ভার্মি কম্পোস্ট জৈবসার জনপ্রিয় হচ্ছে পঞ্চগড়ে

1190

কেচো

পঞ্চগড় : জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চরতিস্তাপাড়া গ্রামে কেঁচো দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভার্মিং কম্পোস্ট সার। কেঁচো দ্বারা উৎপাদিত সার ওই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ এখন কেঁচো চাষের মাধ্যমে কম্পোস্ট সার তৈরিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন এবং তাদের আয়ের পথ সুগম হয়েছে। নিজেদের ফসলে ব্যবহারের পাশাপাশি কম্পোস্ট সার বিক্রি করে তারা জীবন-জীবিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।

ফসল ও মাটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৮টি গুণবিশিষ্ট পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষকের উৎপাদন খরচ কমছে,অন্যদিকে তেমনি জমির উর্বরা শক্তি বাড়ছে।

দেবীগঞ্জ উপজেলার চরতিস্তাপাড়া গ্রামের কৃষিবিদ জিকরুল হক বছর দুয়েক আগে তার নিজ বাড়িতে ১০টি চাড়িতে ১ হাজার কেঁচো দিয়ে জৈব সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। জিকরুল হক জানান, গরুর গোবর সংগ্রহ করে ছায়াযুক্ত স্থানে গর্তে পলিথিন বিছিয়ে ১০-১২ দিন রাখতে হয়। পরে তা তুলে ছাঁকুনিতে চেলে মাটির তৈরি চাড়িতে কেঁচো দিয়ে আরো ১৫-২০ দিন চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখলেই ব্যবহার উপযোগী সার হয়ে যায়। এরপর ছাঁকুনিতে চালার মাধ্যমে কেঁচো আলাদা করলেই পুরোপুরি ভার্মিং কম্পোস্ট তৈরি হয়। এ সার তিনি নিজের ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করেন। পাশাপশি এ পদ্ধতিতে জৈব সার উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তার ৭৫টি চারিতে ৫ লাখ কেঁচো রয়েছে। প্রতি কেজি ভার্মিং কম্পোস্ট সার বাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ।

তিনি আরো জানান, সার বিক্রির পাশাপাশি তার ফার্ম থেকে কেঁচো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কেঁচো ১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিকে সার উৎপাদন হচ্ছে, অন্যদিকে কেঁচোর বংশ বৃদ্ধিও বাড়ছে। এতে বাড়তি আয়ের পথও খুঁজে পেয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ বাণিজ্যিকভাবে এই প্রক্রিয়ায় জৈব সার উৎপাদন করার জন্য জিকরুলের ফার্ম থেকে কেঁচো কিনেছে।

উপজেলার চিলাহাটী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির আলী জানান, রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারে জমির উর্বরা শক্তি যখন হুমকির মুখে তখন এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ সারের ৮ গুণাগুন মাটির উর্বরা শক্তি ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি ঘটায়। কেঁচো সার দিয়ে শুধু মরিচ ক্ষেত চাষ করেছি। এতে অন্যদের চেয়ে আমার জমিতে মরিচের উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হয়েছে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, ভার্মি সার প্রয়োগের ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এতে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি এ সার পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।কৃষিবিদ জিকরুলের কেঁচো চাষের মাধ্যমে জৈবসার তৈরিতে যে অবদান রাখছেন তা অবশ্যই মূল্যায়নযোগ্য। জৈব সারের মাধ্যমে কৃষকরা একদিকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। অন্যদিকে মাটি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বলে কৃষি অফিসার মনে করেন। বাসস

Rafid

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন