মুন্সীগঞ্জে ক্ষেতের আলুগুলোতে ব্যাপক আকারে পচন রোগ ছাড়িয়ে পড়েছে। ঘন ঘন ওষুধ স্প্রে করেও রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না আলু চাষিরা। ফলে দুর্ভোগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তাদের।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেশ কিছু আলু জমি ঘুরে দেখা গেছে, জমির আলু গাছগুলোর পাতা কুকড়ে গেছে। অনেক জমিতে আলু গাছের কাণ্ড পচে গেছে। দামি দামি ব্যান্ডের ওষুধ ব্যবহার করেও রোগবালাইয়ের হাত থেকে আলু গাছগুলোকে রক্ষা করতে পারছেন না আলু চাষিরা।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী, বলই, বালিগাঁও, পাঁচগাঁও, মান্দ্রা, মুটুকপুর, ধীপুর, সদর উপজেলার বজ্রযোগীনি মামাসার, আটপাড়া, মহাকালী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ আলু জমির গাছগুলোর পাতায় ঠোসা পরে রয়েছে অনেক জামির আলু গাছের কাণ্ড পচে গাছগুলো মাটিতে মিশে গেছে। কৃষক দামি দামি ব্যান্ডের ওষুধ স্প্রে করছেন। তারপরেও ছড়িয়ে পড়েছে রোগবালাই। সাধারণত নামি দামি ব্যান্ডের ওষুধগুলোতে ১২/১৫ দিন পর পর স্প্রে করার কথা বলা থাকলেও কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে ওষুধ স্প্রে করছেন। এছাড়া জমি পরিষ্কার এবং জমিতে সেচ প্রয়োগ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
বলই গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহেই ঔষধ স্প্রে করছি। তারপরেও আলু গাছে রোগ বেড়েই চলছে। ওষুধ কোম্পানির লোকজন জমিতে এসে বিভিন্ন প্রদ্ধতিতে ওষুধ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা তাদের শিখানো প্রদ্ধতিতে স্প্রে করছিও কিন্তু তারপরেও রোগ বালাই বেড়েই চলছে।
বজ্রযোগীনি গ্রামের কৃষক মো. মনির হোসেন বলেন, জমিতে ওষুধ দিয়েই চলছি। কিন্তু রোগ বালাইতো কিছুতেই থামছে না । বাজারের সবচেয়ে দামি ওষুধ ২৫০ গ্রাম ৯০০ টাকায় কিনে জমিতে দিলাম তারপরেও রোগবালাই বেড়েই চলছে।
এর আগে এ বছর আলু চাষ করতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জের কৃষক দুদফা বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একদিকে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়।অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের কারণে আলু চাষ এক মাসের বেশি সময় বিলম্ব হয়েছে। আলু চাষের জন্য নভেম্বর মাস উত্তম সময় হলেও এ বছর জানুয়ারি মাসের অর্ধেক সময় পর্যন্ত জমিতে আলু চাষ করতে দেখা গেছে কৃষকদের।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা চেয়েও বেশি ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। যখন মুন্সীগঞ্জে ঘন কুয়শা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল তখন আমাদের আলু গাছের গ্রোথ তেমন না থাকায় রোগ বালাই গাছগুলোকে আক্রান্ত করতে পারেনি। এখনো আবহাওয়া ভালো কিন্তু তারপরেও যদি রোগবালাই বা পচন রোগে আলু গাছ আক্রান্ত হয় তাহলে একরোভেড এমজেড অথবা সিকিউর জাতীয় ওষুধ সপ্তাহে একবার ভালোভাবে পুরো আলু গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আর যদি গাছ পচন রোগে আক্রান্ত না হয় তবে ডায়থেনএম-৪৫, একরোভেট এম-৪৫ জাতীয় ওষুধ স্প্রে করতে হবে।