলার ১১ হাজার ৫শ খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, এ বছর যশোরে মোট পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার। এর মধ্যে শুধুমাত্র গরুর চাহিদা আছে ২৮ হাজার ৫০০টি। ছাগলসহ অন্যান্য পশুর চাহিদা রয়েছে ২৬ হাজার ৫০০টি।

জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বমোট ১১ হাজার ৩৩৯টি পশু পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ৪ হাজার ৮৪৫টি, বলদ ১ হাজার ৩২৭টি, গাভী ৪৮১টি, ছাগল ৬ হাজার ৬৫৩টি, ভেড়া ৪ হাজার ১০৩টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৬৬টি।

ঝিকরগাছায় পালন করা হচ্ছে সর্বমোট ৬ হাজার ২২৭টি পশু। এরমধ্যে ষাঁড় ৩ হাজার ১১২টি, বলদ ১৬৯টি, গাভী ৮৯টি, ছাগল ৩ হাজার ৩৭০টি এবং ভেড়া আছে ২ হাজার ৮৫৭টি।

শার্শায় পালন করা হচ্ছে ৫ হাজার ৮৫টি পশু। এরমধ্যে ষাঁড় ১ হাজার ৩৭৮টি, বলদ ৬৫৯টি, গাভী ৬০৫টি, ছাগল ১ হাজার ৮৮৭টি এবং ভেড়া রয়েছে ৫৫৬টি।

মণিরামপুরে মোট ৪ হাজার ৬২০টি পশুর মধ্যে ষাঁড় ২ হাজার ১৮৮টি, বলদ ৯২টি, গাভী ২৬টি, ছাগল ২ হাজার ২৯৪টি এবং ভেড়া আছে ২০টি।

কেশবপুরে সর্বমোট ৮ হাজার ৩৪৬টি পশুর মধ্যে ষাঁড় ৩ হাজার ৫৪টি, বলদ ৩৭৫টি, গাভী ১৯০টি, ছাগল ৪ হাজার ৫৯২টি এবং ১৩৫টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে।

অভয়নগরে সর্বমোট ৩ হাজার ৩৭৯টি পশু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১ হাজার ৩০৮টি, বলদ ৩০১টি, গাভী ৯২টি, ছাগল ৩৬৬টি এবং ১২টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে।

বাঘারপাড়ায় সর্বমোট ৬ হাজার ৭২০টি পশু আছে। এর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ৩ হাজার ৫৬৮টি, বলদ ৬৭৪টি, গাভী ৫০৭টি, ছাগল ১ হাজার ৯৫৩টি এবং ১৮টি ভেড়া রয়েছে।

এছাড়া চৌগাছায় মোট ১১ হাজার ৬০টি পশুর মধ্যে ষাঁড় ৩ হাজার ৯৪৬টি, ১ হাজার ৩৫৩টি বলদ, গাভী ১ হাজার ৩৪টি, ছাগল ৪ হাজার ৬৯৮টি এবং ভেড়া রয়েছে ২৯টি।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি পালন করা হচ্ছে ষাঁড় এবং সবচেয়ে কম পালন করা হচ্ছে ভেড়া। সবচেয়ে বেশি পশু পালিত হচ্ছে সদর উপজেলায়। আর সবচেয়ে কম পালন করা হচ্ছে অভয়নগরে।

এবছর জেলায় চাহিদার তুলনায় ২ হাজার ১৭৬টি পশু অতিরিক্ত পালন করায় যশোরে কুরবানিযোগ্য পশুর কোনও ঘাটতি হবে না বলে জানায় জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, এবছর এখনও পর্যন্ত পশুর হাটের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে গত বছর জেলায় মোট ২১টি পশুর হাট ছিল। এবছরও হাটের সংখ্যা সেই পরিমাণে থাকতে পারে।

তিনি জানান, প্রতিটি হাটে একটি করে ভেটেরিনারি টিম থাকবে। যে টিম হাটে গিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। বর্তমানে জেলার তালিকাভুক্ত সব খামারগুলোতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন পশুর নিবিড় পরিচর্যা পর্যবেক্ষণ করছেন। যাতে করে ক্ষতিকর কোনও রাসায়নিক পশুর দেহে প্রবেশ করিয়ে মোটাতাজাকরণ করা না হয়।

ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, এক সময় পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে সেটি আর হচ্ছে না।

এদিকে, পশু খামারি, বিক্রেতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যশোরের উল্লেখযোগ্য পশুহাটের মধ্যে চৌগাছা, সাতমাইল, উপশহর, ঝিকরগাছা, মণিরামপুর, কেশবপুর, খেদাপাড়া, নাভারণ, বাগআঁচড়া, ছুটিপুর, খাজুরা, চাড়াভিটা, নারকেলবাড়িয়া, রূপদিয়া ও পুড়োপাড়া অন্যতম। এসবের বাইরে অস্থায়ী কিছু হাট বসে থাকে। যেগুলো কুরবানি শেষ হওয়ার পরে আর থাকে না।

দেশীয় খামারিদের আশা, তারা এবার ভালো দাম পাবেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন ভারতীয় গরুর চাপ না থাকা। তাদের ভাষ্য, শেষ পর্যন্ত যদি ভারতীয় পশু বৈধ-অবৈধ পথে যশোরের হাটগুলোতে না আসে তাহলে তাদের বিনিয়োগ উঠে আসবে। লাভবান হতে পারবেন তারা। আর যদি ভারতীয় পশুর আধিক্য হয় তা হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন খামারিরা।
আলমগীর, সাহেব আলী, আব্দুস সালাম, কামরুল ইসলাম, আব্দুল করিম নামে কয়েকজন ক্রেতা বলেন, অনেক দিন ধরে দেশীয় পশু কুরবানি করে থাকি। তাতে তো কোনও সমস্যা হয় না। তা হলে কেন ভারতীয় পশু আসার সুযোগ দেয়া হবে। বরং ভারতীয় পশু আসলে দেশীয় খামারীরা পশু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

খামারীরা বলছেন, আগস্টের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কুরবানির পশু ওঠা শুরু করবে। ঈদের সপ্তাহ খানিক বাকি থাকতে পশুর হাটগুলো জমজমাট হবে যা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পশু কেনাবেচা করবেন খামারি এবং ব্যবসায়ীরা। সূত্র: নেট

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন