মাষকলাই চাষে ঝুঁকেছেন চৌগাছার কৃষক

75

চলতি মৌসুমে যশোরের চৌগাছা উপজেলায় আশানুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে মাষকলাই চাষ। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজারে মাষকলাইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় এ অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকেছেন মাষকলাই চাষের প্রতি।

মাষকলাই মূলত চরাঞ্চলের জনপ্রিয় শস্য। মাঝারি, উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমি এবং বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি মাষকলাই উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ডালজাতীয় শষ্যটি দেশের নিচু এলাকা ছাড়া অন্য সব জায়গায় এ ফসলের চাষ লক্ষ্য করা যায়। যশোরের চৌগাছাতে এক সময় ব্যাপকভাবে চাষ হতো মাষ ও মুগ কলাই। অযতœ-অবহেলায় ফসলটি মাঠে বেড়ে উঠত। একপর্যায়ে কৃষক কলাই চাষ ছেড়ে দিয়ে শুরু করে বিকল্প সব ফসলের চাষ। এক জমিতে একই ফসল দীর্ঘদিন চাষ করায় কাক্সিক্ষত উৎপাদন কমে যায়। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষক আবারও কলাই চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে কৃষকের প্রতিটি জমিতে চাষ করা মাষকলাই এখন ফুলে ভরে উঠেছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা হলেও বৃষ্টি দীর্ঘ না হলে ক্ষতি তেমন হবে না বলে মনে করছেন কৃষক। তবে আবহাওয়া কলাই চাষের অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চৌগাছাতে ১৮০ হেক্টর জমিতে মাষ কলাই চাষ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কমবেশি চাষ হলেও স্বরূপদাহ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে কলাই চাষ তুলনামূলক বেশি। বর্তমান কলাই ফুলে ভরে উঠেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করবে। চলতি মাস থেকে শুরু হবে মুগ কলাই চাষ। এ বছর ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে মুগ কলাই চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া বর্ণী দুর্গাপুর, স্বরূপদাহ ইউনিয়নের আন্দারকোটা, খড়িঞ্চাসহ বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এসব মাঠে কৃষক ব্যাপকভাবে কলাই চাষ করেছেন। দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ জানান, তিনি চলতি বছরে আড়াই বিঘা জমিতে মাষ কলাই চাষ করেছেন। মাত্র দেড় মাস বয়স হলেও প্রতিটি গাছ ফুলে ভরে উঠেছে। কলাই চাষে ব্যয় খুবই কম, সে কারণে কৃষক আবারও কলাই চাষ শুরু করেছেন। একই গ্রামের কৃষক মন্টু মিয়া ২ বিঘা, বিল্লাল হোসেন ৩ বিঘা, পাশের গ্রাম বর্ণীর কৃষক নজরুল ইসলাম দেড় বিঘা, তরিকুল ইসলাম ১ বিঘা, বাবু ২ বিঘা জমিতে মাষ কলাই চাষ করে সাফল্যের আশা করছেন।

চাষিরা জানান, অন্য ফসলের মতো কলাই চাষে কৃষককে বেশি শ্রম দিতে হয়না। বাংলা সনের আশ্বিন মাসে কলাই বপন করা হয় এবং তিন মাসের মধ্যে তা ঘরে আসে। সার কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট। মাষকলাই আর চালকুমড়া দিয়ে শীত মৌসুমে গায়ের বধুরা ঘরে ঘরে তৈরি করে কলাই আর কুমড়া বড়ি। এ বড়ি সব বয়সের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এক প্রকার হারিয়ে যাওয়া এ ফসলের চাষাবাদে খুশি সবাই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ জনপদের চাষিরা কলাই চাষে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস চাষিদের নতুন ফসল উৎপাদনে সর্বদা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।