নওগাঁ : জেলায় দিন দিন বাড়ছে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ। সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় এবং পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় প্রতি বছর সুস্বাদু ও জনপ্রিয় এ সবজির আবাদ করতে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে। নওগাঁ’র এ মিষ্টি কুমড়া এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এবার ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামে খুশি কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, নওগাঁ জেলায় এবছর ৩৬৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, বদলগাছী উপজেলায় ৬০ হেক্টর, মান্দা উপজেলায় ৬০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় কম বেশি মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়। গেল বছর ২৬০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছিল।
মিষ্টি কুমড়া সুস্বাদু সবজি আর সারা বছরই পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া শাকও পুষ্টিকর খাদ্য। এ সবজির বীজ বোনার সময় শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়ন সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত। মৌসুমি সবজি আলু, পটল, শিম, বেগুন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ হয়ে থাকে। মৌসুমভিত্তিক ফসল চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় ফলে প্রতি বছরই মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে।
সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, ছয়কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। হাল চাষ, সার, ওষুধ ও মাঁচাসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন আট হাজার টাকা।
উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের খাইরুল আলম বলেন, মিষ্টি কুমড়া আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় ১৬-১৮ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় প্রায় ১০০-১২০ মণের মতো উৎপাদন হয়। পাইকারি দরে ৮-১০ টাকা কেজিতে প্রতিটি কুমড়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। দাম আরেকটু বেশি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। তবে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে এ সবজির আবাদ। দাম ভালো পাওয়া গেলে আগামীতে আরও আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
বর্ষাইল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা কোনো ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। আমরা যে মিষ্টি কুমড়া ৮-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে। কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হয়। সবজিতে সরকার নজরদারী বাড়ালে আমরা কৃষকরা ন্যায্য দাম পেতাম এবং কিছুটা লাভবান হতে পারতাম।
সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া আড়তে নিয়ে আসে। এ এলাকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া ঢাকা, যশোর, খুলনা, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম বলেন, মাটিতে লাউ নষ্ট হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে চাষিরা মাঁচা করে আবাদ করছেন। মিষ্টি কুমড়ার আবাদে সঠিক সময়ে পরাগায়ন হলে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। মৌসুমভিত্তিক ফসল চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকদের মাঝে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিএসএস।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এমএস