রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছিলেন ২০১৮ সালে। এরপর তিনি চাকরির পেছনে ছোটেননি। নিজ অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছেন ভিন্নভাবে। সফলতাও পেয়েছেন আকাশচূড়া। উদ্যোক্তা হয়ে এখন তার বাৎসরিক আয় প্রায় ৬ লাখ টাকা।
বলছি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার প্রেমচাদ বিশ্বাসের ছেলে ইন্দ্রজিত কুমারের গল্পগাঁথা।
জানা যায়, ২০২১ সালে ওই এলাকায় মাশরুমের চাষ শুরু করেন তিনি । এরপর ২০২২ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় তার প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় খুব দ্রুতই তার ব্যবসা এগিয়ে যেতে থাকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার কেজি মাশরুম বিক্রি করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। আর এ ১০ লাখ টাকা আয় করতে তার খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকার মতো।
উদ্যোমী এই তরুণ উদ্যোক্তার মাশরুম চাষ পুরো এলাকাজুড়ে সাড়া পড়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেশবন্ধু মাশরুম খামার নামে ১০ শতক কৃষি জমিতে ১১০ ফিট লম্বা ৪০ ফিট চওড়া একটি ঘর নির্মাণ করে মাশরুম চাষ করছেন। তার খামারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন মেয়ে কাজ করছে। তারা সবাই মাদার, কাঠের গুড়ার স্পন, খড়ের সিলিন্ডার প্যাকেট তৈরির কাজে ব্যস্ত। ঘরের মধ্যে টানিয়েছেন শক্ত কটের সুতা দিয়ে বানানো শিকা। সেখানে স্তরে স্তরে ঝুলে আছে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো মাশরুম বীজ প্যাকেট বা স্পন প্যাকেট। ওয়েস্টার, মিল্কী ও গ্যানোডার্মা ৩ জাতের মাশরুম দেখা যায়। ওয়েস্টার মাশরুম প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা, মিল্কী মাশরুম ৩৫০-৪৫০ টাকা ও গ্যানোডার্মা মাশরুম ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন বাজারে। বর্তমানে তাদের খামারে ৫ হাজার সিলিন্ডার প্যাকেট রয়েছে।
এই খামারের টিম লিডার টুম্পা বিশ্বাস জানান, আমি অনার্সে পড়ি। পাশাপাশি এই খামারে কাজ করি। প্যাকেট প্রতি আমরা ৪-৫ টাকা পায়। গড়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা পেয়ে থাকি।
উদ্যোক্তা ইন্দ্রজিত কুমার জানান, প্রথমে ইউটিউবে কিভাবে মাশরুম চাষ করা হয় তা দেখে উদ্বুদ্ধ হন। প্রথমে মাগুরা ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে ৪ দিনের ট্রেনিং ও ২য় পর্যায়ে সাভার জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে ৩ দিনের ট্রেনিং নিয়ে কাজ শুরু করি। পরীক্ষামূলকভাবে খড়, কাঠের গুড়া, গমের ভুষি, তুষ ও চুন দিয়ে নিজেই স্পন প্যাকেট তৈরি করে মাশুরুমের বীজ বপন করি। মাশরুম চাষের জন্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি করে খড় কাটতে হবে।
এরপর সিদ্ধ করে হাল্কাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনের প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের মাদার দিতে হবে। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। এ বীজের সঙ্গে টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যায় ২০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। দুই মাসে একেকটি স্পন প্যাকেট থেকে চারবার মাশরুম পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সহায়তা কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা পেলে এ খামার বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন বলে দাবি করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩০ টন মাশরুম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, উনাকে আমরা আরও ভালমতো প্রশিক্ষণ দেব। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু উদ্যোক্তাও তৈরি করেছেন। তাদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।