মাশরুমে লাখপতি!

738

মাশরুম

জঙ্গলে গিয়ে মাশরুম ও অন্যান্য কিছু জংলি ফল সংগ্রহ করা ইউরোপের অনেক মানুষের শখের মধ্যে পড়ে। ফিনল্যান্ডে অনেকের কাছে সেটা বাড়তি আয়েরও উৎস। গবেষকরা গোটা প্রক্রিয়াকে লাভজনক করে তোলার চেষ্টা করছেন।
বনজঙ্গল নিয়ে গবেষণা শুধু গাছপালা ও কাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জমিতেও নানা মূল্যবান সম্পদ বেড়ে ওঠে৷ তার মধ্যে কয়েকটি আবার বেশ সুস্বাদু! ফিনল্যান্ডের কারেলিয়ায় মাশরুম ও বেরি বা জামের মতো ফলের মরসুম চলছে।

এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীরা মাপজোক করছেন। জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যের ফলনের পূর্বাভাষ দিতে তাঁরা এক প্রণালি সৃষ্টি করেছেন।

গবেষক হিসেবে কাউকো সালো মনে করেন, ‘‘আমাদের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা সত্যি খুব কার্যকর, কারণ জঙ্গলে গিয়ে মাশরুম ও জাম তোলার সেরা সময় কখন, মানুষ তা জানতে চান। নিজস্ব ব্যবহারের জন্য অথবা কোম্পানিগুলির কাছে সে সব বিক্রি করা যায়৷ ফিনল্যান্ডে এমন ব্যবসা করমুক্ত।”

গাছে টাকা ফলে না ঠিকই, কিন্তু শুধু ইউরোপেই বছরে প্রায় আড়াইশ’ কোটি ইউরো মূল্যের জংলি জাম, মাশরুম, বাদাম ও গাছপালা বিক্রি হয়। ইয়ারি মিনা ও তার সহকর্মীরা এই বাজারকে আরও লাভজনক করে তুলতে চান।

ফিনিশ জঙ্গল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ইয়ারি মিনা বলেন, ‘‘আমরা জঙ্গলের চরিত্র ও সেখানে ফলনের মধ্যে সম্পর্কের প্রতি নজর দিচ্ছি। সেই জঙ্গলের ব্যবস্থাপনায় রদবদল করে কীভাবে মাশরুম ও জামের ফলন আরও বাড়ানো যায়, তা বাতলে দিচ্ছি।”

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইয়োনসু এলাকায় এক পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে মাশরুম ও জাম কিনছে। বছরের সময় অনুযায়ী এক কিলো মাশরুমের জন্য ৪ ইউরো পর্যন্ত দাম পাওয়া যায়।

মাশরুম সংগ্রহকারী মাটি কন্টুরি বলেন, ‘‘আমার কাছে এটা বাড়তি আয়ের উৎস। মরসুম ভালো হলে আমি ৫,০০০ ইউরো মূল্যের মাশরুম তুলতে পারি।”

এই কোম্পানিও গবেষকদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা আরও বৈচিত্রপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করছে। অনিশ্চিত আবহাওয়ার উপর তারা আর নির্ভর করতে চায় না।

কোম্পানির মালিক মারিয়া পাইভানুরমি বলেন, ‘‘বৃষ্টি অথবা তাপমাত্রার ওপর মাশরুমের ফসল নির্ভর করে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিলেও বাস্তবে কী হবে, তা জানার উপায় নেই। প্রতিটি দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, মনে আশা রাখতে হয়।”

গবেষকরা জঙ্গল থেকে ক্রেতা পর্যন্ত সরবরাহের শৃঙ্খলের উন্নতি করতে চান৷ তারা জমির মালিক, মাশরুম সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আয় বাড়ানো ও বাড়তি মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।

পরিবেশ অর্থনীতিবিদ রবার্ট মাভসার মনে করেন, ‘‘গোটা ইউরোপে ভালো প্রক্রিয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে এই সব অঞ্চলেও তা চালু করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশও গরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যা ফিনল্যান্ডে সফল হচ্ছে, তা স্পেনের দক্ষিণে, অথবা সার্বিয়ায়ও কার্যকর হবে, এমনটা আশা করা চলে না। কী কী সম্ভাবনা রয়েছে, আমরা শুধু সেগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।”

বাড়তি মূল্য পাবার একটি উপায় হচ্ছে জঙ্গলে সংগ্রহ করা ফসল স্থানীয় পর্যায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা। একটি কোম্পানি বেরি পিষে এমন গুঁড়া তৈরি করছে, যা বহুকাল অক্ষত রাখা যায় এবং দই বা অন্যান্য খাদ্যে মেশানো যায়।

গবেষকদের মতে, পণ্যের লেবেলের ক্ষেত্রে আরও উন্নত মানদণ্ড চালু করলে উপকার হবে। কারি কোলইয়োনেন বলেন, ‘‘বর্তমান সার্টিফিকেশন ব্যবস্থায় উৎপাদনকারী জঙ্গলেরপণ্যকে অরগ্যানিক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন না। সেটা বদলানো প্রয়োজন।”

সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষ প্রকৃতির সম্পদ কাজে লাগাচ্ছে। জঙ্গল সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে আমরা সবাই আরও পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি ও আরও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাবো।

সূত্র: ডিডব্লিউ

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন