মাছ চাষ বারো মাস

899

মাছ চাষ বারো মাস

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাঙালীর আদর্শ ও প্রধান এবং জাতীয় ও জনপ্রিয় খাবার কী, আপনি হয়তো চোখ বন্ধ করে বলে দেবেন মাছ। হ্যাঁ পাঠক, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো মাছ। আজ সেই মাছ ও এর সহজ চাষ পদ্ধতি এবং এর সম্ভাবনার কথা জানাবো আপনাদের এই ক্ষুদ্র পরিসরে।

বাংলাদেশে প্রায় ২৭৭ প্রজাতির স্বাদু পানির আর ৪৭৫ প্রজাতির লোনা পানির মাছ পাওয়া যায়। আমাদের চারপাশে সাধারণত রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, পাঙ্গাসসহ দেশী জাতের মাগুর, কৈ, শিং, পাবদা, মৃগেল, কালবাউস, মিরর, জাপানী পুটি, সরপুটি সহ নানা মাছ পাওয়া যায় বাজারে। এই মাছগুলো প্রথমত ধরা হতো নদী হতে। তারপর তা তীরে এনে শুরু হতো গোনা। এরপর নানা গঞ্জের পাইকার এসে তা কিনে নিয়ে চলে যেতেন বড় বড় বাজারের মাছের আড়তে। তারপর খুচরা বিক্রেতারা কিনে নিয়ে চলে আসতেন আপনার বাসার কাছের বাজারে। কী সমারোহ তাই না?

কিন্তু আজকাল এসব মাছের রেণু উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন মৎস্য খামারে। মা মাছ ও বাবা মাছের মিলনে উৎপন্ন হচ্ছে ডিম আর সেই ডিম নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফুটে বের হয় রেণু পোনা। সেগুলো নিয়ে চৌবাচ্চায় ধানী পোনা বানানো হচ্ছে ডিমের কুসুমের মতো পুষ্টিকর খাবার দিয়ে। এরপর ছোট পুকুরে চলে সেই ধানী পোনা হতে চারা পোনা বানানোর কাজ। যেখানে খাবার হিসাবে ব্যবহার হয় উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, শামুকের কুঁচি ইত্যাদি। তারপর চারা পোনা হয়ে গেলে তা বড় পুকুরে নিয়ে ছাড়া হয় ও দেওয়া হয় ডুবন্ত অথবা ভাসমান খাবার। এগুলোকে কিছু গ্রেডে ভাগ করা হয় যেমনঃ গ্রোয়ার ১, ২, ৩ ফিনিশার ইত্যাদি।

মাঝে মাঝে রেণু পোনা বয়সের মাছগুলো হাঁড়িতে বা চারা পোনা বয়সের মাছগুলো বড় প্লাস্টিক ড্রামে করে চলে যায় দেশের প্রত্যন্ত কোণায়। এসবের একটি বড় বাজার হচ্ছে যশোর জেলার চাঁচরা এলাকা। বলা হয়ে থাকে এই এলাকাটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোনার বাজার। আমি গবেষণা করে দেখেছি এখানে প্রায় ৩৩টি হ্যাচারী হতে পোনা চলে যায় খুলনা, সাতক্ষীরা, ঢাকা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট সহ বিভিন্ন জায়গায়। প্রায় ২০টি বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় মাছের পোনাসহ স্পেশাল অর্ডার করলে আরও ২০টি কষ্টলব্দ মাছের পোনা পাওয়া যায় যেমন গুতুম, শোল বোয়াল, গুচি বাইম, বেলে, মলা ইত্যাদি। চলবে…..