শীতের আগমনে বর্ষায় ডুবে থাকা মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ ফসলি জমিগুলো জেগে উঠেছে। এসব জমিতে আলু রোপণে ব্যস্ত কৃষক। জেলার ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে এখন পুরোদমে আলু রোপণ উৎসব চলছে। জেলার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলু রোপণের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
জেলার সদর উপজেলা, টঙ্গিবাড়ী, সিরাজদীখান, লৌহজং, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলায় আলু আবাদে ব্যস্ত থাকা কৃষকদের সাহায্য করে যাচ্ছেন বাড়ির গৃহিণী, ছেলেমেয়েসহ স্বজনরা। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লক্ষাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকও।
তবে বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি মূল্যে বিক্রি করায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে দিশেহারা কৃষক। ফলে আলু রোপণ উৎসবেও কৃষকের মনে ছোঁয়া লেগেছে বিষাদের। এ জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন তারা।
সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আলু রোপণ করে লাভের আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। সদর উপজেলার চরকেওয়ার, আধারা, শিলই, মহাকালী, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বিভিন্ন উপজেলাজুড়ে আলু রোপণকাজে কৃষকের ব্যস্ততার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। বাড়ির আঙিনায় কৃষকদের সহযোগিতায় গৃহিণীরাও যুক্ত হয়েছেন। গ্রামে গ্রামে এখন বইছে আলু রোপণ উৎসবের আমেজ।
সিরাজদীখানের রাজানগর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, গত বছর আলু রোপণ করে ভালো দাম পেয়েছেন। তাই এবারও রোপণ করেছেন। কিন্তু দ্বিগুণ দামে আলুর বীজ ও সার কেনার কারণে এবার উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবার ৩ কানিতে আলু রোপণ করেছেন গজারিয়ার ইমামপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে বীজ আলুর দাম অনেক বেশি। এখন বীজ আলুর বস্তা ৪ হাজার টাকা। আর বাক্স আলুর দাম কোথাও ২৫ হাজার টাকা আবার কোথাও ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাই গতবারের তুলনায় এ বছর কানিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের টরকী গ্রামের আলুচাষি মো. নূর বলেন, এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করছেন। এবার আলুবীজের দাম অনেক বেশি। সার সংকট না থাকলেও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ জুলেখা বেগম জানান, এবার তারা ৬০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করছেন। এ জন্য কৃষক স্বামীকে সাহায্য করতে নিজবাড়ির উঠানে বসেই আলু কেটে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী গৃহবধূরাও মজুরি পাওয়ায় আশায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা আলু রোপণের কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জড়ো হচ্ছেন। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর তারা আলু রোপণে জমিতে কাজ শুরু করছেন।
রংপুর থেকে আসা শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী, কোথাও দিন হিসেবে মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমিতে আলু রোপণকাজ করছেন। রোপণকাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আলু তোলার সময় তারা আবারও আসবেন মুন্সীগঞ্জ জেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির জন্য ৬৯ হাজার ৩১০ টন আলুর বীজ প্রয়োজন। এ চাহিদার বিপরীতে ৫৪ হাজার ৬৭০ টন মজুত থাকলেও ঘাটতি রয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার টন বীজ আলু। তবে বীজ আলুর কৃত্রিম সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এ মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমি। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ টন, যা গত বছর ছিল ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টন।