দামি ফল হিসাবে পরিচিত আঙ্গুর বাংলাদেশের আবহাওয়া তে অনেক উপযোগী। কিন্তু পরিপূর্ণ ধারনা না থাকার কারনে আমাদের চাষি ভাইরা এটা ভাল ভাবে ফলাতে পারে না।
প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক। আর এ কথাটি আমাদের জন্য বেশ কার্যকর এ কারণে যে এই ফলটি আমরা এতদিন ফলাতে পারিনি। পুরোটাই আমদানি করতে হয়। উচ্চমূল্যের কারণে বরাবরই সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।
কখনো কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কালেভদ্রে সাধারণ পরিবারের মানুষ আঙ্গুর খায়। কিন্তু আমাদের মাটি ও জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঙ্গুর চাষ হলেও সেটা পারিবারিক বাগানের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি একরে ৪৩৬টি আঙ্গুর গাছ লাগানো যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতি গাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসাবে মোট ১৭৪৪ কেজি আঙ্গুর এক একরে উৎপাদন করা সম্ভব।
হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষকের বসতভিটার ৯ বর্গমিটার জায়গায় ৪টি গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি ফলনের মাধ্যমে ১৬ কেজি আঙ্গুর উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষের চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯০ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে।
আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন দোআঁশযুক্ত লালমাটি, জৈব সারসমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভালো হয়।
জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরি কীভাবে করবেন।
ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন । তারপর ৭০দ্ধ ৭০দ্ধ ৭০ সেন্টিমিটার মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
সংগৃহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপণ করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস। আঙ্গুর যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না হলে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩ বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
পটাশ সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গাছ বেড়ে ওঠার জন্য গাছের গোড়ায় শক্ত কাঠি দিতে হবে এবং মাচার ব্যবস্থা করতে হবে- সে মাচায় আঙ্গুর শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।
গাছের কান্ড ছাঁটাই রোপণের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই করতে হবে। অধিকাংশ খামারিরই প্রশ্ন- গাছে ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। এর কারণ কী?
কান্ড ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয়।
গাছ রোপণের পর মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কান্ড ছাড়া অন্যসব পাশের শাখা ভেঙে ফেলতে হবে। প্রথম ছাঁটাই মাচায় কান্ড ওঠার ৩৫-৪৫ সেন্টিমিটার পর প্রধান কান্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে ওই কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে চারটি শাখা গজায়।
দ্বিতীয় ছাঁটাই গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫-২০ দিনের মাথায় ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন ৪টি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যেখানে থেকে আরো আগের মতো দুটি করে ১৬টি প্রশাখা গজাবে।
তৃতীয় ছাঁটাই এই ১৬টি প্রশাখা ১৫-২০ দিনের মাথায় ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখার দুদিকে দুটি করে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা গজাবে।
অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই যে ৬৪টি শাখা গজাবে এমন কোনো কথা নেই। এই শাখার গিরার মধ্যেই প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুল মটরদানার মতো আকার ধারণ করে আঙ্গুর ফলে রূপান্তরিত হবে।
প্রথম বছর ফল পাওয়ার পর শাখাগুলোকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা রেখে ফেব্র“য়ারি মাসে ছেঁটে দিতে হবে ফলে বসন্তের প্রাক্কালে নতুন নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে।
এই পদ্ধতি ৩-৪ বছর পর্যন্ত চলবে এবং ফলের স্থিতি লাভ করবে। পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ না হলেও ৩০ বছর ফলন দিতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২১জুলাই২০