মানসম্পন্ন ফিড তৈরিতে দরকার মানসম্মত সয়া প্রোটিন

ঢাকায় রাইট-টু-প্রোটিন ক্যাম্পেইন ও স্টেকহোল্ডার সভা অনুষ্ঠিত

157

নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস উৎপাদনের জন্য মানসম্মত ফিড অপরিহার্য। অন্যদিকে ভাল মানের ফিডের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে দরকার উন্নতমানের কাঁচামাল বিশেষ করে- সয়াবিন, সয়াবিন মিল ও ভুট্টা। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সয়া প্রোটিন রপ্তানি করলেও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়া প্রোটিন- মানের মাপকাঠিতে উন্নততর, নির্ভরযোগ্য ও টেকসই। আজ ঢাকার একটি হোটেলে রাইট-টু-প্রোটিন ক্যাম্পেইন ও স্টেকহোল্ডার আলোচনা সভায় ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এ মন্তব্য করেন। পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে এ ক্যাম্পেইন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বিপিআইসিসি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এর সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, দেশের পোল্ট্রি, অ্যাকুয়া, ডেইরি ও গবাদি পশুখাদ্যের শতভাগ চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় ফিড ইন্ডাষ্ট্রি। বাংলাদেশে উৎপাদিত পোল্ট্রি ও ফিস ফিড এখন ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। ফিডের মানের উৎকর্ষতা, এফসিআর ও পারফরমেন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সয়া প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করা হয়। খালেদ বলেন, মানসম্মত প্রোটিন পশুর স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য খরচ কমাতে সহায়তা করে। তিনি বলেন- বাংলাদেশী ক্রেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়া প্রোটিনের কদর রয়েছে কারণ এতে প্রোটিন কনটেন্ট বেশি থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন ও খনিজ। অন্যান্য দেশের সয়াবিনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়াবিনে আর্দ্রতা কম থাকে। সর্বোপরি এটি অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ইউ.এস গ্রেহন টার্মিনাল ও সাইলো নির্মাণের প্রস্তাব করেন খালেদ। তাঁর ভাষায় এর ফলে দ্রুত পরিসেবা নিশ্চিত হবে; টেনশনমুক্ত স্টোরেজ ও পোর্ট ডেমারেজের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং ক্রেতাদের মাঝে আস্থা বাড়বে।

ইউএসএসইস ‘র দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক কেভিন রোপকে বলেন- একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তার জনগণের স্বাস্থ্য এবং সুস্থ্যতার সাথে সম্পর্কিত। এটা প্রমাণিত যে, প্রোটিন মেধার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। কেভিন বলেন, বাংলাদেশে এখনও প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটের মাঝে বসবাস করছে। সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর ও উচ্চমানের প্রোটিনের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সুবিধাবঞ্জিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

“বাংলাদেশ প্রোটিন পারসেপশন স্টাডি” শীর্ষক ইউএসএসইসি পরিচালিত একটি স্টাডির উল্লেখ করে, ইউ.এস সয়া সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড মার্কেটিং, দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রধান দিবা ইয়ানুলিস বলেন, বেশিরভাগ বাংলাদেশিই জানেনা তাঁর শরীরের জন্য ঠিক কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন। সমীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়- ৬২ শতাংশ ভোক্তা ডাল জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিনের উচ্চ-উৎস্য বলে মনে করেন। প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে- প্রোটিনের চেয়ে ভিটামিন ও মিনারেলই বেশি দরকারি। তিনজন বাংলাদেশী ভোক্তার মধ্যে একজন (ভুলভাবে) বিশ্বাস করেন যে, প্রোটিন না খেলে স্বাস্থ্যের তেমন কোন ক্ষতি হবেনা। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই জানে না যে- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের প্রোটিনের চাহিদা সাধারন মানুষের চেয়ে বেশি না কম। পুষ্টি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রোটিন বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর তাগিদ দেন দিবা ইয়ানুলিস।

ইউএসএসইসি’র বাংলাদেশ টিম-লিড খবিবুর রহমান কাঞ্চন, বলেন, প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। প্রত্যেক সচেতন মানুষের উচিত এ প্রচারাভিযানকে সমর্থন করা। তিনি বলেন, শুধু নিজেদের কথা ভাবলেই চলবে না। ভবিষ্যত প্রজন্মকে মেধাবি ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা প্রোটিন জরুরি তা জানাতে হবে এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ প্রোটিনকে সুলভ ও সহজলভ্য করতে হবে।

ফিআব সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এমবিএম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাংলাদেশে সয়াবিন মিলের কনজাম্পশন বেড়েছে। সয়াবিন মিলের মোট বার্ষিক চাহিদা ২.৫ থেকে ২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। তাঁর ভাষায় ডলার সংকট ও সরকারি কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ফিড মিলার ও সয়া আমদানিকারকগণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

বাংলাদেশি ক্রেতাদের জন্য বিশেষ দর, বন্দর ও সাইলো সুবিধা এবং জাম্বো ভ্যাসেলের জন্য আকর্ষণীয় ভাড়া দেয়া হলে ইউ.এস সয়াবিনের কদর আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন ফিড মিলারগণ।

আলোচনা সভার সঞ্চালক ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিরাজুল হক বলেন- বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৭.৫ থেকে ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ফিড উৎপাদন করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে; সর্বোপরি সরকার ঘোষিত খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়াতেই হবে।

সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন- ইউ.এসএসইসি’র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের হেড অব এনিমেল ইউটিলাইজেশন, সুসিল সিলভা এবং হেড অব এ্যাকুয়াকালচার, চন্দ্রশেখর শঙ্করানারায়ণ। প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ইউ-কে বাংলা ফিড এর সিইও মো. জাহিদুল ইসলাম এবং এগ্রোটেক ফিডের কনসালট্যান্ট শ্যামল কুমার দাস, প্রমুখ। প্যারাগন গ্রুপ, নারিশ গ্রুপ, প্রোভিটা গ্রুপ, ইয়ন গ্রুপ, এসিআই গোদরেজ এগ্রোভেট প্রাইভেট লিঃ, স্পেকট্রা হেক্সা ফিডস লিঃ (মেগা ফিড), প্লানেট ফিডস লিঃ, নিউহোপ ফিড মিল বাংলাদেশ লিঃ, বিশ্বাস পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিঃ, পদ্মা ফিড এন্ড চিকস্ লিঃ, ইউ-কে বাংলা ফিডস্, এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ট্রাষ্ট (এআইটি), আগাতা ফিড মিলস লিঃ, রেনাটা লিঃ, আব্দুল্লাহ পোল্ট্রি ফিড মিল, এভান্স এশিয়া লিঃ, এনাম হ্যাচারি এন্ড ফিডস লিঃ এবং এলাংকো বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিগণ উক্ত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।