ভুট্টা চাষ করুন সাবধানে

1927

observerbd.com_1548674166

বকুল হাসান খান, আই পিএম
ভুট্টা এখন আর মুরগীর খাদ্য নয়, মানুষের অন্যতম প্রয়োজনীয় দানা শস্য । ভূট্টার গাছ থেকে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। উন্নত পুষ্টিমান ও বহুবিধ ব্যবহারের কারণে ভুট্টার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে । সঙ্গত কারণে আধুনিক পদ্ধতিতে ভুট্টার চাষ আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আপনিও করতে পারেন ভুট্টা চাষ। আপনার পাশে আর পতিত কিংবা অনাবাদি জমি না রেখে ভূট্টা চাষে ব্যস্ত হয়ে পরুন।

জমি নির্বাচন : পানি জমে না এমন বন্যামুক্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে ভুট্টা চাষ করা যায়। সাধারলত পলিযুক্ত দোআঁশ, বেলে দোআঁশ এবং এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভুট্টা চাষ ভালো হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুতে সারা বছরই ভুট্টা চাষ করা সম্ভব। তবে ররি মৌসুমে ভুট্টা চাষ করলে আর্থিক ফলন পাওয়া যায়। রবি মৌসুমে মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রাহায়লেণর শেষ পর্যন্ত এবং খরিপ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

জাত নির্বাচন : বাংলাদেশের আবহাওয়ায় হাইব্রিড ও দেশি উভয় ভুট্টা চাষ করা যায়। হাইব্রিড জাতে ফন বেশি হওয়ায় দেশে আবাদকৃত মোট জমির ৯৫ ভাগেই হাইব্রিড জাতের চাষ হয়ে থাকে। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে পেসিফিক-১১, পেসিফিক-৬০, পেসিফিক-৯৮৩, পেসিফিক-৯৮৪, পেসিফিক-৯৮৮, ৯০০ এম, মুক্তা, এনকে-৪৬, পায়োনিয়র ৩০৬৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩ ইত্যাদি উলে-খযোগ্য। দেশি জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্ণালি, শুভ্রা, মোহর, খৈ ভুট্টা, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭ ইত্যাদি। বীজ বপনের আগে বীজের গজানোর হার ৯০ ভাগের ওপর হলেই ওই বীজ কেনা উচিত। বীজ বপনোর অন্তত এক সপ্তাহ আগে বীজ গজানোর ক্ষমতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

জমি তৈরি : চাষের আগে জমিতে জৈব সার সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। মাটিতে জো থাকা অবস্থায় ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে মাটি তৈরি করতে হবে। জমি সমান করার পর সেচ প্রয়োগ ও পানি নিস্কাশনের জন্য জমির চার পােিশ নালা করতে হবে। ভুট্টা বীজ লাইনে বুনতে হয়। জমির দু’পাশে রশি বেঁধে কোদাল বা ছোট হাত লাঙ্গলের সাহায্যে এক থেকে দুই ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গভীর করে এই লাইন করতে হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি বা পৌনে দু ’হাত। ওই লাইনের মধ্যে ৮-১০ ইঞ্চি বা আধা হাত পরপর একটি করে বীজ দিয়ে লাইনটি ভালোভাবে ভরাট করতে হবে।

সেচ ও সার প্রয়োগ : জমিতে পরিমিত রস না থাকলে বীজ বোনার পর হালকা সেচ দিতে হবে। চারাগাছের পাতা ৩-৫টি হলে প্রথম সেচ দিতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেচ কিংবা বৃষ্টির পানি গাছের গোড়ায় যেন ১০-১২ ঘন্টা জমে না থাকে। ভুট্টা গাছের পাতা ৮-১০টি হলে প্রথম দফায় একরপ্রতি ৭৫ কেজি বা শতাংশে তিন পোয়া ইউরিয়া সার দু’সারির মাঝখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। গাছের মাথায় ফুল আসার আগে সমপরিমাণ সার গাছের গোড়ায় লাইন বরাবর ছিটিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার পরই নালা ভর্তি করে সেচ দেয়া উচিত। সাধারণত বিকাল বেলা সার ও সেচ দেয়া উত্তম।

আগাছা ও পোকামাকড় দমন : ভুট্টা গাছে সাধারণত কাটুই পোকা, পাতা খেকো লেদা পোকা, জাব পোকা ও মাজরা পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। চারাগাছে কাটুই পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দেয় রাতের বেলা। কাটুই পোকা কচি গাছের গোড়া কেটে দেয় এবং দিনে গাছের গোড়ায় হালকা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর্যন্ত এই পোকার আক্রমণ বশি হয়। এজন্য মাটি আলগা করে দেখতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে জমিতে ভাসিয়ে সেচ দিতে হয়। তখন এ পোকা মাটির ওপর উঠে আসে ও রোদের তাপে মারা যায়। ভুট্টার জমিতে যে কোনো পোকামাকড় দমনে অনুমোদিত ও সঠিকমাত্রায় কীটনাশক ¯েপ্র করা যায়।
পরিচর্যাঃ- ভুট্টা সুমিষ্ট হওয়ার বীজ লাগানোর ১০-১২ দিন পর্যন্ত ভুট্টা ক্ষেত অনিষ্টকারী পাখি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ সময় পাখি তাড়ানোরে ব্যবস্থা করতে হবে। আর ঘাসজাতীয় আগাছা ক্ষেত থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে। ভুট্টা দানা বাঁধার সময় জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস প্রয়োজন, তাই এসময় সেচ দেয়া অত্যান্ত জরুরী।

কৃষকের কথাঃ- হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়ার কৃষক নুরুল আলম জানান, এ বছর আমি ভূট্টা করে প্রচুর লাভবান হয়েছি। ভূট্টা চাষ ধান চাষের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান। কৃষি অফিসারের কথায় এবার পরীক্ষামুলকভাবে চাষ করে আমি ভূট্টা চাষের সবদিক বুঝতে পেরেছি।

সংগ্রহ ও ফলনঃ- ফলন ভালো হলে একরে ১০০ থেকে ১১০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩ফেব্রু২০২০