মনোক্সেস তেলাপিয়ার চাষ করবেন যে পদ্ধতিতে

1359

46482657_1057175074452651_6717891160947294208_n

মনোক্সেস তেলাপিয়ার চাষ পদ্ধতি

মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের গুরুত্ব

* মনোসেক্স মানে একলিঙ্গী, অর্থাৎ শুধুমাত্র পুরুষ বা স্ত্রী মাছের চাষ। মনোসেক্স তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ তেলাপিয়ার চাষ।
* পুরুষ তেলাপিয়া স্ত্রী তেলাপিয়ার চেয়ে দ্রুত বাড়ে। যেখানে চারমাসে একটি পুরুষ তেলাপিয়া ৬০০-৮০০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট হয় সেখানে একটি স্ত্রী তেলাপিয়া একই সময়ে মাত্র ১৫০ গ্রাম ওজন হয়। কারণ স্ত্রী তেলাপিয়া অনিয়ন্ত্রিত ও দ্রুত বংশ বিস্তার করে যাহা তাদের শারীরিক বৃদ্ধির প্রতিকূল।
* মনোসেক্স পুরুষ তেলাপিয়ার বৈশিষ্ট্য হলো এরা সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে পারদর্শী, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এবং অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।

মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ পদ্ধতি:-

* মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ দুই ধাপে করা উত্তম। ২৫-৩০ দিন বয়সের পোনা প্রতি কেজিতে ৮০০০-১০০০টি হয়। সেক্ষেত্রে এই সাইজের পোনা সরাসরি মজুদ পুকুরে না নিয়ে নার্সারি পুকুরে এক থেকে দেড় মাস প্রতিপালন করার পর প্রতিটি পোনার ওজন ২০-২৫ গ্রাম হবে, তখন মজুদ পুকুরে পোনা স্থানান্তর করতে হবে।
* তবে ২০-২৫ গ্রামের পোনা সরাসরি কিনতে পারলে নার্সারি পুকুরে চাষ করার প্রয়োজন নেই।

নার্সারি পুকুরে চাষ ব্যবস্থাপনা
নার্সারি পুকুরের আয়তন:-
১০-৩০ শতাংশ
গভীরতা: পানির গভীরতা সর্বোচ্চ ১ মিটার ও সারা বৎসর পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

নার্সারি পুকুরে চাষ ব্যবস্থাপনা
পুকুর প্রস্তুতি:-

* পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা সঠিকভাবে মেরামত।
* আগাছা দমন ও পাড়ের আশে পাশের ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করে সূর্যালোকের ব্যবস্থাকরণ।
* পুকুর শুকানো বা রোটেনন প্রয়োগে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন।
* সাপ, ব্যাঙ, পাখি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নেটের ব্যবস্থা করা।
* প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ।
* চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর, শতাংশে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করতে হবে।

নার্সারি পুকুরে চাষ ব্যবস্থাপনা
পোনা মজুদ:-

শতাংশ প্রতি ২০০০-২২০০ টি মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা। পুকুরে সার দেওয়ার ৩-৪ দিন পর পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

পোনার উৎস্য:-

ব্র্যাক হ্যাচারি
সিপি হ্যাচারি
নিরিবিলি হ্যাচারি অথবা
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ি।

খাদ্য প্রয়োগ:-

* ১ম ৩-৪ দিন মজুদকৃত পোনার দেহ ওজনের সমান অর্থাৎ ১০০% হারে।
* এরপর ৫-৮ দিন পোনার দেহ ওজনের ৬০-৭০% হারে।
* এরপর ৯-১২ দিন দেহ ওজনের ৪০-৫০% হারে।
* এরপর ১৩-২০ দিন দেহ ওজনের ২০-২৫% হারে।
* এরপর ২১-৩০ দিন দেহ ওজনের ১৫-২০% হারে।
* এরপর ৩০-৪৫ দিন দেহ ওজনের ১০-১২% হারে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।

মজুদ পুকুরে চাষ ব্যবস্থাপনা
আয়তন ও গভীরতা:-

* যে কোন আয়তনের তবে ২০-১০০ শতাংশের পুকুর হলে ভালো হয়।
* পানির গভীরতা ৩.৫-৪.৫ ফুট।
* যেহেতু মনোসেক্স তেলাপিয়া মজুদ পুকুরে ৪-৫ মাস থাকে তাই কমপক্ষে ৫-৬ মাস পানি থাকে এমন পুকুর মজুদ পুকুর হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতি:-

* পাড় ভাঙ্গা থাকলে তা সঠিকভাবে মেরামত।
* আগাছা দমন ও পাড়ের আশে পাশের ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করে সূর্যালোকের ব্যবস্থাকরণ।
* পুকুর শুকানো বা রোটেনন প্রয়োগে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন।
* প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ।
* চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর, শতাংশে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার ব্যবহার করতে হবে।
* পানি না থাকলে পরিমানমত পানি প্রয়োগ করতে হবে।

পোনা মজুদ:-

* ২০-২৫ গ্রাম ওজনের ২০০-২৫০ টি/শতাংশে।
* সকল পোনা একই আকার ও বয়সের হতে হবে।
* একই সাথে ব্যবস্থাপনার জন্য শতাংশ প্রতি ৫টি কাতলা ও তিনটি কার্পিও মাছের পোনা ছাড়া যেতে পারে।

খাদ্য প্রয়োগ:-

* মজুদের পরের দিন থেকে মাছের দেহের ওজনের শতকরা ৮ ভাগ থেকে আরম্ভ করে প্রতিদিন সকালে অর্ধেক এবং বিকালে অর্ধেক এভাবে প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২% খাদ্য কমিয়ে দিতে হবে।
* ২ মাস পর থেকে মাছ বিক্রয় করা পর্যন্ত মাছের ওজনের ২% খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
* প্রতি শতক পুকুরে মোট খাদ্য প্রয়োজন প্রায় ৮৪ কেজি এবং উক্ত খাদ্য অবশ্যই ২৫% প্রোটিন মানসম্পন্ন হতে হবে।

অন্যান্য ব্যবস্থাপনা:-

* প্রতি ৭-১০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
* মাছ নিয়মিত খাবার খায় কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
* পোনা মজুদের পর প্রতি মাসে শতাংশ প্রতি ২৫০ গ্রাম চুন (চুন পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা করে প্রয়োগ করতে হবে) বা ১৫০ গ্রাম জিওলাইট প্রয়োগ করতে হবে।
* পুকুরে পোনা মজুদের এক মাস পর থেকে প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর ২০-৩০% পানি পরিবর্তন করা ভাল।
* প্রতি ১৫ দিন অন্তর পানির গুণাগুণ যেমন পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পিএইচ, অ্যামোনিয়া ও মোট ক্ষারত্ব পরীক্ষা করা ভাল। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে বাজারে প্রচলিত একোয়া-কেমিক্যাল ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া দুরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহন করেত হবে।

আহরণ ও বিক্রয়:-

* মজুদের ৩-৪ মাসের মধ্যে মাছের ওজন বৃদ্ধি পেয়ে ২৫০-৩০০ গ্রাম হয়। তখন থেকেই আহরণ ও বিক্রয় করা যেতে পারে।
* ৬-৭ মাসে মাছের গড় ওজন হয় ৪০০-৫০০ গ্রাম।
* উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ১৫ মেট্রিক টন/হেক্টর/বৎসর উৎপাদন করা সম্ভব।

আরো বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭মার্চ২০