এজেন্টঃ
এটি Haemophilus paragallinarum নামক গ্রাম নেগেটিভ,বর্তমান নাম Avibacterium paragallinarumনন মোটাইল,নন স্পোর ফরমিং, এরোবিক জীবানূ দিয়ে হয়।
এটি খুব ভংগুর এবং বেশীক্ষণ বেঁচে থাকতে পারেনা।এটি এককভাবে তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনা কিন্তু অন্য রোগ থাকলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এটি ব্যাপক ছোয়াচে রোগ যা হঠাত দেখা দেয় এবং মারাত্মক।
গ্রোয়িং পিরিয়ডে হলে ওজন কমে আর ডিম পাড়ার সময় হলে ডিম কমে।
মুরগির সংস্পর্শ ছাড়া এই জীবানূ ৫-৬ ঘন্টার বেশী বাঁচতে পারেনা।
এই পর্যন্ত ৩ টি সেরোটাইপ আবিষ্কৃত হয়েছেন এ ,বি, সি।।এদের স্পেসিফিক এন্টিজেন আছে।
হোস্টঃ
সুস্থ মুরগি বাহক হিসেবে কাজ করে।
৭দিন পর্যন্ত মুরগি রেজিস্ট্যান্ট মানে হয় না।
একবার আক্রান্ত হলে ভাল হবার পর ১বছর ইমোনিটি থাকে এবং করাইজা হয় না।কিন্তু যদি চিকিৎসা করা হয় তাহলে অনেক মুরগি আক্রান্ত হবার সুযোগ পায় না ফলে ২য় বার সম্বাবনা থাকে।
বাচ্চাসহ সকল মুরগি আক্রান্ত হতে পারে তবে ৪ সপ্তাহ থেকে বেশি শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুকি বাড়তে থাকে।
কোয়েলে হতে পারে তবে এত সিরিয়াস হয় না।
টার্কিতে হলে মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপ্টিকাম এর মিক্স ইনফেকশন হয়।
পরিবেশঃ
কখন আক্রমন করে এবং বিপদজনক হয় নিম্নে দেয়া হলঃ
যে কোন বয়সে হতে পারে তবে গ্রোয়িং পিরিয়ডে তেমন মারাত্মক হয় না.২০ সপ্তাহের পরেই বেশি ব্যাপক আকারে হয়।
মাল্টি এজ মানে বিভিন্ন বয়সের মুরগি এক সাথে পালন করলে বেশি হয়।
#শীতকালে এবং বর্ষাকালে বেশি হয়।
# আশে পাশে ফার্মের সংস্যা বেশি হলে এবং অল্প জায়গায় বেশি মুরগি পালন করলে।
#অন্য রোগ যেমন ই- কলাই,ক্রনিক রেসপিরেটরী ডিজিজ( মাইকোপ্লাজমোসিস,ল্যারিংগোটাকিয়াইটিস),কলেরা,পক্স,রানিক্ষেত,এ আই ও আই বি ইত্যাদি।
#মুরগির উপর ধকল যে কোন ধকল,তাপমাত্রার পরিবর্তন ,পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটির সাথে জড়িত।
#অতিরিক্ত ঠান্ডা বা আর্দ্র আবহাওয়া।
# টিকা দেয়ায় ধকল পড়লে।
#নিম্নমানের খাবার।
# কোন কারণে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।
# ঘন ঘন লিটার বদলালে।
#শীতকালে দীর্ঘ সময় পর্দা দিয়ে রাখলে এমোনিয়া গ্যাস তৈরি হয় ফলে এই জীবানূ বৃদ্ধি পায়।
সুপ্তিকালঃ১-৩ দিন তবে ঝাকের সংবেদনশীল মোরগ মুরগিতে ১০ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়।
প্যাথোজেনেসিসঃ
নেজাল প্যাসেজ দিয়ে ঢুকে এবং আশপাশ সাইটে আক্রমণ করে,বিশেষ করে মুখের চারদিকে সীমাবদ্ধ থাকে।
লক্ষনঃ
#Swelling of face মুখটা জল স্ফীতির দরুন মোটা মনে হবে,মারাত্মক হলে জলস্ফীতি গলকম্বল পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। Caseous mass around the eye ball অক্ষি ঝিল্লিতে প্রদাহ দেখা দেয়.চোখ দেখলে মনে হবে জলে ভেসে যাচ্ছে।
চোখ ফোলা(conjunctivitis) ১টা বা ২ টি চোখ আক্রান্ত হতে পারে,চোখ বন্ধ করে রাখে (closed eyelid) এবং চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসে।
#watery & mucoid discharge from nose।
#নাক থেকে প্রথমে পাতলা বা তরল পানি ঝরতে থাকে যা পরে আঠালো হয়ে যায় এবং ইহা গন্ধযুক্ত হয়।
মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
#আঠালো সর্দি নাকের ছিদ্র পথে আটকিয়ে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস ব্যাহত হয় ফলে শ্বাস নেয়ার সময় গলায় গড় গড় শব্দ হয় ও কাশি হয়।
#চোখের পাতলা আবরণে প্রদাহ হয় মানে লাল হয়ে যায় এবং চোখের নিচের অংশ ফুলে যায়।
#ঠোট দুটি ফাক করে রাখে।
#.খাবার ও পানি ব্যাপক হারে কমে যায় ।
#.মুরগি তেমন মারা যায়না কিন্তু অন্য রোগ যেমন মাইকোপ্লাজমোসি,রানিক্ষেত বা এ আই ও ই- কলাই হলে মর্টালিটি্ ৫০% হতে পারে।
#ডিম কমতে থাকে,যা ১০-৪০% কমে যেতে পারে।
এগ ফলিকল গুলো ভেংগে নস্ট হয়ে যায়।
#Coughing & sneezing। নাসারন্ধ বা সাইনাস প্রদাহের ফলে নাক দিয়ে পানির মত তরল পদার্থ বের হয়,পরে রক্ত মিশ্রিত শ্লেষ্মা বের হয় ,নাক দিয়ে বিচিত্র শব্দ সাথে,হাচি থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
# শ্বাসতন্ত্রের নিম্নাংশ আক্রান্ত হলে শাসকষ্ট এবং গড় গড় শব্দ হয়।
#রোগটি ২-৩সপ্তাহ থাকতে পারে।
# ব্রিডারের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটি এবং হ্যাচাবিলিটি কমে যায়,মেটিং হার কমে যায় এমনকি মোরগ অক্ষম হয়ে যেতে পারে।
# মুরগি সুস্থ হবার পর ২-৩ মাসের মধ্যে আক্রান্ত হয়না কিন্তু পরে হতে পারে।কিন্তু খামারিরা ৫দিন চিকিৎসা দিয়ে ভাল হলে এন্টিবায়োটিক বন্ধ করে দেয় ফলে আবার রিপিট চলে আসে।
রোগ হলে কি কি ক্ষতি হয়ঃ
ডিম কমে প্রায় ১০-৪০%।
অনেক দিন আক্রান্ত হলে ওজন কমে যায়।
ব্রিডারের ডিমের উর্বরতা এবং ফোটার হার কমে যায়।
ব্রিডার মোরগ অক্ষম হয়ে যায়।
অন্য রোগের সহিত আক্রান্ত হলে মৃত্যহার ১০০% হতে পারে।
চিকিৎসা করতে গিয়ে বারবার মেডিসিন পরিবর্তন হলে জীবানূ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায় ফলে ফ্লক নষ্ট হয়ে যায়।
এই রোগের জন্য অন্য রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে রানিক্ষেত ও গাম্বোরু রোগের প্রবনতা বেড়ে যায়।
এই রোগের উপস্থিতিতে বা আগে পরে দেওয়া টিকা বা মেডিসিন দিয়ে অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হয় না।
পোস্ট মর্টেমঃ
ফ্লুইড জমা হবার কারণে ফেস ও ওয়াটল ফোলে যায়।
শ্বাসনালির(ট্রাকিয়ার ) উপর দিকে প্রদাহ দেখা যায়।
নাসারন্ধ এ প্রদাহ দেখা দেয়।
ক্রনিক হলে ফুসফুসে ও বায়োথলি (Airsac) ভীষন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ইনফা অরবিটাল সাইনাসে এবং বায়ুথলিতে ঘন মিউকাস ও প্রদাহ হয়।
# ট্রাকিয়াতে বুদবুদ আকারে সর্দি থাকে।
কিভাবে ছড়ায়ঃ
পানি
রোগাক্রান্ত বা বাহক পাখি থেকে নিঃসৃত পদার্থ( লালা,সর্দি কাশি,হাচি)
বাতাস
খাবার
খাবার ও পানির পাত্র
লোকজন যারা ফার্মে কাজ করে। বা বাহিরের লোকজন
আক্রান্ত প্রজাতিঃ
মুরগি হলো ন্যাচারাল হোস্ট। টার্কিতেও ব্যাপকহারে হয়।
রোগ প্রতিরোধঃ
ভাল ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মুরগি যেন ধকলে না পড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ঠান্ডা বাতাস যেন না লাগে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বন্য প্রানী যেন না ঢুকতে পারে।
একই বয়স,জাত ও উৎস থেকে মুরগি আনতে হবে।
বিভিন্ন বয়সের মুরগি আলাদা পালতে হবে।
মুরগি ঘন থাকলে পাতলা করতে হবে।
রোগাক্রান্ত পাখি পারলে সরাতে হবে।
টিকা দিতে হবে ২টি।
১ম বার ৬-৮ সপ্তাহে
২য় বার ১২-১৪ সপ্তাহে
টিকা দিলে রোগ হবেনা এমন বলা যাবেনা কিন্তু হলেও ডিম প্রডাকশন ভাল থাকবে।
মুরগি বিক্রি করার পর ভাল ভাবে জীবানূমুক্ত করতে হবে।
নোটঃএমন টিকা দিতে যে টিকায় বি ভেরিয়েন্ট আছে কিছুটা দামি টিকা।অনেক ফার্মে দেখা যায় বি ভেরিয়েন্ট ছাড়া কম দামি করাইজা টিকা দিচ্ছে ।এতে করাইজা হচ্ছে।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতিঃ
ক্লিনিকেল উপসর্গ দেখে
পোস্ট মর্টেম
ব্যাক্টেরিয়া কালসার করে
এইচ আই টেস্ট
আগার জেল প্রিসিপিটেশন টেস্টঁ
পি সি আর টেস্ট
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসা হবে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে
নিচে ধারনা মাত্র
কসুমিক্স প্লাস বা এই জাতীয় মেডিসিন২.৫গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ৬-৭ দিন সারাদিন।
অথবা মাইক্রোনিড বা ইরোকট ও দেয়া যায়।
প্যারাসিটামল
কফের সিরাপ।
৬-৭দিন পর
সি টি সি ২গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ৫ দিন সারাদিন বা লিভোফক্সাসিলিন
সাথে টক্সিনিল প্লাস ২-৩ এম এল প্রতি লিটার পানিতে ১ বেলা ৪-৫ দিন
৭-১৪ দিন চিকিৎসা করতে লাগতে পারে।
এক নাগারে চিকিৎসা চালাতে হবে তা নাহলে আবার ব্যাক করবে,একবার ফার্ম আক্রান্ত হলে ২য় বার আক্রান্ত হবার সম্বাবনা আছে।
সমস্যা থাকলে
অনেক সময় মাইক্রোনিড বা এই জাতীয় মেডিসিন দেয়া লাগতে পারে।
তাছাড়া কসুমিক্সের সাথে ডেনাগাড বা এই জাতীয় মেডিসিন দেয়া লাগতে পারে।
নোটঃ
প্রায় সময়ই করাইজা ,রানিক্ষেত ,এ আই থেকে আলাদা করা কঠিন তাই টাইটার টেস্ট করে রানিক্ষেত আলাদা করে ফেলতে হবে।
সম্ভব হলে এ আই ও মাইকোপ্লাজমা টেস্ট করতে হবে।
ফলে করাইজা নির্ণয় সহজ হবে এবং খামারীর লস কম হবে,মুরগি সুস্থ হবে।
অনেক সময় মিক্স ইনফেকশন হয় এক সাথে ৩-৫টা রোগ এক সাথে হতে পারে।
রানিক্ষেত বা এ আই কে করাইজা মনে হতে পারে।টেস্ট করে নেয়া উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১ফেব্রুয়ারি২০২১