টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের গাছপাড়া কামারনওগাঁ বিল। বর্তমানে বিলের পানি শুকিয়ে পুরো জায়গাটা এখন আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে। ক’দিন পর এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে। বর্ষার মৌসুমে জমিগুলো জলাশয়ে পরিণত হয়। অল্প সময়ের পানিকে পুঁজি করে কামারনওগাঁ গ্রামের আমিনুর রহমান গড়ে তুলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামার। পানি থাকাবস্থায় হাঁসগুলো ওই বিলে থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে হাঁসগুলোকে নেওয়া হয় অন্যত্র।
ভ্রাম্যমাণ খামারটি একদিকে বদলে দিচ্ছে আমিনুরের ভাগ্য অন্যদিকে এলাকাবাসী পেয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা।
আমিনুর জানান, বছরখানেক আগে তিনি এক হাজার হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার তৈরি করেন। প্রথমে কামারনওগাঁ সিকদারবাড়ি এলাকায় শ^শুর বাড়ি, এরপর নিজের বাড়ি, অতঃপর কামারনওগাঁর বিলে আনা হয়েছে খামারের হাঁসগুলো। জলাশয় যেখানে, সেখানেই ভ্রাম্যমাণ এই খামারটিকে সরাতে হয়। এবার পাশ্ববর্তী এলাসিন ইউনিয়নের সিংহরাগী এলাকায় ধলেম্বরী সংলগ্নে হাঁসগুলো সরানোর কথা ভাবছেন তিনি।
১০/১২ বছর আগে তিনি গমের ব্যবসা করতেন। প্রতিদিনের লাভের অংশ থেকে একটি করে হাঁস কিনতেন। এভাবে ১৬৫টি হাঁস কিনলেন। হাঁস পালনের লাভ তখন থেকেই বুঝতেন। দীর্ঘদিন হাঁস পালনের টাকায় সংসার চালিয়ে বিদেশে যাওয়ার খরচও জোগাড় করেছিলেন। উপার্জন বাড়াতে সৌদি আরবে যান। সৌদি থেকে ফিরে সিঙ্গাপুরে যান। প্রবাসের চেয়ে হাঁস পালনেই বেশি উপার্জন হবে ভেবে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে প্রথমে বেকার হয়ে পড়েন। ক’দিন পরই ৩৫ হাজার টাকায় একহাজার জিনডিং ও খাকি ক্যাম্পবেল প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা কেনেন। ঘর তৈরিতেও তেমন খরচ হয়নি।
ভ্রাম্যমাণ খামার হওয়ায় সবসময় হাঁসগুলো থাকে জলাশয়ে। ফলে খাবার খরচও কমে আসে। বাচ্চাগুলো প্রথম তিন-চার মাস পালনের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ ডিম দিচ্ছে। প্রতি শতক ডিম ১১শ টাকা (৪৪ টাকা প্রতি হালি) দরে খামার থেকেই কিনে নিচ্ছে পাইকাররা। এতে প্রতিদিনের সাড়ে তিনশ’ ডিম বিক্রি হয় ৩৮শ টাকা, যা মাসে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। পাঁচ মাস যাবত ধারাবাহিকভাবে সাড়ে তিনশ’ ডিম তুলছেন আমিনুর। কখনও খামার মাসে থেকে ৪শ’ ডিমও আসে।
আমিনুর রহমান আরও বলেন, জলাশয়ে ঠিকমতো পানি থাকলে খাবার খরচ কমে যেত, এতে ডিমের দাম আরও কম হতো। কিন্তু পানি কমে যাওয়ায় অনেকটা সময় হাঁসগুলো বাড়িতে পালন করতে হয়। এরপরও তার ইচ্ছে চলতি বছরে তিন হাজার বাচ্চা তার খামারে তুলবেন। বিদেশের চেয়েও এখন তার বেশি উপার্জন হচ্ছে। তিনি বেকারদের উদ্দেশে বলেন, হতাশার কিছু নেই। সঠিকভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনে বিদেশি টাকার চেয়েও বেশি উপার্জন করা সম্ভব। অনেকেই তাকে দেখে হাঁস পালনের পরামর্শ নিতে আসেন।
তবে অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এসব খামার পরিদর্শন, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরহ, নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিলে খামারিরা উপকৃত হতো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে রূপ দেওয়া সম্ভব।
আমিনুরের স্ত্রী বিপুল জানান, তিনি এবং তার স্বামী দুজনে মিলেই শ্রম দিচ্ছে খামারে। ফলে স্বামী প্রবাসে থাকার চেয়ে তাদের সংসার এখন আরও ভালো চলছে।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় প্রথম ধাপে ১৭ দিন দ্বিতীয় ধাপে ২১ দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। খামারে প্রাথমিক চিকিৎসা এখন নিজেই দিতে পারেন।
দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, আমিনুরের হাঁসের খামারটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে হাঁসগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ভ্যাকসিন এবং ডাক কলেরার টিকা সিডিউল অনুযায়ী দিতে হবে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিনসহ, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭জানু২০২০