ভ্যাক্সিনের কার্যকর হওয়ার জন্য ভ্যাক্সিন প্রয়োগ পদ্ধতি একটি বড় বিষয়। কি পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে তা খামারে মুরগির সংখ্যা এবং বয়সের উপর নির্ভর করে।সাধারণতঃ দুটি পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা যায়।
১. একক ভ্যাক্সিনেশন।
২. ম্যাস (Mass) ভ্যাক্সিনেশন বা গ্রুপ ভ্যাক্সিনেশন।
একক ভ্যাক্সিনেশন : একক ভ্যাক্সিনেশন বলতে প্রতিটি মুরগিকে আলাদা আলাদাভাবে ভ্যাক্সিন প্রায়োগকে বুঝায়। চোখে ড্রপ, চামড়ার নিচে, মাংসে ইনজেকশন,ঠোঁট ডুবানো এবং পাখার পালকহীন নরম স্থানে এই পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন করা হয়। শুধুমাত্র ছোট বাচ্চাকে চোখে ড্রপ দেয়া হয় এবং বয়স্ক মুরগির ক্ষেত্রে অন্যান্য স্থানে ভ্যাক্সিন করা হয়।
ম্যাস (Mass) ভ্যাক্সিনেশন বা গ্রুপ ভ্যাক্সিনেশন : যে খামারে এক ব্যাচ অনেক মুরগি থাকে সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিন করা হয়। এই পদ্ধতিতে দুইভাবে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়। পানির সাথে ভ্যাক্সিন খাওয়ায়ে এবং স্প্রে করে। পানির সাথে সেভাবে ভ্যাক্সিন খাওয়াতে হবে। প্রথমে বাচ্চার মোট সংখ্যাকে হাজারে প্রকাশ করতে হবে।
এরপর যেদিন ভ্যাক্সিন করা হবে সেদিন মুরগির বয়স যতদিন এবং ২ দ্বারা গুণ করে ২ ঘণ্টা সময় ধরে ভ্যাক্সিন খাওয়ানোর জন্য কতটুকু পানি লাগবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যেমন- কোন খামারে মুরগির বাচ্চার সংখ্যা যদি ৭০০ হয় তাহলে হাজারে প্রকাশ করলে হবে ০.৭ হাজার এবং বয়স যদি ৬ দিন হয় তাহলে ঐ সংখ্যক বাচ্চার ভ্যাক্সিন করার জন্য পানির দরকার হবে ০.৭x৬x২=৮.৪ লিটার পানি লাগবে। এরপর প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে স্কিম মিল্ক/গুড়া দুধ মিশিয়ে ভালভাবে গুলাতে হবে।
তবে পানির সাথে ভ্যাক্সিন প্রস্ততকারি কোম্পানি অনুমোদিত dye or colored stabilizer মিশানো যেতে পারে এটা দ্বারা কি পরিমান মুরগি ভ্যাক্সিন মিশানো পানি গ্রহন করেছে তা মুরগির ঠোটে রং দেখে বুঝা যাবে এবং যেখানে অটোমেটিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আছে সেখানে এই রং মিশ্রিত পানির প্রবাহ দেখে বুঝা যাবে আরো ভ্যািক্সন মিশ্রণ অবশিষ্ট আছে কি না।
প্রথম এক ঘন্টায় ৭২ ভাগ এবং দ্বিতীয় ঘন্টায় ৯৫ ভাগ মুরগি ভ্যাক্সিন গ্রহন করলে বুঝতে হবে ভ্যাক্সিন প্রদান সফল হয়েছে। তবে সফলতার জন্য ভ্যাক্সিন প্রদানের ২-৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে মুরগিকে পানি গ্রহন থেকে বিরত রেখে পানি গ্রহণের চাহিদা তৈরি করতে হবে। ভ্যাক্সিন প্রদানের সরঞ্জামাদি কোন কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি দ্বারা পরিষ্কার করা যাবে না।
যে সব বড় খামারে হাজার হাজার মুরগি পালন করা হয় সেখানে একক ভ্যাক্সিনেশন এমন কি পানির মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদান সমস্যা হয় এমন খামারে স্প্রে এর মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদান করা হয়। এর ফলে খরচ ও সময় বাচে। আবার কোন কোন হ্যাচারীতে বাচ্চা ফুটার পর ০১ দিন বয়সের লক্ষ লক্ষ বাচ্চাকে স্প্রে এর মাধ্যমে ভ্যাক্সিন প্রদান করে এজেন্ট বা খামারীদের সরবরাহ করা হয়।
ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী সকল প্রতিষ্ঠানের ভ্যাক্সিন প্রদানের নিয়মাবলী এক রকম নয়। তাই ভ্যাক্সিন প্রদানের আগে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এছাড়া কোন এক ব্যাচ মুরগিতে কোন একটি ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজে যে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয় পরবর্তী ডোজগুলোও ঐ কোম্পানীর ভ্যাক্সিন দ্বারা করা উত্তম।
বর্তমান সময়ে দুনিয়াব্যাপী মুরগি খামার পরিচালনার প্রথম পছন্দ খামারের বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা। বায়োসিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড যথাযথ প্রতিপালন করলে মুরগির খামার রোগমুক্ত রাখা সম্ভব। এর পরে আসে ভ্যাক্সিনেশন। তবে আমরা যদি বায়োসিকিউরিটির নুন্যতম শর্তাবলী মেনে খামার পরিচালনা করি তাহলেও রোগ বালাই অনেক কমে যাবে।
আমাদের দেশের আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং আমাদের অজ্ঞতার কারনে নুন্যতম বায়োসিকিউরিটি মেনে চলাও কঠিন। ভ্যাক্সিন প্রয়োগে সফলতা পেতে হলেও খামারের বায়োসিকিউরিটি লেভেল ভালো হতে হবে। একজন খামারী যদি চারটি বিষয় অনুসরণ করে মুরগি খামার করেন তাহলে ঐ খামারে কখনো অলাভজনক হবে না। বিষয় চারটি হলো-
১. ভালো বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করা,
২. সুষম খাদ্য সরবরাহ করা,
৩. খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, এবং
৪. যথাযথ নিয়মে টিকা/ভ্যাক্সিন প্রদান করা।