ভেন্না গাছ থেকে উৎপাদিত তেলের যত উপকারিতা

1981

unnamed
ভেন্নার বৈজ্ঞানিক নাম Ricinus communic, ভেন্না তেলের অপর নাম ক্যাস্টর ওয়েল বা রেড়ির তেল। ভেন্না গাছ গজানোর পর দেখতে অনেকটা পেপে গাছের মতো। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের তালিকায় ভেন্না একটি পরিচিত নাম। কোনো কোনো এলাকায় বলা হয় ভেরেন্ডা। একসময় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রায় এলাকার ঝোপঝাড় ও বাড়িঘরের আশপাশে প্রচুর ভেন্না গাছ দেখা যেত। ভোজ্যতেল হিসেবে এর চাহিদাও কম ছিল না।

ভেন্না আমাদের দেশের গরিব মানুষের ভোজ্যতেল। এ ছাড়া রোগব্যাধি নিরাময়ে এ তেল ব্যবহার করা হয়। ভেন্নার গাছ জ্বালানি হিসেবে, বাড়ির আঙ্গিনার বেড়া ও সবজির মাচায় ব্যবহার করা যায়।

উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি ভেন্নার জন্য খুবই উপযোগী। এ অঞ্চলে ভেন্না চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ অঞ্চল থেকে ভেন্না হারিয়ে যেতে বসেছে।

বর্তমানে সয়াবিন তেলের প্রচলনে আগের মতো ভেন্নার কদর নেই। অথচ সয়াবিন তেলের তুলনায় ভেন্না তেলের পুষ্টিমান কোনো অংশেই কম নয়। উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সয়াবিন তৈলের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে যাবে।

সবচেয়ে বড় পাতা জাতের উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি হলো ভেন্না গাছ। গাছগুলো আট থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গজানোর সময় কোনো শাখা-প্রশাখা থাকে না। একটু বড় হলে শাখা-প্রশাখায় চারদিক ছড়িয়ে যায়।

ভেন্না বিনা চাষেই বর্ষাকালে গজায় এবং হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে। অনুকূল পরিবেশ পেলে সারা বছরই ফল ধরে। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বোম্বাই ও স্থানীয় জাতের ভেন্নাই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।

গাছগুলো সাদা ও লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। গিটাযুক্ত গাছের পাতায় আট-দশটি কোনাযুক্ত পাতা মানুষের হাতের মতো ছড়ানো থাকে। পাতাগুলো ছয় থেকে আট ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।

গাছের বয়স দুই থেকে তিন মাস হলে শাখায় শাখায় ফুলের কাঁদি হয়। প্রতিটি কাঁদিতে দেড় থেকে দুই শতাধিক পর্যন্ত ফল ধরে। প্রত্যেক ফলে তিন-চারটি বীজ দানা হয়। কিছু দিন পর কাঁদিগুলো পাক ধরলে হাল্কা কালচে বর্ণের হয়। তখন গাছ থেকে কাঁদিসহ ফল ছাড়িয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়।

বীজগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে সরিষা, তিল অথবা তিসির সাথে মেশিনে ভাঙিয়ে ভোজ্যতেল তৈরি করা যায়। মেশিনে না ভাঙিয়ে পাতিলে পানি নিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে পাটায় পিষে পুনরায় পানিতে জ¦ালিয়েও ভেন্নার তেল তৈরি করা যেতে পারে।

হাউলিকেউটিল গ্রামের আবদুর রহমান জানান, আড়াই কেজি ভেন্নার বীজে এক কেজি ভোজ্যতেল হয়। এ তেলে রান্না করা তরকারী সুস্বাদু হয়।

ছোটভাকলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মোল্লা বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি বাণিজ্যিকভাবে ভেন্নার আবাদ করতে আগ্রহী।

নলডুবির কৃষক নায়েব আলী, আবদুল মান্নান, ইয়ার হোসেন, জালাল শেখসহ একাধিক কৃষক ভেন্নার বিভিন্ন গুণের বর্ণনা দেন। দেওয়ান পাড়া গ্রামের মিশুক মোল্লা জানান, আগের দিনে বেপারীরা ধামায় করে গ্রাম থেকে ভেন্না ওজনে কিনে নিয়ে যেত। এখন তাদেরও দেখা মেলে না।

ভেন্না তেলের উপকারিতা সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, এ তৈল তরকারি রান্না ও পিঠা তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। গরম ভাতের সাথে খেলে খাবারে রুচি বাড়ে। এ তেল নিয়মিত ব্যবহারে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। শরীরের যেকোনো কালো দাগ বা আগুনে পোড়া দাগ মিলাতে এ তেল বিশেষ কার্যকরী।

কৃষি কাজের প্রয়োজনে পুকুর বা ডোবা-নালার নোংরা পচা পানিতে নামার আগে এ তেল শরীরে মেখে নিলে শরীর চুলকায় না এবং জোঁক কামড়ায় না। এর কাঁচা বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে বিশেষ কার্যকর। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগলেও তেল গরম করে বুকে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।

এক তথ্যে জানা যায়, ভারতের মেঘালয়, আসামের মেন্দিপাথার, ময়রাপুর, কারবিলং কৃষ্ণাই অঞ্চলের গারো ও মনিপুরীরা রেশম শিল্পে গুটি পোকার খাদ্য হিসেবে ভেন্না গাছের পাতা ব্যবহার করে।

আর আমাদের দেশে তুঁত গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। আরেক তথ্যে জানা যায়, উন্নত কয়েকটি দেশে ভেন্নার তেল বায়োডিজেল বা বায়োফুয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

খাদ্যমান, ভেষজ গুণ, সহজ চাষ, খরচ কমসহ নানা দিক বিবেচনা করে কৃষকেরা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভেন্না এ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০মার্চ২০