মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পচা, ছাল ওঠা বার্মিজ পেঁয়াজ নিয়ে রীতিমতো হতাশ ব্যবসায়ীরা। পুঁজি তুলতে বর্তমানে নামমাত্র মূল্যেই এ পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু ক্রেতাদের নূ্যনতম আগ্রহ না থাকায় তাদের হতাশা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
দেশের বাজারে চলমান সংকট দূর করতে সম্প্রতি ভারতের বিকল্প হিসেবে মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইতোমধ্যে মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের কয়েকটি চালান বাজারেও চলে এসেছে। কিন্তু মিসরের পেঁয়াজের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও, মিয়ানমারেরগুলো নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১ অক্টোবর থেকে দেশের বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। কিন্তু আড়তে মাল খালাসের পরপরই তাদের চোখে পড়ে পচা, ছাল ওঠা ও গাছ বের হওয়া পেঁয়াজ। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনের পেঁয়াজ আরও বেশি পচা। ফলে অনেক পেঁয়াজই ফেলে দিতে হয়। একই সঙ্গে লাভের আশা বাদ দিয়ে অর্ধেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করতে হয় তাদের। অনেকেই আধাপচা পেঁয়াজ ১২, ১৫, ১৮, ২৫, ৩০ টাকায় বিক্রির চেষ্টা করছেন। ভালো পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এলসি খোলা ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি ও তা বন্দরে খালাস করে মোকাম পর্যন্ত আনতে কেজিতে খরচ পড়ছে প্রায় ৫৬ টাকা। সে পেঁয়াজ ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলেও লাভের সম্ভাবনা আছে, কিন্তু সে সম্ভাবনা হুমকির মুখে। এদিন শ্যাম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিছু দোকানে মিয়ানমারের আধাপচা পেঁয়াজ সর্বনিম্ন ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দামে কম এসব পেঁয়াজের এক-তৃতীয়াংশই পচা। খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই এ পেঁয়াজ দেখে দাম না করেই মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন।
পেঁয়াজের পাইকার মো. আমজাদ আলী বলেন, শুক্রবার আমাদের দুটি আড়তে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ৪২০ বস্তা পেঁয়াজ আসে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পচা। লাভতো হবেই না, শতভাগ লোকসানে পড়তে হবে। ‘অনেক বস্তা ফেলে দিয়েছি। এর মধ্যে আধাপচা কিছু ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এর চেয়ে যেগুলো কিছুটা ভালো সেগুলো ১৫, ১৮, ২৫, ৩০ বিভিন্ন দামে বিক্রি চলছে। তবে কিছু পেঁয়াজ ভালো আছে, সেগুলো ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। একই কথা জানান অভিসার বাণিজ্য ভান্ডারের পরিচালক টটন রায়।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংকট ছিল এটাতো নতুন কিছু না। একটু সময় নিয়ে আমদানি করা প্রয়োজন ছিল, তড়িঘড়ি করে আমদানি করতে গিয়ে পেঁয়াজের মান ঠিক রাখা যায়নি। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ পচা, বেশির ভাগ পেঁয়াজে গাছও উঠে গেছে। ব্যবসায়ীরা এবার বিনিয়োগের টাকা ঘরে তুলতে পারবে না। অন্যদিকে বাজারে বর্তমানে মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেজি ৫০ থেকে ৫২ ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আগের এলসি থেকে প্রায় ১৫০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ নতুন করে বাজারে এসেছে। এগুলো আকারভেদে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি চলছে। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ