মাছ চাষে চুন প্রয়োগের প্রয়োজন

3752

download
অতিরিক্ত ফসফরাস কমানো:
পানির অতিরিক্ত ফসফরাস দূর করতে কোনটা ভাল কাজ করে, চুন নাকি ডলোমাইট নাকি জিপশাম? International Journal of Applied and Pure Science and Agriculture (IJAPSA), 2016, ১৫ দিন ব্যাপী একটি পরীক্ষা চালায় মাছ চাষের উপর, যেখানে পানিতে অতিরিক্ত ফসফরাস ছিল। তারা চুন, ডলোমাইট এবং জিপসাম পৃথক পৃথকভাবে ব্যবহার করে পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে জিপসাম প্রতি মিলিলিটারে ৪০ গ্রাম ব্যবহার করলে পানির কোন রকম পিএইচ, অ্যাকালিনিটি, ঘনত্ব-এর পরিবর্তন ছাড়াই পানির অতিরিক্ত ফসফরাস ৮৩-৯৫% পর্যন্ত কমাতে পারে। উল্লেখ্য, পানির গ্রহনীয় ফসফরাস হল ০.০০৫-০.২ মিলিগ্রাম/লিটার।

অতিরিক্ত অ্যালকালিনিটি কমানো:
International Journal of Applied and Pure Science and Agriculture (IJAPSA), 2016 তে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে জিপসাম পানির অতিরিক্ত অ্যালকালিনিটির মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম। পরীক্ষাতে তারা চুন, ডলোমাইট এবং জিপসামের ২ টি করে মোট ৬টি মাত্রা ব্যবহার করে ১৫ দিন ব্যাপী। মাত্রাগুলি ছিল ২০মিলিগ্রাম/লিটার ও ৪০মিলিগ্রাম/লিটার। প্রারম্বে পানির অ্যালকালিনিটি ছিল ১২২.৬ মিলিগ্রাম/লিটার। ১৫ দিন পর দেখা গেছে যে ট্যাংকে চুনের মাত্রা প্রয়োগ করা হয়েছিল ৪০মিলিগ্রাম/লিটার সে ট্যাংকের অ্যালকালিনিটির মাত্রা বেড়ে ১৩৫.৫ মিলিগ্রাম/লিটার হয়ে গেছে, আর যে ট্যাংকে জিপসামরে মাত্রা প্রয়োগ হয়েছিল ৪০মিলিগ্রাম/লিটার সে ট্যাংকের অ্যালকালিনিটির মাত্রা কমে ১০৯.৭ মিলিগ্রাম/লিটার হয়ে গেছে। যাই হোক, যে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকালিনিটি (২০০ মিলিগ্রাম/লিটারের উপর) শুধুমাত্র সে পানিতেই জিপসাম প্রয়োগ করা উচিত। অন্যথায় পানির অ্যালকালিনিটি কমে গিয়ে বাফরিং ক্ষমতা কমে যাবে।

অ্যালকালিনিটি বাড়ানো:
International Journal of Applied and Pure Science and Agriculture (IJAPSA), 2016 তে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে চুন পানির অ্যালকালিনিটির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। পরীক্ষাতে তারা চুন, ডলোমাইট এবং জিপসামের ২ টি করে মোট ৬টি মাত্রা ব্যবহার করে ১৫ দিন ব্যাপী। মাত্রাগুলি ছিল ২০মিলিগ্রাম/লিটার ও ৪০মিলিগ্রাম/লিটার। প্রারম্বে পানির অ্যালকালিনিটি ছিল ১২২.৬ মিলিগ্রাম/লিটার। ১৫ দিন পর দেখা গেছে যে ট্যাংকে চুনের মাত্রা প্রয়োগ করা হয়েছিল ২০মিলিগ্রাম/লিটার সে ট্যাংকের অ্যালকালিনিটির মাত্রা ১৫ দিনে বেড়ে ১৩৬.১ মিলিগ্রাম/লিটার হয়ে গেছে, আর যে ট্যাংকে জিপসাম মাত্রা প্রয়োগ হয়েছিল ৪০মিলিগ্রাম/লিটার সে ট্যাংকের অ্যালকালিনিটির মাত্রা কমে ১০৯.৭ মিলিগ্রাম/লিটার হয়ে গেছে। আর ডলোমাইট ৪০ মিলিগ্রাম/লিটার মাত্রা প্রয়োগ করাতে অ্যালকালিনিটি ১৩৩.৭ মিলিগ্রাম/লিটারে দাড়ায়। চুন প্রয়োগে কাজ করবে না যদি প্রতি ৩-৪ সপ্তাহ পর পর পানি পরিবর্তন করা হয়। অ্যালকালিনিটি বাড়ানোর জন্য কলি চুন এবং পোড়া চুন ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক সময় এগুলো pH মাত্রা ১১ পর্যন্ত নিয়ে যায়, pH এর ডেথ পয়েন্ট।

পানির ঘনত্ব বা হার্ডনেস বাড়ানো:
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এ দুটি রাসায়নিক পদার্থ হল পানির ঘনত্বের জন্য দায়ী উপাদান। যখন পানির কার্বনেট এবং বাইকার্বনেট আয়ন আরো বেশি দ্রবনীয় সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম মৌলের সাথে মিলিত হয়ে ক্যালসিয়ামকে বাধা প্রধান করে তখন পানিতে পানির ঘনত্ব কমে যায়। চুন প্রয়োগ করে পানির একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পানি ঘনত্ব বাড়ানো যায়। IJAPSA- 2016 তে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে জিপসাম চুন এবং ডলোমাইটের তুলনায় পানি ঘনত্ব বেশি বাড়াতে কার্যকর। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, জিপসাম চুন এবং ডলোমাইটের তুলনায় বেশি মাত্রায় পানিতে দ্রবনীয়। জিপসাম চুন থেকে ২০০ গুণ বেশি দ্রবনীয়। কিন্তু জিপসামের এসিড নিরপেক্ষকরণের কোন ক্ষমতা নেই, যেমন চুনের আছে। যদি পানির মোট ক্ষারত্ব বা অ্যালকালিনিটি ৫০মিলিগ্রাম/লিটার থেকে উপরে থাকে, তবে সেখানে জিপসাম প্রয়োগ করলে পানির মোট ঘনত্ব বেড়ে যায়, কারণ তখন চুন কার্যকরী হয়না। তাই যে পানির ঘনত্ব কম, অ্যালকালিনিটি বেশি, ফসফেট কনসেন্ট্রেশন বেশি সেই পানির pH কমানোর জন্য জিপসাম উপযুক্ত। একরপ্রতি যেখানে পানির গভিরতা ১ ফুট সেখানে ৫৫ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করলে পানির ঘনত্ব আনুমানিক ২৫ পিপিএম পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর যেখানে পানির গভিরতা ১ ফুট সেখানে ২.২৫ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করলে পানির মোট ঘনত্ব এবং অ্যালকালিনিটি দুটোই আনুমানিক ১ পিপিএম বৃদ্ধি পায়। আনুমানিক ২৫ পিপিএম পর্যন্ত বেড়ে যায়। জিপসাম প্রয়োগের মাত্রা (মিলিগ্রাম/লিটার) হল: মোট ক্ষারত্ব বা অ্যালকালিনিটি (মিলিগ্রাম/লিটার) – মোট ঘনত্ব (মিলিগ্রাম/লিটার) x 4

পানির ঘোলত্ব কমানো:
বৃষ্টি ধোয়া পানি পুকুরে প্রবেশ করে পানি ঘোলাটে হতে পারে৷ ভাসমান পদার্থ এবং মাটির ক্ষুদ্র কণা ঘোলাত্ব সৃষ্টি করে৷ আবার কিছু কার্প জাতীয় মাছেও পানি ঘোলা করতে পারে। Department of Fisheries and Allied Aquaculture, Alabama Agricultural Experiment Station Auburn University, Alabama36849. USA দ্বারা এক সমীক্ষা পরিচালিত হয়। পরীক্ষায় তারা জিপসাম ও ফিটকারী বা অ্যালাম ব্যবহার করে পানির ঘোলাত্ব দূর করার জন্য। পরীক্ষায় তারা দেখতে পান পানির ঘোলাত্ব দুর করতে ফিটকারী জিপসামের এবং চুনের তুলনায় বেশি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী। ১০-৩০মিলিগ্রাম/লিটার ফিককারী ৪৮ ঘন্টারমধ্যে ৮৯-৯৭% পর্যন্ত ঘোলত্ব দূর করতে পারে। কিন্তু তারা এই বলে সতর্ক করে দিন যে, ফিটকারী বেশি মাত্রায় এসিডিক যা মাছের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। তাই তারা পানির ঘোলাত্ব দূর করার জন্য জিপসাম প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয় যার প্রয়োগ মাত্রা ২৫০মিলিগ্রাম/লিটার। আবার বেশি মাত্রায় চুন প্রয়োগ করেও পানির ঘোলাত্ব দূর করা যায়। এক্ষেত্রে শতকে ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত চুন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে ঠিক কি কারণে পানি ঘোলা হয় সেটা আগে বের করতে হবে। যদি pH ৭ এর নিচে হয় এবং অ্যালকালিনিটি ৫০ পিপিএম এর নিচে হয় তবে সবচেয়ে ভাল কাজ করে পাথুরে চুন।

বায়োফ্লকে চুন:
বায়োফ্লকে পানির প্রস্তুতির সময় ট্যাংকের পানির বিভিন্ন প্যারামিটার দেখার পর এয়ারেশনে ২৪ ঘন্টা রাখতে হয়। এরপর পিএইচ চেক করে পানিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় চুন প্রয়োগ করতে হয়। এটা হল বায়োফ্লক প্রস্তুতির প্রাথমিক ধাপ। এখানে অবশ্যই CaCo3 মানে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। কারন এর বাফারিং ক্ষমতা হল পানির পানির pH আদর্শ মাত্রায় থাকে, উঠা-নামা করে না। আর এটা পানির সাথে দ্রবনীয় হয়ে যায় না, ফলে পানি ঘোলাও হয়ে যায় না। কারণ এই CaCo3 পিউর পানির সাথে কোন রিএকশান করে না (CaCo3 পানির সাথে অল্পই মিশে), শুধুমাত্র যতটুকু দরকার পানিতে মিশ্রিত কার্বনিক এসিড যা পানিতে মিশে Co2 গঠন করে সাথে বিক্রিয়া করে এটাকে নিউট্রাল করে দেয়। যার কারনে পানিতে যতই CaCo3 যোগ করা হউক না কেন এটার pH ৭.০-৭.৫ এর মধ্যেই থাকে। বায়োফ্লকের পানির ট্যাংকে CaCo3 এর মাত্রা হল ০.০৫ গ্রাম/লিটার। তার মানে ১০ হাজার লিটার পানির ট্যাংকে লাগবে ৫০০ গ্রাম। বায়োফ্লক ট্যাংকে CaCo3 প্রয়োগ করতে হয় রাত্রে। কারন রাত্রেই পানি এসিডিক ফর্মে চলে আসে।

কতদিন পর্যন্ত চুনের কার্যকারিতা থাকে:
সাধারনত: পুকুর প্রস্তুতির সময় চুন একবার প্রয়োগ করলে এটা ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত থাকে, যদি না পুকুরে থেকে পানি পরিবর্তন করা হয় বা পুকুর থেকে পানি উপচে পড়ে যায়। তারপরেও প্রতিবছরই পুকুর প্রস্তুতির সময় যে পরিমান চুন দেয়া হয় তার চার ভাগের একভাগ চুন দিলে পানির প্যারামিটা ভাল থাকে।

চাষকালীন চুনের মাত্রা: মাছ মজুদের পর প্রতি মাসে ২ বার পোড়া চুন বা কলি চুন প্রতি শতাংশে ১০০-২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। চুন এবং লবনের কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া নেই, তাই চুন এবং লবন পাশাপাশি দেয়া যেতে পারে।

চুন প্রয়োগ পদ্ধতি:
যদি পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয় তবে একটা বস্তায় নিয়ে গুড়ো করে পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যায়। অথবা পাথুরে চুনকে পানিতে গুলিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যায়। এখন দেখতে হবে চুনকে পানিতে কিভাবে গুলানো যায়। পানিতে কি চুন ঢেলে দেবো না চুনের মধ্যো পানি ঢেলে দিবো? এক্ষেত্রে উত্তম হলো পাত্রে পরিমান পানি নিতে হবে আগে। শুকনা ও ভেজা পুকুরে প্রস্তুতকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় চুন গুড়া করে ঢালসহ পুকুরের সমস্ত জায়গায় সমানভাবে
ছিটিয়ে দিতে হবে। পানি ভর্তি পুকুরে চুন দিতে হলে আগের দিন প্রয়োজনীয় চুন মাটির পাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে ভিজানো চুন ভালভাবে গুলিয়ে নিতে হবে। এরপর সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।

চুনের কাজ:

১। মাটি ও পানির অম্লীয় ভাব কমিয়ে ক্ষারত্ব ভাব বাড়ায়;
২। মাটি ও পানির হার্ডনেস ( কার্বনেট ও বাইকার্বনেট) বাড়ায়;
৩। পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে বাফারিং এর মাধ্যমে নিরপেক্ষ মান বজায় রাখে;
৪। পানির ঘোলাত্ব কমায় ( নেগেটিভলি চার্জড মাটি কণাকে পজিটিভ করে);
৫। মাছের দেহ পরিষ্কার রেখে রোগ জীবাণুকে দেহে সেঁটে থাকতে দেয় না;
৬। মাটি ও পানির রোগ জীবাণু, ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবী ধংস করে;
৭। রোগ জীবাণু, ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবীর বংশ বিস্তার রোধ করে;
৮। চুন এটি নিজেই একটি সার হিসাবে কাজ করে;
৯। পুকুরের মাটির পুষ্টি ( ফসফেট ) ছাড় করে;
১০। জৈব পদার্থ ও পেরিফাইটনের সাথে যুক্ত হয়ে তলায় পানি চুয়ানো কমিয়ে দেয়;
১১। মাটির কণাকে ভেঙ্গে ফাটল মুছে ফেলে পুকুরের পানি ধারন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে;
১২। মাছের হাড় ও মাংসপেশী গঠনে সহায়তা করে;
১৩। প্রয়োগকৃত চুনের প্রায় ৫০% মাছের ওজন হিসাবে ফেরত পাওয়া যায়;
১৪। এটি চিংড়ি ও প্রানি কণার খোলস তৈরিতে প্রয়োজন হয়;
১৫। এটি সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে;
১৬। পুকুরের মাটি ও পানির দূষিত পদার্থ শোধন করে;
১৭। মাছের খাদ্যের অবশিষ্টাংশকে পঁচতে সাহায্য করে;
১৮। এটি বিষাক্ত গ্যাস ( এমোনিয়া সহ) পানি থেকে বের করে দেয়;
১৯। চুন মাছের মল-মূত্র সহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ শোধন করে;
২০। এটি মাছের দেহের উজ্জলতা বাড়িয়ে মাছের বাজার দর বাড়তে সাহায্য করে;
২১। মাছের স্বাদ বাড়িয়েও বাজার দর হার বাড়িয়ে দেয়;
২২। চুন পানির অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বেঁধে আন্তঃআনবিক ক্ষেত্র ফাঁকা করে মুক্ত বায়ুর অক্সিজেনের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে মাছের শ্বাস কষ্টকে নিশ্চিতভাবে কমিয়ে দেয়;
২৩। ইউগ্লেনার স্তর ৩ বার ( ৯ দিনে ) পরিস্কার করে ১২তম ও ১৫তম দিনে তাৎক্ষণিকভাবে
বানানো চুনের গুড়া ইউগ্লেনার স্তরের ওপর ছড়িয়ে ‘ইউগ্লেনা’ নিয়ন্ত্রণ করা যায়;
২৪। মাছের গ্যাস এমবোলিজম হলে চুন প্রয়োগে সেরে যায় ( শতকে ২৫০ গ্রাম হিসাবে);
২৫। খালি ডিমের খোসায় টাটকা চুনের টুকরা পুকুর পাড়ে স্থাপনে উদ ও গুই সাপ নিয়ন্ত্রিত হয়;
২৬। মাছের সাদা দাগ (ইক) রোগে শুকনা পুকুরের তলায় শতকে ৪ কেজি হারে চুন প্রয়োগে নিয়ন্ত্রিত হয়;
২৭। উকুন হলে শতকে ২ কেজি করে প্রয়োগে ‘উসাইট’ স্তরেই উকুন ধ্বংস হয়;
২৮। মাছের প্রটোজোয়াঘটিত রোগে পুকুরের তলায় শতকে ৪-৮ কেজি করে চুন প্রয়োগে এ ধরনের আক্রমন থেকে রেহাই পাওয়া যায়;
২৯। ক্ষত রোগে পুকুরের পরিচর্যায় শতকে চুন আধা কেজি করে প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়;
৩০। মাছের দেহে আঘাত জনিত ক্ষতে চুন প্রতিষেধকের কাজ করে;
৩১। পুকুরের মাটি ও পানির বিষাক্ততাকে কয়েক দিনের মধ্যেই শোধন সাপেক্ষে নিরপেক্ষ করে ফেলে;
৩২। অনাকাঙ্খিত মাছ দূরীকরণে চুন-ইউরিয়ার (শতকে ১কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম ইউরিয়া)মিস্রণকে গরম অবস্থায় ব্যবহার করা হয়;
৩৩। পুকুর সেঁচে তাৎক্ষণিকভাবে (শতকে ১ কেজি করে) বাইম-গুতুম জাতীয় মাছ আহরন করা যায়;
৩৪। কমপোস্ট সার তৈরিতে চুন ১% হারে ব্যবহার করা হয়;
৩৫। পুকুরে ফাইটোপ্লাঙ্কটনকে চুন জমানো কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিপরীত পদ্ধতিতে সরবরাহ
করে সালোক সংশ্লেষণ নিশ্চিত করে;
৩৬। দ্রবীভূত লোহাকে নিরপেক্ষ করেও মাছের শ্বাসকষ্ট কমায়;
৩৭। মাছের দৈহিক বৃদ্ধির পূর্ব শর্ত হচ্ছে যথেষ্ট ক্যালশিয়াম হার্ডনেস, চুন এ প্রয়োজন মেটায়;
৩৮। কাঁটাযুক্ত মাছের ( শিং, মাগুর, টেংরা, কই ও তেলাপিয়া ইত্যাদি) কাঁটার ঘাই দিলে এতে ভেজানো চুন
লাগিয়ে দিলে জ্বালা/ব্যথা কমে যায়।
৩৯। বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন বা প্রাণ রসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।

চুন প্রয়োগের সময়:
১. শুকনা পুকুরে চাষ দেয়ার দিন।
২. পুকুরে পানি সেচের পর পরই ভেজা মাটিতে।
৩. পানি ভর্তি পুকুরে সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পূর্বে।
৪. চাষকালীন সময়ে প্রতিমাসে অন্তত একবার চুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. পানি ভর্তি পুকুরে রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্চিত মাছ দমনের ৩-৪ দিন পর।
৬. চাষকালীন সময়ে প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম চুন ব্যবহার করা যেতে পারে (তবে এটি নির্ভর করবে পুকুরের মাটি ও পানির পিএইচের মানের উপর)।

চুন প্রয়োগে সতর্কতা:
 পোড়া চুন এবং কলিচুন অত্যন্ত ক্ষারীয়। এটি ব্যবহারে পিএইচ দ্রুত বেড়ে যায়। শুকনো পুকুরে তা ব্যবহার করা নিরাপদ ।
 মাছ চাষের প্রথম মাসে যেখানে পানির পরিবর্তন হয়না, যদি সকাল বেলা pH ৭.৫-৭.৮ এর ভিতর থাকে তাহলে প্রতি ২-৩ দিন পর পর শতকে ৬০০-৮০০ গ্রাম ডলোমাইট ব্যবহার করা উচিত। যদি পাইটোফ্লাংটন ব্লম হয় এবং বিকেলে দিকে ০.৫ পয়েন্ট pH বেড়ে যায় তবে ৮০০-১০০০ গ্রাম প্রয়োগ করা উচিত।
 যদি পিএইচ ভ্যালু সকাল বেলা ৭.৫ এর নিচে থাকে তবে প্রতিদিন ৬০০ গ্রাম করে ডলোমাইট প্রয়োগ করতে হবে। পরের দিন সকালে পিএইচ মেপে দেখতে হবে, যদি পিএইচ ভ্যালূ ৭.৫ এর নিচে থাকে তবে প্রতিদিন এই মাত্রায় ডলোমাইট দিয়ে যেতে হবে যতদিন পর্যন্ত ৭.৫ পর্যন্ত না আসে।
 যদি পিএইচ ভ্যালূ ৯ পর্যন্ত চলে যায় বিকেলের দিকে, তবে প্রতিদিন সকালে ৮০০ গ্রাম করে ডলোমাইট দিয়ে যেতে হবে যতদিন পর্যন্ত পিএইচ উঠানামা না করে।
 পাথুরে চুন/ডলোমাইট পানির ক্ষার ও খরতা কম (২২০ মিগ্রা/লিটার 08003 এবং পিএইচ ৭) থাকলে ব্যবহার করতে হয়।
 পানির পিএইচ বেশি এবং ক্ষারত্ব ও খরতা কম হলে পুকুরে জিপসাম ব্যবহার করা ভাল । জিপসাম শুধু খরতাই বাড়ায় না, তা কাদাজনিত ঘোলাত্ব কমাতেও সহায়ক (১- কেজি/শতাংশ)।
 প্লাস্টিকের বালতিতে চুন গুলানো যাবে না। মাটির পাত্র বা গ্যালুমিনিয়ামের বালতিতে পানি নিয়ে তারমধ্যে চুন ভিজাতে হবে। চুন ব্যবহারের সময় নাক-মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে বাতাসের অনুকূলে ছিটানো উচিত।
 চুন গুলানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই প্রযোজন যাতে নাকে, মুখে, চোখে গরম চুন বা চুনেরপানির ছিটা এসে না লাগে । অসতর্কতাবশতঃ চোখে চুন বা চুনের পানি লাগলে পরিষ্কার পানি দিয়েসাথে সাথে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 কড়া রোদে চুন বেশি কাজ করে তাই এরকম সময়ে চুন ছিটাতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৬মার্চ২০