মরিচ পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে যায় তাই নিবিড়ভাবে যত্ন নিতে হয়। পোকামাকড় দমনে নানা ধরনের পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। পোকার ধরন অনুযায়ী বালাইনাশকের ব্যবহার এবং প্রতিকার সমন্ধে জেনে রাখুন।
১. সাদা মাছি: সাদা রংয়ের এ পোকা পাতার নিচের অংশে থেকে পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা কুঁচকে যায়। আক্রমণে প্রথমে পাতায় সাদা বা হলদেটে রং দেখা যায় পরে দাগগুলো একত্রে হয়ে সবুজ শিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যায় অর্থাৎ ভাইরাস রোগ ছড়ায়। এ পোকা খাওয়ার সময় আঠালো মিষ্টি রস নি:সরণ করে বিধায় ঐ আঠাতে কালো ছত্রাক জন্মাতে সহায়তা করে।
প্রতিকার: প্রতি ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে কাপড় কাঁচা সাবান মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
⦁ হলুদ রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
⦁ প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে “ইকোম্যাক” ও ১ মিলি হারে “কেমাইট” মিশিয়ে ১ সপ্তাহ অন্তর গাছের পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে ভিজিয়ে পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে।
২. মাকড়: সাদা, হলদে, সবুজ বা লাল রংয়ের অতি ক্ষুদ্র এ পোকা পাতার নীচে থেকে রস চুষে খায়। খালি চোখে সাধরিণত এদের দেখা যায় না কিন্ত এদের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। মাকড় দ্বারা আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায় এবং কচি পাতার নীচের দিকে বেঁকে পেয়ালা আকৃতির হয়ে যায় ও পাতা সরু হয়।
প্রতিকার:
⦁ আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে।
⦁ প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে “ইকোম্যাক” ও ১ মিলি হারে “কেমাইট” মিশিয়ে ১ সপ্তাহ অন্তর গাছের পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে ভিজিয়ে পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে।
৩. জাব পোকাঃ অতি ছোট, নরম ও উজ্জ্বল কাল রংয়ের এ পোকার পূর্ণাঙ্গ পোকা ও নিম্ফ (বাচ্চা) পাতা, ফুল, কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি ও ফুল, ফল ধারণ বাধাগ্রস্থ হয়। বাতাসে আদ্রতা বেশী ও মেঘলা কালে এ পোকা বেশি বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার:
⦁ আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে।
⦁ জমিতে বন্ধু পোকা লেডি বার্ড বিটলের পূর্নাঙ্গ পোকা ও কীড়া সংরক্ষণ করতে হবে ।
⦁ প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে “ইকোম্যাক” ও ১ মিলি হারে “কেমাইট” মিশিয়ে ১ সপ্তাহ অন্তর গাছের পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে ভিজিয়ে পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে।
৪. থ্রিপস: অতি ক্ষুদ্র কালো বা সাদা রংয়ের এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা কুঁচতে যায় এবং অনেকটা নৌকার মত দেখায়। পাতা বাদামী রং ধারন করে। উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় এ পোকা বেশী বিস্তার লাভ করে। এ পোকা ভাইরাস রোগও ছড়ায়।
প্রতিকার:
⦁ এ পোকার আক্রমণ বাহির হতে বোঝা যায় না বিধায় ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং মাঝে মাঝে ক্ষেত পরিদর্শন করে ফসলের অবস্থা দেখে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
⦁ সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
⦁ জমিতে বন্ধু পোকা মাকড়সা সংরক্ষণ করতে হবে ।
⦁ প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে “ইকোম্যাক” ও ১.৫ মিলি হারে “বায়োট্রিন” ১ সপ্তাহ অন্তর গাছের পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে ভিজিয়ে পর্যায়ক্রমে স্প্রে করতে হবে।
৫. ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ এ পোকার ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়। একটি পোকা একাধিক ফলে আক্রমন করতে পারে। বিকল্প পোষকের উপস্থিতিতে এ পোকা বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার:
⦁ জমি থেকে ডিম ও কীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
⦁ জমিতে বন্ধু পোকা “ট্রাইকোগ্রামা” সংরক্ষণ করতে হবে।
⦁ প্রতি বিঘায় ০৬ টি হারে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ “স্পোডো-লিউর” ব্যবহার করতে হবে।
⦁ প্রতি ১ লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে “স্পোডো-এনপিভি” মিশিয়ে ১ সপ্তাহ অন্তর গাছের পাতার নিচের অংশ ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ