পুকুরের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন দ্রুত হলে মাছ চাষে পুকুরের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। যা মাছ চাষের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে না। পুকুরের যে সকল রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান তার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড মাছ চাষ পুকুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুকুরের পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের উৎস
মাছের ও কিছু অনুজ প্রাণির শ্বসন;
পুকুরের তলদেশে ডিকম্পজিশন বা পচন;
সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে দূর্বল বাইকার্বনিক এসিডের রাসায়নিক ভাংগন ইত্যাদি।
অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিপরীত মূখী অবস্থান। রাতে যখন পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বাড়তে থাকে বা কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ঠিক সে সময় মাছের ফুলকার মাধ্যমে মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রবেশ ঘটে ফলশ্রুতিতে মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মাছের রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি রক্তে হিমোগ্লোবিনে আক্সজেন সরবরাহে বাধা প্রয়োগ করে ফলে চাষকৃত মাছ বড় ধরনের ধকলের সম্মুখীন হয়। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। মাছ চাষ পুকুরের ফাইটোপ্লাংটন বা উদ্ভিদ কণা কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন চক্র নিয়ন্ত্রণে প্রধান সহায়ক ভূমিকা হিসাবে পালন করে।
গ্রীষ্ম কালে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইডের সমস্যা:
সাধারণত মাছ চাষ পুকুরে শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে কার্বন ডাই অক্সাইডজনিত সমস্যা বেশী দেখা দেয়। শীত কালে পুকুরের কম খাদ্য ব্যবহার ও ডাইজেশন প্রক্রিয়ায় কম অক্সিজেনের ব্যবহার সাধারণত কম হয়, কিন্তু গরমকালে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
বেশী তাপমাত্রায় (২৮-৩৪ ডি:সে:) মাছ সহ পুকুরের অন্যান্য অণুজীবের মেটাবলিজম ও রেসপ্রেরিয়েশন পাশাপাশি খাদ্য প্রয়োগ ও খাদ্য গ্রহণের হার বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকালে পুকুরের তলদেশে খাদ্যে ও অন্যন্য পদার্থের পচন এর জন্য প্রচুর পরিমান অক্সিজেনের প্রয়োজনের ফলে পুকুরের দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান কমে গিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎপাদন বেড়ে যায়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরী যাতে করে পুকুরে অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
মাছ চাষ পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণের উপায়:–
যেহেতু অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ পুকুরে বেশী পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় সেহেতু সঠিক মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড এর মান বজায় রাখা মাছ চাষ পুকুরের জন্য অধিক সহায়ক। পুকুরের রাসায়নিক পক্রিয়ায় বা বিভিন্ন প্রকার চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এতে যে সকল ফ্যাক্টর বিবেচনায় রাখতে হবে-
(ক) পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বা কনসেনট্রেশন (মি.গ্রা./লি.)
(খ) পুকুরের আয়তন
(গ) পুকুরে পানির গভীরতা রাসায়নিক উপায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের পূর্বে অবশ্যই পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান এবং পিএইচ এর মান নির্ণয় করা জরুরী।
পুকুরের পানির পিএইচ মান ৮.৫ এর বেশী হলে লাইম এজেন্ট ব্যবহারে শতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে একবারে সমস্ত লাইম এজেন্ট ব্যবহার না করে ধাপে ধাপে ব্যবহার করা যেতে পারে, যদি পুকুরের পানির পিএইচ মান ৯ বা তার উপরে হয় সে ক্ষেত্রে লাইম এজেন্ট ব্যবহার না করাই উত্তম।
বর্তমানে বাজারে উন্নত মানের দানাদার জিওলাইট ব মেট্রিক্স পাওয়া যায়, তা নিয়ামত পুকুরে ব্যবহারে পুকুরের কার্বন ডাই অক্সাইড বা পানির পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায় বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে পানির পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণ করা অতিব জরুরী। অন্যথায় মাছের যে কোন সমস্যা দেখা দিলে আশাঅনুরুপ ফলাফল পাওয়া কষ্টসাধ্য। যেহেতু পানির পিএইচ মান নিয়নন্ত্রণে কার্বন ডাই অক্সাইড বিশেষ ভূমিকা পালন করে, সেহেতু পুকুরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিন্মলিখিত পদক্ষপ নেয়া যেতে পারে-
১. পুকুরের পানির গভীরতা ৫ ফুটের বেশী রাখা।
২. পুকুরে যথা সম্ভব পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা বা করা।
৩. পুকুরের মাছের সঠিক ঘনত্ব বজার রাখা।
৪. সঠিক ভাবে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করা।
৫. ভাল মানের খাদ্য প্রয়োগ কার ।
৬. পুকুরের তলদেশের পচন জনিত গ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখা (প্রয়োজনে বাজারে ব্যবহৃত জিওলাইট বা মেট্রিক্স জাতিয় পণ্য ব্যবহার করা।
৭. পুকুরের ফাইটোপ্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণ করা (পুকুরের ব্লুম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে প্রো-বায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে, বাজারে বহুল ব্যবহৃত প্রোবায়োটিক প্রফস্ ব্যবহারে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় বা ভাল অন্যান্য প্রোবায়োটিকও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪জানু২০২০