মুদি দোকানি মিলনের উদ্ভাবিত ধান বিঘায় ৪৩ মণ

443

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক মিলন হোসেন। মিলন নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। ওই ধান প্রতি বিঘায় ৪৩ মণ উৎপাদন হয়েছে। এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নিজের উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান চাষ করে। এক বিঘা জমিতে ধান পেয়েছেন ৪৩ মণ।
তার সফলতা দেখে এ ধানের বীজ সংগ্রহে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। একই সঙ্গে কৃষি বিভাগও এ বীজ গবেষণাগারে পাঠিয়েছে।

মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউপির চক গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন ছোট মুদি দোকানি। একইসঙ্গে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় তার দেখা দেখি এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কৃষক মিলন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিন বছর আগে তিনি ব্রি ধান-৫১ জাতের ধান চাষ শুরু করেন। সে সময় তার জমিতে ভিন্ন ধরনের এক গোছা ধানের গাছ দেখা যায়। অন্য গাছের তুলনায় গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা ও মোটা। তিনি গাছগুলোকে তুলে ফেলে না দিয়ে অন্য ধানের সঙ্গে রেখে দেন। পরে দেখেন ওই গোছার শীষে অনেকগুলো ধান। তখন তিনি ধানগুলোকে আলাদা করে কেটে রেখে দেন। পরবর্তীতে ধানগুলো আলাদা করে চারা দিয়ে অল্প কিছু জমিতে চাষ করেন। পরের বছর সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পুনরায় দুই বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করেন।

এ ধানের জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭০০-৭৫০টি করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

ধানের নামকরণ সম্পর্কে তিনি জানান, যেহেতু এ ধানের কোনো নাম নেই তাই তিনি তার মেয়ের নামোনুসারে এ ধানের নাম রেখেছেন ‘ফাতেমা ধান’।

উদ্ভাবক-উদ্যোক্তা মিলন হোসেন জানান, এ বোরো মৌসুমে তিনি এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছেন। যেহেতু এ ধান ইতোপূর্বে কেউ চাষ করেননি। তাই আশপাশের এলাকার চাষিরা এসে বীজ হিসেবে এইধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে এ ধান বিক্রি করছেন। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে তিনি ধান বিক্রি করেছেন। এ ধান আরও উন্নত করে কৃষকদের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যেসব ধান চাষ করি তার তুলনায় এ ধানের ফলন তিনগুণ বেশি। আমরা চাই সরকারিভাবে এ ধান কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হোক।

কৃষক সেলিম হোসেন জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তিনি কৃষক মিলনের এ ধান দেখতে এসেছেন। মিলনের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তিনি এ ধান চাষ করবেন।

নতুন জাতের জেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বলেন, সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে ১৫০-১৬০টি করে দানা থাকে। কিন্তু কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত এই ধানের প্রতিটি শীষে ৭০০-৭৫০টি করে দানা হয়েছে। ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৪০-৫০ মণও হতে পারে।

এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, কৃষক মিলন নিজের চেষ্টায় ব্রি ধান-৫১ জাতের মধ্য থেকে কয়েকটা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নতুন এ জাত উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের আধুনিক ধান চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরইমধ্যে আমরা কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত এ ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছি। একইসঙ্গে আগামীতে এ ধানের বিস্তার লাভ করবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৮জুন ২০২১