মাছের রোগের জরুরী চিকিৎসায় যেসব ব্যবস্থা নিবেন

488

54371127_1491205714350035_8936469419777851392_n
মাছ চাষ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর পুকুরে অনেক রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে। মাছের রোগে জরুরীভিত্তিক চিকিৎসায় কতগুলো করণীয় আছে যা জানা থাকলে খুব দ্রুত মাছের চিকিৎসা দেয়া যায়। আসুন জেনে নেয়া যাক জরুরী চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলো কি কি —

জরুরিভিত্তিক ব্যবস্থাঃ
কোনও রকম ঘা বা ক্ষত জাতীয় রোগ তা সে ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া যে কারণেই হোক, তা সুষ্ঠু ও স্পষ্ট ভাবে নির্ণয় করার আগেই আমরা জরুরিভিত্তিক নিম্নরূপ ব্যবস্থা নিতে পারি।

(১) যদি ২/১ টা মাছকে আক্রান্ত দেখা যায় তবে তাদের আলাদা করে তুলে পটাশিয়াম পা ম্যাঙ্গানেট (০.১ শতাংশ) ও জলের দ্রবণে খানিক ক্ষণ (২ মিনিট কাল) রেখে অথবা সাধারণ খাবার নুন (৩-৫ শতাংশ) জলে গোলা দ্রবণে ৫ মিনিট কাল রেখে ছেড়ে দেওয়া। সম্ভব হলে অন্য মাছেদের থেকে কিছু দিন আলাদা রাখা। শেষ অস্ত্র হিসাবে নষ্ট করে ফেলা।

(২) ভুবনেশ্বরের ওড়িশা ইউনির্ভাসিটি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির তৈরি সাইফ্যাক্স (CIFAX) ওষুধ দ্রবণে রেখে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।

(৩) একই সঙ্গে সাধারণ মাছের জন্য পুকুরে হেক্টর প্রতি ১০০ – ১৫০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।

(৪) বেশি ক্ষত না হলে অন্য ব্যবস্থা। যেমন হাঁস-মুরগির খাবার বা সার তৈরি। অথবা মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। বৃহদাকার ধারণ করার আগেই।

(৫) আক্রান্ত মাছকে তুঁতে (প্রতি ১০ লি জলে ৫ গ্রাম) ৫ মিনিট কাল রাখা যেতে পারে। পরে ছেড়ে দিতে হবে।

এই ধরনের রোগ পুকুরময় ব্যাপক ভাবে হলে মাছকে তুলে আলাদা ভাবে চিকিত্সার চেষ্টা না করে সমগ্র মাছের জন্য মাছের সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের চিকিত্সার জন্য ওষুধ পথ্য পুকুরেই প্রয়োগ করা ভালো।

(১) এর জন্য সাধারণ ভাবে চুন প্রয়োগের বিধি ও প্রয়োজনীয়তা আছে। চুন যদি মাত্রাতিরিক্ত না হয় তবে হঠাৎ করে পুকুরের জল বা মাছের ক্ষতি করার পরিবর্তে উভয়েরই স্বাস্থ্য রক্ষার্থে কাজে লাগে। তাই যদি দু–এক মাসের মধ্যে চুন প্রয়োগ না হয়ে থাকে তবে হেক্টর প্রতি ১০০–১৫০ কেজি কলিচুন প্রয়োগ করে ভালো করে জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

২) পুকুরের জলে সাধারণ খাবার নুন ১৫ – ২৫ কেজি প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করলেও অনেক সময় ফল পাওয়া যায়।

৩) পুকুরে হেক্টর প্রতি ২.৫ থেকে ৫ কেজি হারে তুঁতে জলের সঙ্গে বেশ করে মিশিয়ে দিলেও লাভ হতে পারে।

৪) মাছকে বাইরের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে প্রতি কেজি খাবারের সঙ্গে ১০০ গ্রাম টেরামাইসিন বা সালফাডায়াক্সিন পর পর ৭ দিন দিয়েও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায়।
যে কোনও ক্ষুদ্র পরজীবীর আক্রমণ হলে যদি মাছকে পৃথক করা যায় তবে —

(১) নুন জলে (৩-৪ শতাংশ) পর পর কয়েক দিন ডুবিয়ে ছেড়ে দেওয়া যায়।
(২) এ ছাড়া ফর্মালিন (২ পি পি এম) দ্রবণ জলেও ডুবনো যায়।
ব্যাপক আক্রমণ হলে প্রতি মাছের চিকিত্সার পরিবর্তে পুকুরে প্রয়োগ করা যেতে পারে

(১) চুন ১৫০ – ২০০ কেজি প্রতি হেক্টরে।
(২) নুভান ৭০০-৪০০ মি. লি. প্রতি হেক্টরে।
চার দিন বাদে আবার প্রয়োগ করতে হয়। কারণ অনেক সময় কীটের ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার পর আবার আক্রমণ করে।

ভৌত কারণে ব্যবস্থাঃ
ভৌত কারণের কোনও রকম চিহ্ন পেলেই পুকুরকে সংশোধন করা দরকার। এর জন্য সাধারণ ভাবে লক্ষ করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাছের মড়কের কারণ সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা হয়ে যায়। সেইমতো আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি। যেমন —

অধিক সংখ্যায় মাছ যখন উপরের দিকে ভেসে ওঠে, খাবি খায় তখন হয় জলে অক্সিজেনের অভাব। জলের নীচে জৈব পদার্থের পচনের ফলে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস তৈরির আশঙ্কা, জলে অন্য দূষণ, মাছের অধিক সংখ্যা ইত্যাদি কারণগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নীচের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

(ক) অধিক সংখ্যক মাছ আছে মনে হলে কিছু মাছ তুলে অন্য জলাশয়ে ছাড়া বা বিক্রি করা যেতে পারে।
(খ) মাছের সংখ্যা খুব বেশি নেই কিন্তু উপর দিকে মাছগুলি এসে বেড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জলে অক্সিজেনের অভাব বা জল দূষণের কথা ভাবা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জল তোলপাড় করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। জলে চুন প্রয়োগে লাভ হয়। নতুন জলের প্রবেশ ঘটানো যেতে পারে।

জল দূষিত মনে হলে তার ব্যবস্থাস্বরূপ মাছ ধরে অন্যত্র পাঠানো যেতে পারে। চুন প্রয়োগেও কাজ হয়। নুতন জলের প্রবেশ ঘটানো যেতে পারে। জলের নীচের পাঁক মাটি দূষিত হলে ভালো করে ঘেঁটে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন। জলে অধিক জুপ্ল্যাঙ্কটন, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থাকে অথবা তাদের মৃত্যুর ফলে জল দূষণ হলে চুন প্রয়োগে লাভ হয়। জলে শ্যাওলার আধিক্যে তুঁতে প্রয়োগ দরকার।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩জানু২০২০