মাত্র একটি ছাগী বদলে দিল রানীর জীবন

394
ছবি: তরিকুল ইসলাম মিঠু
ছবি: তরিকুল ইসলাম মিঠু

তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর থেকে: একটিমাত্র ছাগীর ছয় বাচ্চায় বদলে দিয়েছে রানী (৪৭) নামে এক নারীর জীবন। এ নারী তিন সন্ত্রানের জননী। কোন রকম ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে থাকেন যশোর রায়পাড়ার বিএডিসি সার গোডাউনের মোড়ে।
স্বামী মিজানুর রহমান পেশায় এক জন রিকশাচালক। বছর দশেক আগে স্থানীয় একটি বাজার থেকে দেশি জাতের একটি ছাগল কিনে পুষতে শুরু করেন। কয়েক মাস পোষার পর ওই ছাগীটি ছয়টি বাচ্চা প্রসাব করেন। সেই থেকে রানীর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছাগীটি প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর পাঁচ থেকে ছয়টি করে বাচ্চা দেয়।

গত সোমবার সকালে ছাগীটি আরো ছয়টি বাচ্চা প্রসাব করেছে। রানীর স্বামী মিজানুর ছাগল পোষার সুবাধে মাঝে মধ্যে নিজের ছাগলের জন্য বাজার থেকে কাঁঠালের পাতা কিনে নিয়ে আসেন। সেই সুবাধে তিনি কাঁঠালের পাতা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বিক্রিও করেন দিনের কিছুটা সময়। রানীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এই ছাগীর বাচ্চা বিক্রি করে মেয়েটিকে মাধ্যমিক পাস করিয়ে বিয়েও দিয়েছেন। ছাগল বিক্রির অর্থ দিয়ে বড় ছেলে হানিফ শিমুলকে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করিয়েছে। এখন বিসিএস পরীক্ষার জন্য ঢাকাতে পাঠিয়েছে রানী। আর ছোট ছেলে মিরাজুর রহমান ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদক তরিকুল ইসলাম মিঠুর সাথে কথা হয় রানীর। এসময়ে তিনি আবেগাপ্লুত কন্ঠে জানান, ভাই আপনাকে যে আমি বসতে দেব সে ব্যবস্থা আমার নেই। আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। কোন রকম এ ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে বসবাস করি দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে। আমি বছর দশেক আগে একটি ছাগী কিনেছিলাম। সেই ছাগী প্রায় ছয় মাস অন্তর অন্তর পাঁচ থেকে ছয়টি করে বাচ্চা দেয়। গত সোমবারও আমার পোষা ছাগীটি ছয়টি বাচ্চা দিয়েছে। তবে গতকাল একটি বাচ্চা মারা গেছে। এই ছাগীর বাচ্চা বিক্রি করে আমি বড় ছেলেটিকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি। আরো একটি ছেলে পড়াশুনা করে। আমার স্বামী সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের ঠিকমত সংসারই চলে না। বলতে পারেন এই ছাগীটি আমার সন্তানদের লেখাপড়া চালানোর একমাত্র অবলম্বন।

রানী

যশোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পাদ দপ্তরের ডাক্তার তপনেস্বর রায় বলেন, “আমরা এলাকার ছাগল, ভেড়া ও গরুসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণির নিরালসভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া যারা দরিদ্র সীমার মধ্যে বসবাস করে তাদের গরু-ছাগলও হাসমুরগি পোষার জন্য তাগিদ করে আসছি। অসময়ে যাতে এসব ছাগল-গরু বিক্রি করে তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে লেখা পড়া করাতে পারে। সূত্র: এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন