ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখবে। আর এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রতি কেজি ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ উঠে গেছে ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় কম দামে পেঁয়াজ কিনতে গ্রাহকরা বাজারে আসতে শুরু করেছেন। তবে অনেক গ্রাহক ১৫০ টাকা কেজি দর হওয়ায় ফিরেও যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের বাণিজ্য অধিদপ্তর দেয়া এক আদেশে, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মূলত ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশটির সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রতি টন নূন্যতম ৮০০ ডলার বেঁধে দিয়েছিল ভারত। সে নির্দেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তবে তার আগেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিল দেশটি।
এদিকে সকালে স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বাড়তে থাকে পেঁয়াজের। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
কারওয়ান বাজারের আড়তদার আজাদ মোল্লা জানান, বর্ডারে পেঁয়াজ বন্ধ থাকার কারণে দামতো বাড়বেই। শুধু দেশি পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই আগামীতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে হতে পারে।
কারওয়ান বাজারে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সন্ধ্যায় বেশিরভাগ পাইকারের কাছেই দেশি পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। অথচ গতকাল সকালেও এ পেঁয়াজ ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ১২০ থেকে টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বিকালে, যা বিকালে ১৫০ টাকায় উঠে। অথচ সকালে এ পেঁয়াজ ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। এমনকি পাকিস্তানি ও চিনের বড় পেঁয়াজগুলো ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সন্ধ্যায়, যেগুলো সকালে মাত্র ৭০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছিল।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের রঞ্জু মিয়া বলেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধের ঘোষণায় দেশের বাজারের প্রতি ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সকাল থেকে সন্ধার মধ্যে এইটুকু সময়ের মধ্যে ৪০-৫০ টাকা কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে। একটু পর এই দাম নাও থাকতে পারে। আর দেশি পেঁয়াজ তো আগেই শেষ হয়ে গেছে, যা ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
বাজারে থাকা পুরোনো পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে এ বিষয়ে কোনো আড়তদার মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আড়তদার বলেন, বর্ডারে পেঁয়াজ বন্ধের ঘোষণায় আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিতে বলেছেন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেই ভারতের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় উঠেছে। এখানে আড়তদারদের কিছু করার নেই।
প্রসঙ্গত, ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশনা গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ডিজিএফটি’র বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে, তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অনুরোধের পর কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেয়া প্রদত্ত অনুমতির ভিত্তিতে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, নিম্নলিখিত তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করে পেঁয়াজের চালান রপ্তানি করার অনুমতি দেয়া হবে।
প্রথমত, এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগেই রপ্তানির জন্য যেসব পেঁয়াজ লোড করা শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, যেখানে শিপিং বিল জমা দেয়া করা হয়েছে এবং পেঁয়াজ লোড করার জন্য জাহাজগুলো ইতোমধ্যে বার্থ করেছে বা পৌঁছে গেছে ও ভারতীয় বন্দরে নোঙর করেছে এবং এই বিজ্ঞপ্তির আগে তাদের রোটেশন নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির আগে পেঁয়াজ লোড করার জন্য জাহাজের নোঙর/বার্থিং সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের নিশ্চিতকরণের পরেই এই ধরনের জাহাজে লোড করার অনুমোদন জারি করা হবে।
তৃতীয়ত, যেখানে এই বিজ্ঞপ্তির আগে পেঁয়াজের চালান কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে/যেখানে পেঁয়াজের চালান এই বিজ্ঞপ্তির আগে রপ্তানির জন্য কাস্টমস স্টেশনে প্রবেশ করেছে এবং কাস্টমস স্টেশনের সংশ্লিষ্ট কাস্টোডিয়ানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে এই প্রজ্ঞাপন জারি করার আগে শুল্ক স্টেশনে প্রবেশের তারিখ এবং সময় স্ট্যাম্পিংয়ের যাচাইযোগ্য প্রমাণ থাকতে হবে।
এর আগে গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছিল ভারত। তারও আগে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং রপ্তানির লাগাম টানতে গত আগস্টে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সরকার পেঁয়াজের রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সেই সময় জানানো হয়, পেঁয়াজের নতুন এই রপ্তানি শুল্ক আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।