‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার

2641

মহিষ

মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও দুধের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণের জন্য গরুর পাশাপাশি মহিষে নজর দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দুধের ঘাটতি পূরণে মহিষকেন্দ্রিক এ প্রকল্প দ্রুত সফলতা এনে দেবে।

ভারতে মোট উৎপাদিত দুধের ৫৬ শতাংশই আসে মহিষ থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৪ লাখ মহিষ থাকলেও সুফল নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এতোদিন ছিল না। দেশীয় মহিষ সাধারণত দৈনিক দেড় থেকে আড়াই লিটার দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু নিলি, রাভি, মুররাহ, সুরটি, জাফরাবাদি, মেহসানা, কুনদি, ভাদোয়ারি এবং ইতালীয় ভূমধ্যসাগরীয় মহিষগুলো দৈনিক ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।বিএলআরআই কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় জাতের মহিষের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করা হবে। বাইরে থেকে ষাঁড় এনে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশে অধিক মাংস ও ১২ লিটার করে দুধ দিতে পারে এমন মহিষের বংশবিস্তার ঘটানো হবে।

বিএলআরআই সূত্র জানায়, মূলত উপকূলীয় জেলা ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, লক্ষীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালীতে মহিষ বেশি আছে। এছাড়া যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুরেও মহিষ পালন দেখা যায়।

ঢাকার সাভার, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পাবনার ঈশ্বরদী, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, লক্ষীপুরের রামগতি, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর বাউফল, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, রংপুরের বদরগঞ্জ ও লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে মহিষ লালন-পালন বাড়ানো হবে।

বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. বিপ্লব কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৪ লাখ মহিষ রয়েছে। একটি দেশীয় জাতের মহিষ দৈনিক দেড় থেকে আড়াই লিটার দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু জাত আছে যেগুলো দৈনিক ১২ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। বাইরে থেকে এ জাতের ষাঁড় এনে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে অধিক দুধ উৎপাদনকারী মহিষের বংশবিস্তার করা হবে। পাশাপাশি এখন যে মহিষ রয়েছে, সেগুলোর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো হবে। এর ফলে মাংস ও দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশে যুগান্তকারী সফলতা আসবে।

ড. বিপ্লব বলেন, জলাভূমির মহিষ বিভিন্ন কাজ করার জন্য শক্তির উৎস। এদের গায়ের রঙ সাধারণত ধূসর ও গাঢ় ধূসর হয়ে থাকে। কখনো কখনো সাদা রঙের মহিষও দেখা যায়। তবে এ মহিষের কোনো নির্দিষ্ট জাত নেই। পক্ষান্তরে নদীর মহিষ দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। ভারত ও নেপালে দুধ ও মাংস উৎপাদনে অর্ধেকের বেশি অবদান রাখে মহিষ। আমরাও সেই পথে হাঁটছি।

জানা যায়, বর্তমানে দেশীয় মহিষগুলো প্রতি ল্যাকটেশনে (বাচ্চা প্রসবের পর থেকে যতোদিন পযর্ন্ত দুধ দেয় সে সময়কালকে দুধ উৎপাদনকাল বা ল্যাকটেশন পিরিয়ড বলা হয়) গড়ে ৬০০ থেকে ১০০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। দেশীয় মহিষ সাধারণত সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার বছরে প্রথম বাচ্চা দেয়। তবে দেশীয় জাতের কিছু মহিষ রয়েছে যারা স্বাভাবিক দুধ উৎপাদনের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি দুধ দেয়। প্রকল্পের আওতায় অধিক দুধ উৎপাদনক্ষম মহিষের জাতও বাছাই করা হবে। পরে নির্বাচিত প্রজনন পদ্ধতিতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রজনন করালে অধিক উৎপাদনক্ষম দেশীয় মহিষের বংশবিস্তার ঘটবে।

তাদের মতে, গরুর তুলনায় মহিষের দৈহিক বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি। গরুর তুলনায় মহিষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। এরা জোয়ার-ভাটার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও বেঁচে থাকতে পারে। মহিষের মাংস ও দুধে কোলেস্টেরলের মাত্রা গুরুর মাংস ও দুধের চেয়ে কম, তাই এর মাংস-দুধও স্বাস্থ্যসম্মত।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ