ভিয়েতনাম নারিকেলের আন্তঃপরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনা

443

১ম মাস : চারা রোপণের পর চারার চারপাশের মাটি ভালোভাবে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে। এরপর সেচ দিতে হবে। নারিকেল ফসলের জন্য সেচ ও নিষ্কাশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন সেচ এবং বর্ষার সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২০ দিন পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ছত্রাক জাতীয় রোগ থেকে মুক্তির জন্য ১৫ দিন পরপর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

* ২য় ও ৩য় মাস : নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ সেচ প্রদান করতে হবে। পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ছত্রাক রোগ দমনে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। নিয়মিত মাটি নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।

* ৪র্থ মাস : নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে ও আগাছা দমন করতে হবে। শিকড় বৃদ্ধির জন্য মাটির আর্দ্রতা সবসময় ৪০% থেকে ৮০% এ রাখতে হবে। এ মাসে প্রথম ডোজের সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা প্রতি ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম এমওপি এবং ১০ কেজি গোবরজাত সার ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে। এ সময় চারা থেকে পাতা ছড়ানো শুরু হবে।

* ৫ম ও ৬ষ্ঠ মাস : নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে এবং আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ে গণ্ডার পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

* ৭ম মাস : অন্যান্য মাসের মতো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। এ সময় থেকে গাছের গোড়া থেকে ১ ফুট দূরত্বে সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে।

* ৮ম মাস : নির্ধারিত মাত্রার পানি সেচ এবং বালাইনাশকের ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মাসে সারের ২য় ডোজ দিতে হবে। চারা প্রতি ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম এমওপি এবং ১০ কেজি গোবরজাত সার ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দেয়া প্রয়োজন।

* ৯ম মাস : এ সময়ে ছত্রাকের আক্রমণ কমতে থাকে বিধায় ছত্রাকনাশকের ব্যবহার কমানো যেতে পারে। তবে পাতা কাটা পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।

* ১০ম ও ১১তম মাস : যথাযথ বৃদ্ধির জন্য গাছের গোড়ার মাটির আর্দ্রতা ৪০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখতে হবে। রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।

* ১২তম মাস : এ মাসে ৩য় সারের ডোজ দিতে হবে। পূর্বের মতো চারা প্রতি ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম এমওপি, ৫০ গ্রাম বোরন এবং ১০ কেজি গোবরজাত সার ভালোভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে। গাছের বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রাখলে দেখা যাবে যে, এ সময়ে গাছের উচ্চতা ১২.৫ ফুট, গোড়া ২.৯ ফুট এবং পাতার মাপ হবে ৯.৫ ফুট। পাতার সংখ্যা হবে ১৫ টি।

* ১৩তম ও ১৪তম মাস : সাধারণ পরিচর্যা করতে হবে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

* ১৫তম মাস : এ মাসে পরিচর্যার ক্ষেত্রে গাছের বেসিন এরিয়া বাড়াতে হবে ৫ ফুট পর্যন্ত এবং ৪র্থ ডোজের সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছপ্রতি ৫৪০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫০ গ্রাম এমওপি সার এবং ২০ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে।

* ১৬তম মাস : এ মাসে নারিকেল গাছের ট্রাঙ্ক দেখা যেতে পারে। তাই এ সময়ে বিশেষ যতœ নিতে হবে। বিটলের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য গাছ প্রতি বাসুডিন (১০জি) ২০ গ্রাম, নিম কেক ও নদীর বালুর সাথে মিশিয়ে গাছের ৩-৪টি পাতার খাঁজের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। পরিমিত সেচ প্রদান করতে হবে।

১৭তম মাস : গাছের গোড়া নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। পরিমিত সেচের মাধ্যমে মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখতে হবে।

* ১৮তম মাস : এ মাসে ৫ম ডোজের সার দিতে হবে। গাছপ্রতি ইউরিয়া ৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ১২৫০ গ্রাম, ৮৫০ গ্রাম এমওপি এবং ১০০ গ্রাম বোরন প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

* ১৯তম মাস : পরিমিত সেচ এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

* ২০তম মাস : গাছের গোড়ার চারপাশের ১ ফুট উঁচু করে সবুজ লতাপাতা জমিয়ে পচাতে হবে যাতে মাটির হিউমাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এতে গাছের বৃদ্ধি যথাযথ হবে। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।

* ২১তম মাস : এ মাসে ৬ষ্ঠ ডোজের সার দিতে হবে। গাছ প্রতি ইউরিয়া ৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ১২৫০ গ্রাম এবং ৮৫০ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

* ২২তম মাস : গাছের এ বয়সে বেসিনের আকার ৬ ফুট পর্যন্ত বাড়াতে হবে। এর মধ্যে গাছের গোড়ার ২ ফুট স্থান অব্যবহৃত রাখতে হবে এবং বাকি ৪ ফুটের মধ্যে সার ও সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

* ২৩তম মাস : এ সময়ে গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। যথাযথ সার ও সেচ দিতে হবে। গাছের গোড়ার ২ ফুটের মধ্যে যাতে পানি ও সার দেয়া না হয় তা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

* ২৪তম মাস : এ বয়সে নারিকেল গাছ পূর্ণ বয়স্ক গাছ হিসেবে ধরা যায়। তাই এ সময়ে পরিপূর্ণ মাত্রার সার ব্যবহার করতে হবে। ৭ম ডোজ হিসেবে গাছ প্রতি ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০০ গ্রাম এবং ১১০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এ সময়ে কিছু গাছে ফুল আসতে শুরু হবে এবং ২৮-৩০ মাসে প্রায় সব গাছে ফুল আসবে। ফুল আসার পর মুকুল ঝড়ার পরিমাণ বেশি হলে ১০ গ্রাম-লিটার হিসেবে বোরাক্স সার স্প্রে করতে হবে।

* গাছের ২৪ মাস বয়সের পর প্রতি গাছে বছরে ৫.৫ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি এবং ৭ কেজি এমওপি সার ও ৫০ কেজি গোবর সার প্রতি বছর চার ভাগে ৩ মাস পরপর গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সারের ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ১৫০ গ্রাম করে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর এবং বোরন সার ১০০ গ্রাম করে প্রতি বছর ২ বার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১এপ্রিল২০