মা‌নিকগ‌ঞ্জে সবজিতে লোকসানের আশঙ্কায় চাষিদের

309

মো. সো‌হেল রানা খান, মা‌নিকগঞ্জ থেকে: দেরিতে বন্যার পানি নেমে যাওয়া এবং অসময়ে বৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে মানিকগঞ্জের সবজি চাষিরা। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে চলতি মৌসুমে লোকসানের আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বন্যা আর বৃষ্টিতে মানিকগঞ্জে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এই সময়ে আগাম শীতকালীন সব‌জি চা‌ষে শীতকালীন সবজিতে ভরে থাকতো ফসলের মাঠ। তবে, চলতি মৌসুমে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই হোচট খেয়েছে মা‌নিকগ‌ঞ্জের স্থানীয় চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে চলতি মৌসুমে মাত্র চার হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ করেছে জেলার চাষিরা। যা গতবা‌রের তুলনায় তা অর্ধেক।

পাড়াগ্রা‌মের সব‌জি চাষি রাজা মিয়া জানান, প্রায় ২শ শতাংশ জ‌মি‌তে আগাম শীতকালীন সব‌জি ফুলক‌পি চাষ ক‌রে ছিলাম। সম্প্রতি অসম‌য়ে টানা বৃ‌ষ্টি‌তে ক‌পিতে পচন ধ‌রে নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে।

একই গ্রা‌মের আ. র‌শিদ জানান, এবার অসম‌য়ে বৃ‌ষ্টি‌তে সব‌জির ব্যাপক ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে। সবজি যা জ‌মি‌তে বপন করা ছি‌ল তা নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে। আমরা পুনরায় সব‌জি বপন কর‌ছি।

সাটুরিয়া উপজেলার কামতা গ্রামের সবজি চাষি কাদের মিয়া জানান, এবার বন্যা হয়েছে দেরিতে। আর বন্যার পানি নামতেও সময় নিয়েছে বেশি। যে কারণে সবজির চাষ শুরুও হয়েছে একটু দেরিতে। এরপর কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সবজির অনেক চারা নষ্ট হয়েছে। এ সব কারণে নতুন করে সবজির আবাদ করতে হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক ফজর আলী জানায়, এবারের বন্যা আর বৃষ্টিতে তার বেগুন, করলা, লালশাক ও ধনে পাতার খেত নষ্ট হয়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে সবজির আবাদ শুরু করলেও এ বছর সবজি থেকে লাভ তো দূরের কথা চালান উঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

একই উপজেলার চর তিল্লী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি সবজির আবাদ করেছিলেন। প্রকৃতি বিপর্যয়ে তার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন নতুন করে সবজির আবাদ করতে পর্যাপ্ত টাকা তার কাছে নেই। সেই সঙ্গে ঋণের টাকা পরিশোধ কীভাবে করবেন সেই চিন্তাতেই রাতের ঘুম হারাম হয়েছে তার।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দেড়গ্রাম এলাকার কৃষক তোতা মিয়া জানায়, ধারদেনা করে আবারও সবজির আবাদ শুরু করেছি। সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া জানায়, এ বছরের বন্যায় সবজি, রোপা আমন, বোনা আমনে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই টাকা থেকে ১৮ হাজার ২৩৭ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। পরে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ২৯৫ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে কৃষকরা আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের চাষাবাদে লাভবান হতে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন