মুরগির এক দিন বয়সের বাচ্চা যে ঘরে উঠানো হয় সে ঘরকে ব্রুডার হাউস বলে। ব্রুডার হউসে মুরগির বাচ্চার যাবতীয় পরিচর্যা বা যত্ন করা হয়। ব্রুডার হাউসে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং কাল ৪ সপ্তাহ ও ডিমপাড়া মুরগির ব্রুডিং কাল ৬-৮ সপ্তাহ পর্য্ন্ত হিসেব করা হয়। ব্রুডিং পিড়িয়ডে বাচ্চার পরিচর্যা সঠিকভাবে করলে সে মুরগি থেকে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যাবে। তাই খামারে বাচ্চা উঠানোর পূর্বে ব্রুডার হাউসের ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
যে ঘরে বাচ্চা মুযরগির ব্রুডিং করা হবে সে ঘরে যদি পূর্বে মুরগি পালন করা হয়ে থাকে তবে সে ঘরকে ২.৫- ৩.০ সপ্তাহ বিরুতী দিতে হবে। অনেক রোগ জীবাণু রয়েছে যেগুলোর জীবনচক্র ২.৫-৩.০ সপ্তাহ । তাই এ সময়ের মধ্যে অনেক রোগ জীবাণু আপনা আপনি মারা যায়। এর পরেও যে সমস্ত রোগ জীবাণু খামারে থাকবে সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ব্রুডিং শেড পরিস্কারকরণ:
১। ব্রুডিং শেডে বাচ্চা উঠানোর পূর্বে শেডের অভ্যন্তরে যাবতীয় যন্ত্রপাতি বিশেষ করে খাদ্য ও পানির পাত্র, হোভার, চিক গার্ড সাধারণ পানি দ্বারা পরিস্কার করে ধৌত করার পর পূণরায় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দ্বারা ধৌত করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
২। মুরগি বিক্রয়ের পর কিংবা সেখান থেকে মুরগি সরিয়ে নেওয়ার পর সব লিটার বা তুষ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে শেড থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। শেডের মেঝে যদি কাঁচা হয় সেক্ষেত্রে তা’ কোদাল দিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে শক্তিশালী জীবাণুনাশকযুক্ত পানি দিয়ে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। শক্তিশালী জীবাণুনাশক বলতে বিশেষ করে ফর্মালিন বা বাজারে পাওয়া যায় এমন অনেক জীবাণুনাশক আছে তা’ দিয়ে মেঝে ভিজিয়ে রাখতে হবে । মেঝে ভিজিয়ে রাখতে ফর্মালিনের মাত্রা হতে হবে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১ লিটার ফর্মালিন ।
৪। ব্রুডার শেডের পর্দা অবশ্যই পাতলা কাপড়ের হতে হবে যেন তা’ সাবানের পানিতে ধৌত করা যায়।
৫। ব্রুডার শেডের মেঝে পাকা হলে লিটার ভালোভাবে পরিস্কার করার পরেই সাধারণ পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে। পরে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে। জীবাণুনাশকের মাত্রা হবে জীবাণুনাশক প্রস্তুতকারক কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক। তারপর মেঝে শুকিয়ে গেলে মেঝেতে ও চারপাশের দেয়াল সহ হোভার , চিকগার্ড চুনকাম করতে হবে এবং শেডের বাহিরে চারপাশে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।
৬। ব্রুডার শেডের যাবতীয় কাজ শেষ হলে ৪” পুরুত্ব করে নতুন তুষ বিছিয়ে দিতে হবে। এর পরে ব্রুডার সাজিয়ে শেডের ভেতর ফিউমিগেশন বা ধূমায়ীতকরণ করতে হবে। এমতঃবস্থায় , শেডকে ফিউমিগেশন করে ২৪ ঘন্টা পরে শেডকে গ্যাসমুক্ত করে নতুন বাচ্চা উঠাতে হবে।
ব্রুডার শেডকে ফিউমিগেশন বা ধূমায়ীতকরণের নিয়ম : প্রথমে শেডের পর্দা ভালোভাবে বন্ধ করে নিতে হবে। পরে একটি মাটির পাত্রে পটাশিয়াম-পার-ম্যাঙ্গানেট ও ফর্মালিন একত্রে মিশাতে হবে। পাত্রের মধ্যে পটাশিয়াম-পার-ম্যাঙ্গানেট রেখে তাতে আস্তে আস্তে ফর্মালিন ঢালতে হবে এবং দ্রুত সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে শেডের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। পটাশিয়াম-পার-ম্যাঙ্গানেট ও ফর্মালিন একত্রে মেশানোর সাথে সাথে শেডের ভেতর ফর্মাল-ডি-হাইড গ্যাস বা ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে।
এ ধোঁয়া যেন কোন ভাবেই চোখে না লাগে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এভাবে শেডের দরজা ও পর্দা ২৪ ঘন্ট খুব ভালোভাবে বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ফর্মাল-ডি-হাইড গ্যাস শেডের আনাচে- কানাচে পৌছাবে ও শেডের অভ্যন্তরে অবস্থান করা রোগ জীবাণুসমূহকে ধ্বংস করবে।
খামারে রোগ জীবাণুর প্রাদূর্ভাবের উপর ভিত্তি করে ফিউমিগেশনের মাত্রা নিরূপন করতে হবে। নিম্নে তা’ উল্লেখ করা হলো –
ফিউমিগেশন- এর হিসাব প্রতি ১০০ ঘনফুট স্থানের জন্য
ক) দূর্বল ফিউমিগেশন = ৪০ মি.লি. ফর্মালিন + ২০ গ্রাম পটাশিয়াম- পার- ম্যাঙ্গানেট ।
খ) শক্তিশালী ফিউমিগেশন = ১২০ মি.লি.ফর্মালিন + ৬০ গ্রাম পটাশিয়াম-পার-ম্যাঙ্গানেট ।
তবে হ্যাচরীর যন্ত্রপাতি ফিউমিগেশন করতে হলে আরো বেশি শক্তিশালী ফিউমিগেশন করতে হবে।
যে সমস্ত শেডে রোগ জীবাণুর সংক্রমণজনিত সমস্যা কম সেখানে দূর্বল ফিউমিগেশন করলেই চলবে। তবে যে সমস্ত শেডে রোগ জীবাণুর সংক্রমণজনিত সমস্যা বেশি সেখানে অবশ্যই শক্তিশালী ফিউমিগেশন করতে হবে।
ফিউমিগেশনের কাজ শেষ হলে ২৪ ঘন্টা অতিবহীত হওয়ার পর শেডের সমস্ত পর্দা ও দরজা খুলে দিয়ে শেডের অভ্যন্তরের ধূয়া বা গ্যাস বের করে নতুন বাচ্চা উঠাতে হবে। নতুন বাচ্চা শেডে উঠানোর আগে শেডকে গ্যাসমুক্ত করতে প্রয়োজনে ফ্যান চালু করতে হবে।
ব্রুডার শেডে নতুন বাচ্চা উঠানোর প্রস্তুতি
ব্রুডার শেড ও ব্রুডার শেডের অন্যান্য যন্ত্রপাতি আগেই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
শেডে বাচ্চা উঠানোর পর শেডের পর্দা বন্ধ রাখতে হবে। শুধুমাত্র বায়ু প্রবাহের জন্য উপরের দিকে এক ফুট খোলা রাখতে হবে।
বাচ্চার নরম বিছানার জন্য মেঝেরউপর ৪” পুরু করে শুকনো তুষ বিছিয়ে দিতে হবে।
তুষের উপর খবরের কাগজ বা বর্তমানে বাচ্চার ব্রুডিং পেপার পাওয়া যায় এমন কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে। সহজে বাচ্চার চোখে পরে এ লক্ষে প্রথম প্রথম কাগজের উপর খাদ্য ছিটিয়ে দিতে হবে। কাগজের পাশাপাশি ছোট ছোট খাদ্যের পাত্রেও খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাদ্যের পাত্রে খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে পরবর্তীতে কাগজ বাতিল করে দিতে হবে।
বাচ্চার সহজে চোখে পরে এমন আলোকিত স্থানে খাদ্য ও পানির পাত্র স্থাপন করতে হবে।
হোভার অবশ্যই প্রথম প্রথম দেড় থেকে দুই ফুট উঁচুতে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চা যাতে বাল্ব স্পর্শ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাল্ব স্পর্শ করলে অনেক সময় বাল্ব ফিউজ হয়ে যেতে পারে। ব্রুডারের তাপমাত্রা বুঝে হোভার প্রয়োজনে উঠা- নামা করা লাগতে পারে।
ব্রুডারের সবগুলো বাল্ব সঠিকভাবে কাজ করে কিনা তা’ নিবিড় তদারকীর মধ্যে রাখতে হবে। মোদ্দা কথা হলো ,ব্রুডিং এর প্রথম সপ্তাহে বাচ্চাকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে।
ব্রুডারে বাচ্চা ছাড়ার একদিন আগে থেকেই অর্থাৎ ২৪ ঘন্ঠ আগে থেকেই ব্রুডার জ্বালিয়ে রেখে ব্রুডার শেডের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে হবে।
ব্রুডার শেডে বাচ্চা উঠানোর আগে থেকেই ফুটবাথ ও হ্যান্ডবাথ প্রস্তুত রাখতে হবে ও তা’ ব্যবহার করতে হবে। পানিতে যেন অবশ্যই জীবাণুনাশক মিশ্রণ করা থাকে।
চিকগার্ড এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বাচ্চা হোভার থেকে বেশি দূরে চলে য়েতে না পারে। হোভার থেকে চিকগার্ডের দূরত্ব বেশি হলে বাচ্চা দূরে চলে যাবে ও সঠিক তাপমাত্রা থেকে বন্চিত হবে। চিকগার্ড অবশ্যই বৃত্তাকারে বা গোল করে স্থাপন করতে হবে। চিকগার্ডের মধ্যে কোন ভাঁজ বা কোণাকৃতি থাকলে সেখানে বাচ্চা জড়ো হবে। বাচ্চজা এক জায়গায় বেশি জড়ো হলে বাচ্চার মৃত্যু হবে।
ব্রুডারের তাপমাত্রা সঠিক আছে কিনা তা’ জানার জন্য থার্মোমিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। হোভারের শেষ প্রান্তে তুষ থেকে ঠিক ২” উপরে অর্থাৎ বাচ্চা যে স্তরে থাকবে ঠিক সে স্তর বরাবর থার্মোমিটার ঝুলাতে হবে। সেখানে যদি তাপমাত্রা প্রথম সপ্তাহে ৯০ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩২.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে তবে তা’ ঠিক আছে বলে গণ্য করতে হবে। তবে হোভারের শেষ প্রান্ত থেকে চিকগার্ডের কাছে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম হবে।