মাটি ছাড়াই সবজি চাষ!

587

অনেকেই ছাদে বাগান করেন। এমন বাগান করা যাঁদের শখ, তাঁদের বেশির ভাগই মৌসুমি ফলের গাছ বা ফুলগাছ লাগান। সারা বছরের পরিচর্যায় কিছু ফল পাওয়া যায় কয়েক মাস। এর জন্য ধকলও কম না, মাটি আনা থেকে সার, পানি দেওয়া ইত্যাদি। তবে প্রতিদিনের রান্নায় যদি নিজের হাতের শাকসবজি পান? ছাদের বাগান থেকেই সেটা সম্ভব। ছাদে মাটি টেনে তোলার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নতুন ধরনের চাষ পদ্ধতি। আরও স্পষ্ট করে বললে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহেল বাকী। তাঁর ভাবনা এরই মধ্যে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তিনি। তিনি কার্যালয়ের পাশে অফিসার্স বিল্ডিংয়ের ছাদে মাটি ছাড়া শাকসবজির চাষ করে সাফল্যও পেয়েছেন। ছাদের ভার বহনের ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছের মাটির চেয়ে হালকা কোকোমাস (নারিকেলের ছোবড়া) ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়া থেকে পাওয়া গুঁড়া)। তিনি এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘হালকা জৈব মাধ্যমে শাকের চাষ’।

চাষ পদ্ধতি
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষিবিদ আবদুল্লাহেল বাকী বিস্তারিতভাবে বলেন:
১. মাটির চেয়ে হালকা জৈবপ্রযুক্তির এই মাধ্যমের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে কোকোমাস ও কোকোডাস্ট।
কোকোডাস্ট পাওয়া যাবে আগারগাঁওয়ের গ্রিন সেভারসসহ বড় সব নার্সারিতে। পরিমাণে বেশি লাগে, তাই নিতে পারেন ৫০ কেজি ওজনের বস্তাভর্তি কোকোমাস। বস্তাপ্রতি দাম পড়বে প্রায় ৫০০ টাকা। আর কোকোমাস পাওয়া যাবে লেপতোষক-জাজিম বানানোর দোকানে।
২. দোকান থেকে অল্প পরিমাণে কোকোডাস্ট নিলে তাতে খুদে জীবাণু বা ক্ষতিকর কোনো কিছুর উপস্থিতি থাকতে পারে। তাই তা শোধন করে নেওয়া ভালো। রাসায়নিকভাবে কৃষি পরীক্ষাগারে, গরম পানি ব্যবহার করে, সেদ্ধ করে কিংবা বালাই ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে কোকোডাস্টের বিশুদ্ধতা আনা যায়।

৩. এবার বেড বা বিছানা তৈরির পালা। দৈর্ঘ্য হবে ১০ ফুট আর প্রস্থ ৩ ফুট। গভীরতা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। চারপাশে পরপর ইট বিছিয়ে নিতে হবে। বেডের মাপ অনুযায়ী পলিথিন এমনভাবে বিছিয়ে নিতে হবে যাবে ইটও ঢাকা পড়ে। ইটের সঙ্গে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে সংযোগের প্রয়োজন নেই। বৃষ্টির পানি জমে গেলে সহজেই ইট সরিয়ে পানি অপসারণ করা যাবে।
৪. ৬-৮ ইঞ্চি গভীরতার ক্ষেত্রে বেডের নিচের দেড় থেকে ২ ইঞ্চি অংশ কোকোমাস দিয়ে খুব আঁটসাঁটভাবে পূর্ণ করতে হবে। এবার ওপরের বাকি অংশ কোকোডাস্ট দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।
৫. বেড তৈরির সময়ই নাইট্রোজেন, পটাস, সালফারসহ প্রয়োজনীয় সব সার নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ৪-৫ দিন পর শাকের বীজ বুনে দিন। সাধারণত পুঁইশাক, লালশাক, ডাটাশাক, পালংশাক, পাটশাক, লাউ, রাই বা সরিষা শাক থেকে শুরু করে ধনিয়া পর্যন্ত খুব ভালোভাবে চাষ করা যায়।
৬. একই বেডে একই বীজ একদিনে না বুনে পরপর তিন ধাপে তিন দিনে ফেললে শাক পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠবে। এতে অনেক দিন ধরে খাওয়া যাবে।
৭. পাখির হাত থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে ও উপরে জাল টেনে দেওয়া যেতে পারে।
৮. প্রতিদিন পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে অল্প সার দেওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সার শাকের পাতা ঝলসে দিতে পারে, এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে। তাই সার দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
১৪ মার্চ এই বাগান দেখতে আসেন গ্রিন সেভারসের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি। তাঁর মতে, এটি নগরকৃষির ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে ছাদ নোংরা হওয়ার ঝামেলা কম। মাটির চেয়ে এ পদ্ধতিতে চাষ করলে ছাদের ওপর চাপ (লোড) পড়ে কম। প্রতি বর্গমিটারে যেখানে ৪০ কেজি মাটির প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ৪ থেকে ৫ কেজি কোকোডাস্টই যথেষ্ট। ফলে ওজন কমে আসে অনেকটাই। এতে করে ছাদের ভার বহনে কোনো সমস্যা হয় না।

কিছু সতর্কতা
নগরকৃষিতে সবার আগে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হয়। আর এই মাধ্যমে তা আরও জরুরি। মাটির টবে ভুল করে দু-একদিন পানি দেওয়া না হলেও হয়তো গাছ টিকে থাকে। কিন্তু কোকোডাস্টের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। তবে ছাদেই যেহেতু পানির ট্যাংক থাকে, তাই সহজেই পাইপ দিয়ে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
নিচে পলিথিন থাকে বলে ছাদ ঘামতে পারে। নতুন ছাদের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হলেও পুরোনো ছাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতি তিন মাস পরপর বা এক ফসল পর পলিথিনসহ বিছানো বেডের স্থান বদলে দিতে হবে।

source:Prothom alo

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৭জুন২০