মুনিয়া পাখি পালন পদ্ধতি

1983

maxresdefault (1)
মুনিয়া মূলত আমাদের এশিয়ান একটি পাখি। সাধারণত বনে জঙ্গলে এবং খেতে খামারে এই পাখিটি বসবাস করে। বর্তমানে অনেকেই শখ করে পাখিটি বাড়িতে পুষে থাকে। এখানে মুনিয়া পাখি পালন এর সঠিক নিয়ম কানুন , মুনিয়া পাখির খাবার তৈরির নিয়ম, মুনিয়া পাখির ব্রিডিং পদ্ধতি, মুনিয়া পাখির জন্য খাঁচার সাইজ, মুনিয়া পাখির যত্ন , ও পরিচর্যা করার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

পাখির খাঁচা : মুনিয়া পাখি পালন করার জন্য খাঁচার আকৃতি সঠিক হওয়া প্রয়োজন। ছোট খাঁচায় মানে ১২”/১২” খাঁচায় একজোড়া মুনিয়া পাখি পালন করতে পারেন। তবে বাজরিগার পাখির জন্য ব্যবহৃত খাঁচায় যার আকৃতি ১২”/ ১৮” ইঞ্চি এই পাখিটি পালন করলে খাচা প্রতি তিন জোড়া করে পাখি পালতে পারবেন। এরকম একটি খাঁচায় তিনটি করে ছোট আকারের হাড়ি স্থাপন করা যাবে। পাখিগুলো রাখার যেহেতু ছোট হয়েছে খেতে খেয়াল রাখতে হবে হারির আকার যেন এদের জন্য খুব বেশি বড় না হয়ে যায়। এভাবে একটি খাচার মধ্যে তিন জোড়া পাখি অনায়াসেই পালা যাবে। এছাড়া খাচার ভেতর একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ শুকনো দূর্বাঘাস ও নারিকেলের ছোবড়া রেখে দিন। এতে দেখবেন মুনিয়া পাখি নিজেরাই ওই খরকুটো গুলো নিয়ে হাড়ির ভেতর বাসা তৈরি করছে।

মুনিয়া পাখি কত বছর বাঁচে ? এ প্রশ্নটির উত্তর নির্ভর করে পাখিটি কি অবস্থায় পালন করা হচ্ছে কিছুটা তার ওপর। প্রাকৃতিক পরিবেশে এই পাখিটি ৭ থেকে ৮ বছর বেঁচে থাকে । কিন্তু খাচায় পালন করলে এদের গড় আয়ু ৪ বছর। এসব দিক বিবেচনা করে কখনোই তিন বছরের বেশি বয়সী মুনিয়া পাখি পালন করবেন না। এর কারণ হলো খাচায় পালন করা পাখি গুলো সাধারণত আর্টিফিশিয়ালি ব্রিডিং করিয়ে তৈরি করা হয়। এজন্য এদের জীবনকাল কম হয় ।

পুরুষ ও মহিলা মুনিয়া পাখি চেনার উপায়: পুরুষ এবং মহিলা মুনিয়া পাখি চেনার উপায় হচ্ছে এদের কালার দেখে বুঝে নিতে হবে। সাধারণত পুরুষ পাখির কালার গুলো তুলনামূলক মহিলা পাখির চাইতে বেশি উজ্জ্বল হয়। অপর দিকে মহিলা পাখির গায়ের রং তুলনামূলক কম উজ্জ্বল হয়। পুরুষ পাখি চেনার আরো একটি উপায় হচ্ছে এদের গলার সার্কেল । পুরুষ পাখিগুলোর গলা পর্যন্ত যে সার্কেল টি থাকে এটি বেশ গারো রংয়ের হয়। মুনিয়া পাখি পালন করলে আপনাকে এদের কালার দেখে পুরুষ এবং মহিলা সিলেক্ট করতে হবে।

মুনিয়া পাখি কত দিন বয়সে ডিম পাড়ে: মুনিয়া পাখি সাধারণত অ্যাডাল্ট হতে সময় লাগে তিন থেকে চার মাস। মোটামুটি চার মাস বয়সে এরা ডিম দিতে শুরু করে। এবং প্রতিবারে তিন থেকে পাঁচটি পর্যন্ত ডিম দেয়। সঠিকভাবে মুনিয়া পাখির যত্ন ও পরিচর্যা করলে এর আগেও ডিম বাচ্চা করার সম্ভাবনা থাকে। পাখিগুলো ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৫ দিন । এবং ডিমে পুরুষ ও মহিলা দুইটি পাখি পালা করে তা দেয়। নতুন জন্ম নেয়া ছোট বাচ্চা গুলো তিন থেকে চার মাসের মধ্যে অ্যাডাল্ট হয়ে যায়। এগুলোর বয়স চার মাস হলে এদের জোড়া আলাদা করে খাঁচায় হাড়ি দিয়ে দিতে হবে।

মুনিয়া পাখির খাবার: মুনিয়া সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শস্য বীজ খেয়ে থাকে। মুনিয়া পাখির খাবার সম্পর্কে বলতে গেলে এদের খাবার রুটিন কে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে হবে।

১. মুনিয়া পাখির প্রতিদিনের খাবার: খাঁচায় মুনিয়া পাখি পালন করলে প্রতিদিন খাবার হিসেবে এদের কাউন এবং চিনার মিক্সার অর্ধেক অর্ধেক করে দিতে হবে। এর সাথে অল্প করে তিল ও তিসির বীজ মিক্স করে দেবেন। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার: ডিম পাড়ার সময় এবং বাদশা বৃত্তির সময়ে দে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে সেজন্য মাঝে মাঝে সমুদ্রের ফেনা ঝিনুকের গুড়া এবং মিনারেল ব্লক পাখির খাচার ভেতর দিয়ে রাখবেন । এগুলো পাখির দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করবে। শাকসবজি : মুনিয়া পাখি কে মাঝে মাঝে কিছু পরিমাণ শাক-সবজি দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন । সবুজ সবজি দিতে পারেন। সবুজ শাকসবজি গুলোর মধ্যে কলমি শাক, পালং শাক, বা দূর্বা ঘাস এদের খাবার হিসেবে দিতে পারেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/৯জানু২০২০